এই সময়, আরামবাগ: রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের জাল নথি তৈরি করে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাচীন বহুমূল্য সম্পদ এবং ভারতের মূল্যবান ভেষজ উদ্ভিদ বিদেশে পাচার চক্রের হদিস পেল গোঘাট থানার পুলিশ। ইতিমধ্যে এই ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার তাদের আরামবাগ মহকুমা আদালতে তোলা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের কাছ থেকে ভারত সরকারের ভুয়ো স্ট্যাম্প দেওয়া একটি গাড়ি-সহ বেশ কিছু জাল নথিপত্র, বেশ কিছু মুদ্রা, ভেষজ উদ্ভিদ উদ্ধার করা হয়েছে।
ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে দুষ্প্রাপ্য জিনিস সংগ্রহ করে পাচার করত। কাজের সুবিধার জন্য ভুয়ো সরকারি নথি ব্যবহার করা হতো। ধৃতদের মধ্যে সৃষ্টিধর মাইতি ও তাপস মাইতি সম্পর্কে দুই ভাই। এরা দু’জনেই গোঘাটের শ্যামবল্লভপুরে থাকে। আর এক ধৃত কার্তিক পাখিরার বাড়ি গোঘাটের বালিতে।
শ্যামল মণ্ডলের বাড়ি চন্দ্রকোনার সীতানগরে। শ্যামল মাঝি নামে একজন থাকে খানাকুলে। শেখ হাফিজুলের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরে। সন্তু ভাণ্ডারীর বাড়ি চন্দ্রকোনার নীলগঞ্জে। শেখ নাজিমুল থাকে ঘাটালের আনন্দপুরের জয়নগর ও রোহিত চালক থাকে ঝাড়গ্রামের বিনপুরে। এ দিন ধৃতদের আদালতে তোলা হলে মূল অভিযুক্ত সৃষ্টিধর মাইতিকে ১১ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আর বাকি আট জনের ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজত হয়েছে। দুষ্প্রাপ্য ও মূল্যবান জিনিসের চোরাচালানের এই চক্র শুধু আরামবাগ মহকুমা বা রাজ্যে নয়, দেশজুড়ে এই চক্রের জাল বিস্তৃত বলে মনে করছেন তদন্তকারী অফিসাররা। এ দিন মূল পাণ্ডা সৃষ্টিধর মাইতির গোঘাটের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় থমথমে পরিবেশ। স্থানীয়রা তাকে সব্জি বিক্রেতা হিসেবে চিনত।
কিন্তু সামান্য সব্জি বিক্রেতার বিশাল বাড়ি দেখে হতবাক সবাই। কয়েকটি মোটরবাইক ও দামি গাড়িও রয়েছে বাড়িতে। বাড়িতে বসানো আছে সিসি ক্যামেরা। ছাদে জাতীয় পতাকা লাগানো। ধৃত সৃষ্টিধর মাইতির স্ত্রী জ্যোৎস্না মাইতি বলেন, ‘গাছ নিয়ে কাজ করছিল বলে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গিয়েছে। এর বেশি কিছু জানি না। কম্পিউটারের হার্ডডিস্কও নিয়ে গিয়েছে পুলিশ।’
সৃষ্টিধরের ভাই ধৃত তাপস মাইতির স্ত্রী মঞ্জু মাইতি বলেন, ‘আমার স্বামী সোনার কাজ করেন। বাড়িতে বসে দুই ভাই গল্প করছিল। সেই সময় দু’জনকেই ধরে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ।’ বালি অঞ্চলের তৃণমূল প্রধান রঘুনাথ সাঁতরা বলেন, ‘যদি কেউ খারাপ কাজ করে তা হলে আইন ব্যবস্থা নেবে। অনৈতিক কাজ করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।’
বিজেপি নেতা বিমান ঘোষ বলেন, ‘অবৈধ কাজ ও লেনদেনের বিষয়টা তো নির্বাচন কমিশন দেখছে। আর টাকা মানেই তৃণমূল। ওদের হাত থাকতে পারে। এই ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক আছে কি না, তার খোঁজ চলছে।’