আইসিডিএস কেন্দ্রেই সন্তান প্রসব অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর
এই সময় | ২৯ মার্চ ২০২৪
এই সময়, হাওড়া: ডাক্তারবাবু বলেছিলেন এপ্রিল মাসের ২২ থেকে ২৪ তারিখের মধ্যে ডেলিভারি হবে। সেই মতো বৃহস্পতিবার ছুটির দরখাস্ত জমা দিতে এসেছিলেন সাঁকরাইলের পাঁচপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সুরথমোহন পাল শিক্ষায়তনের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী অঞ্জলি মুর্মু (৩৪)। কিন্তু কর্মস্থলে ঢুকতে না ঢুকতেই প্রসবযন্ত্রণা শুরু হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতোও অবস্থা ছিল না।শেষে খবর দেওয়া হয় আশাকর্মীদের। আশাকর্মীরাই ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে অঞ্জলির ডেলিভারি করান। পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন অঞ্জলি। মা-ছেলে দু’জনেই ভালো আছে। দু’জনকে আপাতাত হাসপাতালে রাখা হয়েছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক সন্তান প্রসবের দিন ঠিক করেছিলেন ২২ থেকে ২৪ এপ্রিলের মধ্য।
এপ্রিলের পড়ার আগেই ছুটির দরখাস্ত জমা দিতে বৃহস্পতিবার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে এসেছিলেন অঞ্জলি। কিন্তু তিনি যখন সুরথমোহন পাল শিক্ষায়তন স্কুলের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ঢুকছেন তখনই প্রসব যন্ত্রণা ওঠে। অফিস ঘর পর্যন্ত তিনি যেতে পারেননি। বসে পড়েন স্কুলের গেটের সামনে বটগাছের তলায়। সেই সময় বাইরে অপেক্ষা করছিলেন অভিভাবকরা। তাঁরাই খবর দেন আইসিডিএস সুপারভাইজ়ারকে।
দ্রুত গেটের কাছে চলে আসেন সুপারভাইজ়ার এবং অন্যান্য আইসিডিএস কর্মীরা। তাঁরা পুরুষ অভিভাবকদের গাছতলা থেকে সরে যেতে অনুরোধ করেন। আদতে বিহারের বাসিন্দা, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা রিঙ্কু দেবী গ্রামে চোখের সামনে দাই মায়েদের সন্তান প্রসব করানো দেখেছেন। তিনিই প্রথম এগিয়ে আসেন। তিনিই প্রসব করাতে গিয়েছিলেন।
যদিও বাকিরা তাঁকে আটকান। আইসিডিএস কর্মীরা খবর দেন স্থানীয় পাঁচপাড়া পঞ্চায়েতের মহিলা সদস্যকে। তিনি খবর দেন আশাকর্মী এবং পুলিশকে। আশাকর্মীরা এসে সন্তান প্রসবে সাহায্য করেন। পুলিশ পরে মা এবং শিশুকে নিয়ে যায় সাঁকরাইল ব্লকের হাজি এস মল্লিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানেই নাড়ি কাটেন চিকিৎসকরা। শিশুটির ওজন এক কেজি ন’শো গ্রাম।
হাজি এসটি মল্লিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে রেফার করা হয় মা ও শিশুকে। কিন্তু যেহেতু অঞ্জলির চিকিৎসা চলছিল মেডিক্যাল কলেজে, তাই তাঁকে মেডিক্যাল কলেজেই নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে মা ও শিশু দু’জনেই এখন সুস্থ আছে।
চোখের সামনে সহকর্মীর পুত্রসন্তানের জন্ম দেখে আপ্লুত অন্যান্য আইসিডিএস কর্মীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রথম দিকে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও তাঁরা মাথা ঠান্ডা রেখেই কাজ করেছেন। দাই’মা থেকে আশাকর্মী এবং পুলিশকে খবর দেওয়া সবটাই নিজেদের হাতে সামলেছেন। পাঁচপাড়া পঞ্চায়েতের আইসিডিএস সুপারভাইজ়ার তৃণা রায় বলেন, ‘অঞ্জলি এদিন আমার কাছেই প্রসবকালীন ছুটির জন্য দরখাস্ত জমা দিতে এসেছিলেন। তার আগেই প্রাকৃতিক নিয়মে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। শেষ ভালো যার সব ভালো।
সাঁকরাইল ব্লকের মেডিক্যাল অফিসার সুমন বক্সি বলেন, ‘২৪ এপ্রিল প্রসবের দিন চিকিৎসক ঠিক করলেও হঠাৎ প্রসবযন্ত্রণা ওঠায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেই পুত্র সন্তানের জন্ম দেন ওই আইসিডিএস কর্মী। পরে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়। মা এবং শিশু দু’জনেই সুস্থ আছে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে দু’জনকে মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়।’
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য প্রিয়াঙ্কা পারুই বলেন, ‘আমি খবর পেয়েই চলে আসি। পুলিশ এবং প্রশাসনকে খবর দিই। হাসপাতাল থেকে খবর পেয়েছি দু’জনেই ভালো আছে। আমরা সবাই খুব খুশি।’