• বাংলাদেশি তকমা দিয়ে মারধর, বাড়ি ফিরলেন প্রহৃত শ্রমিকরা, CAA-র কোপ?
    এই সময় | ২৯ মার্চ ২০২৪
  • এই সময়, বহরমপুর: এ বার সিএএ-এর কোপ পড়ল ওডিশায় কর্মরত মুর্শিদাবাদের নির্মাণ শ্রমিকদের উপরে। রোজগারের তাগিদে মুর্শিদাবাদ জেলার কয়েক লক্ষ শ্রমিক কাজ করেন ভিনরাজ্যে। সামশেরগঞ্জ থানার মহিষাস্থলী, চাঁদনিদহ এলাকার প্রায় ২০ জন শ্রমিক গত ২৫ বছর ধরে ওডিশার ভদ্রক জেলায় রাজমিস্ত্রি ও ফেরিওয়ালার কাজ করেন।অভিযোগ সিএএ লাগু হওয়ার পরেই গত ১৯ মার্চ বিজেপির কিছু সমর্থক তাঁদের পরিচয়পত্র দেখতে চান। ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড দেখানোর পরেও বাংলাভাষী হওয়ায় তাঁদের বাংলাদেশি তকমা দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ভিডিয়ো বার্তায় রাজ্য সরকারের কাছে অভিযোগ করেন আক্রান্ত পরিযায়ী শ্রমিকরা। তারপর রাজ্যসভার তৃণমূল নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন ওডিশার মুখ্যমন্ত্রীকে ওই ঘটনার কথা জানিয়ে চিঠিও পাঠান।

    শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকারের তৎপরতায় ওডিশা থেকে ২০ জন শ্রমিককে উদ্ধার করে বাংলায় নিয়ে আসা হয়। বৃহস্পতিবার বহরমপুরে তাঁদের এনে সাংবাদিক বৈঠক করেন পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্যমঞ্চের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বহরমপুর পুরসভার পুরপিতা নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়। ১০ বছর আগে ওডিশার ভদ্রকে ফেরিওয়ালার কাজে গিয়েছিলেন ইসমাইল শেখ। পরিবারে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, দুই সন্তান রয়েছে।

    সামশেরগঞ্জে দিনমজুরি করে কোনওরকমে সংসার চলছিল। প্রতিবেশীদের কাছে ঋণও হয়ে যায়। একটু বেশি টাকা রোজগারের জন্য তিনি চলে যান ভদ্রকে। কিন্তু এই ঘটনার পরে ওডিশা থেকে ফিরে চরম দুশ্চিন্তায় ইসমাইলের পরিবার। স্ত্রী রেণুকা বিবি বলেন, ‘রোজগার না করলে পেট চলবে কী করে? আবার কাজের জন্য ভিনরাজ্যে যেতে হবে। কিন্তু সেখানে নিরাপত্তা কে দেবে? আমরা চাই, সরকার এই জেলাতেই কোনও কাজের ব্যবস্থা করুক।’

    ওডিশা থেকে ফেরা আর এক আক্রান্ত যুবক সালামত শেখ বলেন, ‘ওখানে আমরা খুব আতঙ্কে ছিলাম। পরিচয়পত্র দেখানো সত্ত্বেও বিজেপি কর্মীরা বাংলাদেশি বলে মারধর করে। তবে পেটের দায়ে ফের ভদ্রক না গেলেও অন্য কোথাও যেতে হবে।’ পরিযায়ী শ্রমিক মোজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘সিএএ লাগু হওয়ার পরেই একদিন রাতে হঠাৎ-ই আমাদের বাসায় ঢুকে কয়েকজন বিজেপি কর্মী আমাদের বেধড়ক মারধর করতে শুরু করে। আমরা রাজ্য সরকারের কাছে অভিযোগ জানায়। তারপরেই ওডিশা পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে। বাড়ি ফিরে আসতে পেরে এখন আমরা নিশ্চিন্ত। কিন্তু কাজের জন্য আবার আমাদের ফিরে যেতে হবে। খুব আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।’

    পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্যমঞ্চের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘মুর্শিদাবাদ জেলার প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। পরিযায়ী বোর্ড চালু হওয়ার পরে পরিযায়ী শ্রমিকদের নানান সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। ওডিশার ভদ্রক জেলা থেকে ওই ২০ জন পরিযায়ী শ্রমিকের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া মাত্র আমরা তাঁদের উদ্ধার করেছি।

    সিএএ লাগু হওয়ার পরেই তাঁদের উপরে নির্মম অত্যাচার করা হয়েছে। ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের এই রাজ্যে কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।’ বহরমপুর পুরসভার পুরপ্রধান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘পরিযায়ী বোর্ডের মাধ্যমে ওদের সমস্যার সমাধান করা হবে।’
  • Link to this news (এই সময়)