• মোদীর ভোকাল টনিক, মমতারও প্রথম প্রচার, কৃষ্ণনগর কেন পাখির চোখ?
    এই সময় | ২৮ মার্চ ২০২৪
  • লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা পর্ব চলছে বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে। সঙ্গে চলছে প্রচারও। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়ে গিয়েছে ছোট বড় সভা সমিতি মিটিং মিছিল। চলছে দেওয়াল লিখনও। এবার প্রচারে নামতে চলেছেন তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ৩১ মার্চ কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের ধুবুলিয়ায় সভা রয়েছে মমতার। আর সেই কথা ইতিমধ্যে ঘোষণাও করে দেওয়া হয়েছে। এবারেও কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র থেকে মহুয়া মৈত্রকেই প্রার্থী করেছে তৃণমূল।অন্যদিকে আবার ওই কেন্দ্রেই বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির রাজবধূ অমৃতা রায়। কিছুদিন আগেই গেরুয়া শিবিরে যোগদান করেছেন অমৃতা। তারপরেই তাঁকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। আর সবচেয়ে বড় কথা ইতিমধ্যেই অমৃতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অমৃতাকে সমস্তরকম সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে রাজনৈতিকমহলের একাংশে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, মোদী থেকে মমতা, প্রত্যেকেই কি বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন কৃষ্ণনগরকে? দিলেও তা কেন?

    এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, সংসদে বরাবরই চোখা চোখা প্রশ্নবাণ তথা ধারাল ভাষণের মধ্যে দিয়ে প্রতিপক্ষকে নিশানা করতে দেখা গিয়েছে মহুয়া মৈত্রকে। এমনকী আদানি গোষ্ঠীকে নিয়েও বিভিন্ন সময় সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। আবার সেই আদানি ইস্যুতেই পালটা মহুয়ার বিরুদ্ধে উঠেছে টাকা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করার অভিযোগ। সেক্ষেত্রে 'ক্যাশ ফর কোয়্যারি' বিতর্কে এথিক্স কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে সংসদ থেকে বহিষ্কৃতও হতে হয়েছে মহুয়াকে। এবার সংসদ থেকে বহিষ্কৃত সেই মহুয়াকেই ফের প্রার্থী করেছে তৃণমূল।

    রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে...এই বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক শিবাজীপ্রতীম বসু বলেন, 'মহুয়া মৈত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহদের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে আদানির সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে তিনি যে প্রশ্ন তুলেছিলেন, সেটার জন্য তাঁকে যে ভাবে বহিষ্কার করা হল, সেটার পিছনে নিশ্চয় কিছু পয়েন্ট ছিল হয়ত, কিন্তু এটা অন্তত মহুয়া মৈত্র সংসদের ভিতরে ও বাইরে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন যে, তাঁর কণ্ঠস্বর রুদ্ধ করার জন্যই এটা করা হচ্ছে। এবার বিজেপি বদ্ধপরিকর, যাতে মহুয়া না যেতে পারে। এখন মহুয়া প্রেস্টিজ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। কৃষ্ণনগর বিজেপি ও তৃণমূল উভয়ের কাছেই প্রেস্টিজ আসনে পরিণত হয়েছে। সেই জন্যই এগুলি করা হচ্ছে।'

    কৃষ্ণনগরে বাড়তি গুরুত্ব তৃণমূল ও বিজেপির?হ্যাঁনাজানি না

    কী বলছে তৃণমূল?এদিকে এই বিষয়ে কৃষ্ণনগর দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রাজ্যের জৈব ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, 'গোটা ভারতবর্ষের সাংসদদের মধ্যে সেরা হয়েছিলেন মহুয়া মৈত্র। আর মহুয়া যেভাবে একা মোদী সরকারের টনক নড়িয়ে দিয়েছিলেন তা গোটা ভারতবর্ষ জানে। তাই যেনতেন প্রকারে মহুয়াকে থামাতে হবে, সেইরকম স্ট্যাটেজি নিয়েছে বিজেপি।' উজ্জ্বলের আরও দাবি, 'এতদিন মহুয়ার বিরুদ্ধে প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছিল না বিজেপি। কেউ দাঁড়াতে চাইছিলেন না মহুয়ার বিরুদ্ধে। তাই স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কৃষ্ণনগরে এসে সভা করে গিয়েছেন। বিজেপি প্রার্থীকে ফোন করে কথা বলতে হচ্ছে, আর সেই অডিয়ো মানুষকে শোনাতে হচ্ছে। মানুষ অত্যন্ত সচেতন, পুনরায় কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের মানুষ মহুয়াকে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত করবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।'

    বিজেপির কী ব্যাখ্যা?এদিকে নদিয়া উত্তরের বিজেপির প্রচার প্রমুখ সন্দীপ মজুমদার বলেন, 'শুধু কৃষ্ণনগর নয়, ভারতীয় জনতা পার্টির প্রত্যেকটা আসনের উপরই নজর আছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের ইচ্ছায় কৃষ্ণনগরে সভা করেছিলেন। কারণ প্রয়াত সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় অতীতে কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করার পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছিলেন। তাই কৃষ্ণনগরের উপর ভারতীয় জনতা পার্টির ভালোবাসা একটু অন্যরকম। আর সেই বুঝে বিজেপি এবার প্রার্থী করেছে রাজবাড়ির সদস্যকে। জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। বিজেপি এবার কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র পুনরুদ্ধার করবে।'

    রাজনৈতিক দলগুলির দাবি - পালটা দাবি রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণ। তবে কৃষ্ণনগরে শেষ হাসি কে হাসেন, তা অবশ্য জানা যাবে আগামী ৪ জুন ভোটের ফলাফলের দিন।
  • Link to this news (এই সময়)