• আকর্ষণের কেন্দ্রে ‘প্রাক্তনে’র সম্মুখ সমরই
    বর্তমান | ২৯ মার্চ ২০২৪
  • তন্ময় মল্লিক,বিষ্ণুপুর: ওন্দা বাজারে গিরিশদার চায়ের দোকানে ভরদুপুরেও খদ্দেরের ভিড়। চা খেতে খেতে কয়েকজন গল্প করছেন। মেঝেতে বসে একমনে কয়লা ভাঙছিলেন এক মাঝবয়সি। নাম মনোরঞ্জন ঘোষ। পেশা, দুধ বিক্রি। দুধ দিতে এসে মাঝেমধ্যেই এভাবে দোকানদারকে সাহায্য করেন। ভোটের প্রসঙ্গ তোলায় সবাই মুখ চাওয়াচায়ি করেন। জবাব আসে মনোরঞ্জনবাবুর কাছ থেকে, ‘এদিকে বিজেপির হাওয়া।’ কারণ জানতে চাওয়ায় বলেন, ‘তৃণমূলকে কেন ভোট দেবে? চুরি করে, নিজেদের মধ্যে খেয়োখেয়ি করে। মানুষ বিরক্ত।’

    মনোরঞ্জনবাবুর কথা শেষ হতে না হতেই এক যুবক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জানতে চান, ‘সাংবাদিক?’ সম্মতিসূচক উত্তর পেয়ে তিনি বলেন, ‘এভাবে মানুষের মন বুঝতে পারবেন না। যিনি যে দল করেন, তিনি সেই দিকে ঝোল টেনে কথা বলবেন। 

    যেমন আমি বলব, এদিকে সিপিএম ভালো করবে।’

    যুবকের নাম চন্দ্রশেখর রায়। ডিওয়াইএফ করেন। পরিচয় পেয়ে জানতে চাই, রামে যাওয়া ভোট কি বামে ফিরবে? চন্দ্রশেখর সামনে সাইকেলে বসা এক প্রৌঢ়কে দেখিয়ে বলেন, ‘উনি আমাদের নেতা। ওঁকে জিজ্ঞাসা করুন।’ প্রৌঢ়ের চেহারায় মাঠেঘাটে রাজনীতি করার ছাপ স্পষ্ট। বললেন, ‘ভোট এখন কর্পোরেট যুদ্ধ। তারা যেমন দেখাতে চাইছে, তেমনই দেখানো হচ্ছে। রাজনীতি হচ্ছে ধর্ম নিয়ে। খেটে খাওয়া মানুষের কথা বলছি একমাত্র আমরাই।’

    দীর্ঘ আলোচনা শেষেও রামে যাওয়া ভোট বামে ফিরবে, এমন জোর শোনা গেল না কারও গলায়। আর এটাই বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা। বাম ভোটের জোরেই শুধু উনিশ নয়, একুশের ভোটে এই লোকসভার সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটিতেই জিতেছিল বিজেপি। শুধু জেতেনি, কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রে তারা ভোট বাড়িয়ে নিয়েছিল। তাতে তৃণমূল শিবির লোকসভার চেয়ে প্রায় ৭০ হাজার ভোট বেশি পেয়েও বিজেপির থেকে পিছিয়ে রয়েছে।

    এটা অবশ্যই গেরুয়া শিবিরের প্লাস পয়েন্ট। আর মাইনাস পয়েন্ট হল বিজেপির দুই বিধায়কের তৃণমূলে যোগদান। বিষ্ণুপুরের তন্ময় ঘোষ এবং কোতুলপুরের হরকালী প্রতিহার এখন তৃণমূলে। তাতে কিছুটা হলেও অ্যাডভান্টেজে ঘাসফুল শিবির। 

    যদিও এই শিবির বদলকে পাত্তা দিতে নারাজ বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ। তাঁর দাবি, ‘ওঁরা তৃণমূলে গেলেও বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে যেতে পারেননি। ফলে আমাদের কোনও ক্ষতি হবে না। বরং পঞ্চায়েত ভোটে পাত্রসায়র, জয়পুর, কোতুলপুর, ইন্দাসে 

    মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তার ক্ষোভের আঁচ লোকসভা ভোটে টের পাবে তৃণমূল।’

    লড়াইটা যে পিছিয়ে থেকে শুরু করতে হচ্ছে সেটা জানেন তৃণমূলের প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল। তাঁর দাবি, ‘বিগত সমস্ত পরিসংখ্যান ম্লান হয়ে যাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আর জনমুখী প্রকল্পের আলোয়। আমার এবং দলের কর্মীদের একটাই কাজ, দিদির প্রকল্পের কথা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া। নাম ঘোষণার পর সেই কাজটা শুরু করে দিয়েছি।’

    গতবার নির্বাচনের সময় সৌমিত্র খাঁ বাঁকুড়া জেলায় ঢুকতে পারেননি। স্বামীর হয়ে প্রচার করেছিলেন এই সুজাতাই। সৌমিত্র জেতায় সিংহভাগ কৃতিত্বই গিয়েছিল সুজাতার ঝুলিতে। সেই সুজাতা এখন ‘প্রাক্তন’। শুধু প্রাক্তনই নন, সৌমিত্রর প্রতিদ্বন্দ্বী। লড়াইটা একেবারে সামনাসামনি। যাকে বলে সম্মুখ সমর। কে জয়ী হবেন, বলবে সময়। তবে দুই ‘প্রাক্তনে’র লড়াইয়ে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে জায়গা করে নিয়েছে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্র।
  • Link to this news (বর্তমান)