এই সময়: শহর কলকাতার বাতাসে দূষণের মাত্রা ঠেকাতে ১০টি এলাকাকে হটস্পট চিহ্নিত করে গাছের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে পুরসভা। উড়ালপুলেও তৈরি করা হচ্ছে ঝুলন্ত উদ্যান। তবে, যে ভাবে শহরে গাড়ির সংখ্যা, নির্মাণ বাড়ছে এবং একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ে গাছের সংখ্যা কমছে, তাতে পুরসভার একার পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়—এমনটাই দাবি বিশেষজ্ঞদের।
তাই, শহরে সবুজায়নের লক্ষ্যে বেসরকারি সংস্থাকে সামিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুরসভা। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা ফাঁকা জায়গা, উড়ালপুল, বড়-বড় বিল্ডিংয়ে সবুজায়নের পাশাপাশি তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিক বেসরকারি সংস্থাগুলি—এমনটাই চাইছে পুরসভা। সেই লক্ষ্যেই খুব তাড়াতাড়ি বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের বৈঠকে ডাকা হবে।
পুরসভার পরিবেশ বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা অনেক আগে থেকেই সবুজায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। আমরা চাইছি, সকলেই এগিয়ে আসুন। না হলে দূষণ ঠেকানো সমস্যার হবে।’ ওই বৈঠক থেকে শহরের কোথায়-কোথায় গাছ লাগানোর মতো জায়গা রয়েছে, কোথায় গাছ লাগানো সম্ভব, সে বিষয়ে আলোচনা হবে।
এ ব্যাপারে উদ্যোগী হলে নানা ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলি ছাড় পাবে। তাই এতে ভালো সাড়া মিলবে বলেই মনে করছেন পুরসভার উদ্যান বিভাগের কর্তারা। পুরসভার উদ্যান বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘শহরজুড়ে আমরা অনেক গাছ লাগিয়েছি। প্রতি বছরই এই কর্মসূচি নেওয়া হয়। কিন্তু, পুরসভাকে রাস্তা থেকে শুরু করে জল সরবরাহ, নিকাশি, অলো সব দিকেই নজর রাখতে হয়। তাই বেসরকারি সংস্থাগুলি কলকাতাকে সবুজের চাদরে মুড়তে কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি ফান্ড (সিএসআর) থেকে উদ্যোগ নিলে শহরবাসী উপকৃত হবেন।’
উম্পুনে কলকাতা বিপুল পরিমাণে সবুজ হারানোর পরে বনসৃজনের পাশাপাশি গাছের রক্ষণাবেক্ষণের উপরও গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে বিভিন্ন সংস্থা। বছর দুয়েক আগে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পক্ষ থেকে বিপুল সংখ্যক গাছের বদলে মাত্র ১০ হাজার গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ওই গাছ যাতে বাঁচিয়ে রাখা যায়, তার জন্য রক্ষণাবেক্ষণে পর্ষদ নিয়োগ করেছে একটি পেশাদার সংস্থাকে।
পুরসভাও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের কাছে সেই আর্জি রাখবে—এমনটাই ঠিক হয়েছে। যে সংস্থা এই সবুজায়নের কর্মসূচিতে সামিল হবে, তাদের বাঁশের বেড়া দিয়ে গাছের চারপাশ ঘিরে দিতে হবে এবং জল দেওয়া থেকে শুরু করে প্রয়োজনে ডালপালা ছাঁটা-সহ যাবতীয় কাজ করতে হবে। শহরে সব থেকে বেশি লাগানো হবে নিম। দূষণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় এই গাছ।
পাশাপাশি ঝড় প্রতিরোধ করতে পারে, এমন গাছও রাস্তার দু’পাশে লাগানোর জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরীর বক্তব্য ‘বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে সঠিক পদক্ষেপ পুরসভার। তবে গাছ লাগানো সহজ হলেও তাকে বাঁচিয়ে রাখা মুশকিল। সুতরাং গাছ লাগানোর পাশাপাশি তা রক্ষণাবেক্ষণের দিকে বেসরকারি সংস্থাগুলি নজর দিচ্ছে কি না, সে দিকেও পুরসভার নজর রাখা জরুরি।’