এই সময়: রবীন্দ্র সরোবরে জলের পরিমাণ থেকে শুরু করে তার দূষণ, পাড়ের ক্ষতি এ সব জানতে বসছে বিশেষ যন্ত্র। যাতে ধরা পড়বে সঠিক ও পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য। কেএমডিএ সূত্রের খবর, বিপুল আয়তনের সরোবরে আইওটি ডিভাইস বসানোর কাজ শিগ্গিরিই শুরু হবে।বিভিন্ন সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, রবীন্দ্র সরোবরের জলাশয় প্রচুর জলজ প্রাণীর বাসস্থান। তারা যাতে সুস্থ ভাবে থাকতে পারে, সে জন্য জলের গুণমান এবং জলের উচ্চতা ঠিকঠাক বজায় রাখার সুপারিশ দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। সে জন্যই বিশেষ যন্ত্র বসানোর ওই সিদ্ধান্ত।
কেএমডিএ সূত্রের খবর, জলাশয়টিতে প্রায় ১৬টি সেন্সর বসানো হবে। জলাশয়ে কোনও বিপত্তি দেখা ঘটলে স্ক্রিনেই তা দেখা যাবে কেএমডিএ-র অফিসে বসে। জল দূষিত হলে সাফাইয়ের ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। আবার প্রয়োজনে অতিরিক্ত জল যাতে বার করে নেওয়া যায়, সে জন্য নিকাশি নালা তৈরির লক্ষ্যে সরোবরের মাটির নীচ দিয়ে বিকল্প পথ তৈরিরও চেষ্টা চলছে।
২০২০ সালে উম্পুনের পর থেকেই বেশ কয়েক বার মাছ মরে ভেসে ওঠার ঘটনা সামনে এসেছে রবীন্দ্র সরোবরে। মাছের মৃত্যুর কারণ জানতে যে কমিটি তৈরি করা হয়েছিল, তার সদস্যরা সরোবরের জলাশয় খুঁটিয়ে পরীক্ষা করার পর বেশ কিছু সুপারিশ করেছেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে জলাশয়ের দূষণ মাত্রা এবং জলের উচ্চতা জানতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। কারণ, সরোবরে জলের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং জল দূষণের কারণে মাছ মারা যাচ্ছে বলেই ওই বিশেষজ্ঞ কমিটির অভিমত।
পরিবেশবিজ্ঞানী অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘শহরের জলাভূমিগুলোর মধ্যে অন্যতম এই রবীন্দ্র সরোবরের জীববৈচিত্র রক্ষার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার প্রয়োজন। সেই সঙ্গে বাড়তি জল বার করে দিতে দরকার নিকাশি নালারও।’ অভিজিৎ মনে করছেন, বিশেষ যন্ত্র বসানোর পর সেখানে ধরা পড়া তথ্য অনুযায়ী কেএমডিএ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করলে সরোবরের জলাশয়ে মাছ, কচ্ছপ, পরিযায়ী পাখিরা আরও ভালো ভাবে থাকতে পারবে। বিদেশের অনেক শহরে জলাশয়ের জীববৈচিত্র রক্ষায় আইওটি ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কলকাতার কোনও জলাশয়ের ক্ষেত্রে এমনটা এর আগে হয়নি বলে কেএমডিএ-র কর্তাদের দাবি।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞানের অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরীর বক্তব্য, ‘জল দূষিত হলে জলজ প্রাণীরা মারা যায়। গত কয়েক বছরে সরোবরে এমন ঘটনা ঘটেছে।’ তবে কেএমডিএ-র নতুন পরিকল্পনা কার্যকর হলে তেমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানো যাবে বলে আশা ওই পরিবেশবিজ্ঞানীর। দীর্ঘদিন ধরে সরোবরের পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে লড়াই করে আসা সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, ‘শুধু যন্ত্র বসালেই হবে না। জলাশয়ে যাতে প্লাস্টিক-সহ অন্যান্য বর্জ্য না-মেশে, সে দিকে নজর দিতে হবে।’