BJP Parody Video : বিজেপি-তিরে ‘ইন্ডিয়া’, মিসোজিনি-তোপে পদ্ম
এই সময় | ৩০ মার্চ ২০২৪
স্বামী বাছাইয়ের অধিকার কি আজও নেই মহিলাদের? ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে নিশানা করে বিজেপির তৈরি বিজ্ঞাপনী ভিডিয়ো ঘিরে উঠল প্রশ্ন। লোকসভা-বিধানসভার জনপ্রতিনিধিত্বে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের বন্দোবস্ত থাকলেও রাজনীতির আঙিনায় ‘মিসোজিনি’ বা পুরুষতান্ত্রিকতাকে তা নির্মূল করতে পেরেছে কি না, সে প্রশ্নও উস্কে দিয়েছে বিজেপির এই ভিডিয়ো।এবং এই যুক্তিতে বিজ্ঞাপনটি ‘উইথড্র’ করার দাবি জানিয়েছে সিপিএম। একই সুরে আক্রমণ শানিয়েছেন কংগ্রেসের সুপ্রিয়া শ্রীনেত। তৃণমূল একে বিজেপির ব্রাহ্মণ্যবাদী, মনুবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন বলে মনে করছে। ২.২৩ মিনিটের ভিডিয়োটি মঙ্গলবার বিজেপির অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করা হয়েছে। সানাইয়ের সুরে সেটি শুরু হচ্ছে।
লাল লেহেঙ্গা পরা কনে ও তাঁর বাড়ির লোকের সঙ্গে যিনি প্রাথমিক ভাবে বাক্যালাপ শুরু করছেন, তাঁর সঙ্গে রাহুল গান্ধীর মিল রয়েছে বলে বিরোধী শিবিরের পর্যবেক্ষণ। বিরোধীদের আরও অবজ়ার্ভেশন—রাহুল ছাড়াও সনিয়া গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, লালুপ্রসাদ যাদব, তেজস্বী যাদব, অখিলেশ যাদব, অরবিন্দ কেজরিওয়াল-সহ জোটের বহু নেতার অনুকরণে বেশ কিছু চরিত্র সেখানে বরপক্ষের তরফে উপস্থিত।
এরই মধ্যে ভেসে আসে প্রশ্ন—আপনিই বর তো? ভিডিয়োর ‘রাহুল’ তাতে সায় জানান। অতঃপর মল্লযুদ্ধ! কারণ সকলেই নিজেকে সম্ভাব্য বর হিসেবে সেরা বলে দাবি করছেন। বচসা থেকে এক সময়ে লেগে যায় হাতাহাতি। কনেপক্ষ বিভ্রান্ত। একেবারে শেষে গেরুয়া শিবিরের বার্তা — স্বামী কে হবেন, সেটাই এঁরা ঠিক করতে পারেন না। তা হলে প্রধানমন্ত্রী ঠিক করবেন কী ভাবে?
সেই সঙ্গেই নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপি নেতৃত্বের বারবার আওড়ানো বাক্য — ‘অব কি বার, ৪০০ পার।’ ভিডিয়োর নাম — ‘ইন্ডি অ্যালায়েন্স মে ফাইট, ম্যায় হি দুলহা হুঁ রাইট।’ যদিও এই প্রথম নয়। অতীতেও বিরোধীদের নিশানা করতে ‘দুলহা’ কনসেপ্ট ব্যবহার করেছে গেরুয়া শিবির।
লোকসভা ভোটে জোটের মুখ কে হবেন, সেটা এখনও জানায়নি ‘ইন্ডিয়া’। উল্টোদিকে বিজেপির তরফে তৃতীয় বারের জন্য মোদীকে পিএম-ফেস হিসেবে তুলে ধরে শুরু হয়েছে প্রচার। এই পরিস্থিতিতে জোটে চিড়ও সামনে এসেছে বারবার। তাকে হাতিয়ার করেছে পদ্ম শিবির।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খাড়গেকে ‘ইন্ডিয়া’-ফেস করার প্রস্তাব দিলেও খাড়গে ভোটের ম্যানডেট পর্যন্ত অপেক্ষা করার পক্ষপাতী। এরই মধ্যে মমতা বাংলায় ‘একলা চলো’ নীতি নিয়েছেন। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার জোট থেকে বেরিয়ে বিজেপির হাত ধরেছেন। আবগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন কেজরিওয়াল।
যদিও তারপরেও বিরোধী দলগুলি ঐক্যের বার্তা দিয়ে মরিয়া। কেজরির গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে আগামী রবিবার দিল্লিতে ‘মহা র্যালি’র ডাক দিয়েছে তারা। কিন্তু জোটে ভাঙন ও সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে লাগাতার আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। এই ভিডিয়ো সেই তালিকাতেই সাম্প্রতিকতম সংযোজন।
বিজেপির এই ভিডিয়োকে ‘সিক, সেক্সিস্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেছে সিপিএম। প্রতিক্রিয়ার জন্য কংগ্রেসের জয়রাম রমেশকে যোগাযোগ করা হলে তিনি হাত শিবিরের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনেতের এক্স-পোস্টকেই তাঁর রিঅ্যাকশন বলে জানান। কী লিখেছেন শ্রীনেতে? বুধবার এক্স-এ সুপ্রিয়া শ্রীনেতের পোস্টটি এ রকম — ‘রক্তের যোগ না থাকলেও বিয়ের মতো একটি পবিত্র সম্পর্ক সব রিলেশনশিপের ভিত। পারস্পরিক বিশ্বাস ও ভালোবাসায় তা টিকে থাকে। এবং একটি জঘন্য বিজ্ঞাপনের সূত্রে আরও একবার বিজেপির রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি সামনে এসেছে। তাদের চোখে একজন নারীকে লেহেঙ্গা পরে বিয়ে করতে হবে এবং ভাবী স্বামীকে ইমপ্রেস করতে হবে। স্বামী বেছে নেওয়া এবং গণতন্ত্রে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন, দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।’
নারী আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘোষের কথায় শ্রীনেতের বক্তব্যেরই প্রতিফলন। শাশ্বতী বলেন, ‘ভিডিয়োটি সুন্দর ভাবে বানানো, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের প্রসঙ্গে স্বামী বাছাই নিয়ে ভিডিয়ো তৈরি করার কী অর্থ? তা ছাড়া নিজেকে শ্রেষ্ঠ স্বামী প্রমাণ করে হবু স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার এই মানসিকতা কেন?’
কী বলছে তৃণমূল? রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘বিজেপির তো একটা নারীবিদ্বেষী ইতিহাস আছেই। আরএসএস এক সময়ে মহিলা সদস্য নিত না। এখন নিলেও তাদের মনোভাবে সেই ব্রাহ্মণ্যবাদ, মনুবাদ থেকেই গিয়েছে। কাজেই এর বাইরে ওরা আর কী করতে পারে!’ এক্স-পোস্টের সুরে সুর মিলিয়ে সিপিএমের শমীক লাহিড়ি যা বলছেন, তার সঙ্গে ব্রাত্যর বক্তব্যের সাযুজ্য রয়েছে। শমীকের কথায়, ‘এটা তো বিজেপির মানসিকতার প্রতিফলন। মনুবাদ থেকে তারা কোনওদিনই বেরোতে পারে না।’
যদিও বিজেপির প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তর মতে, এই বিজ্ঞাপনে কোনও ‘মিসোজিনি’ বা ‘মেল শভিনিজ়ম’ নেই। তাঁর কথায়, ‘আমি ব্যক্তিগত ভাবে বলতে পারি, এটি একটি পলিটিক্যাল প্যারোডি। এর মধ্যে অন্য কিছু দেখার মানে হয় না। আসলে পলিটিক্সে রসবোধ বা হিউমর এত কমে গিয়েছে যে কিছু বলার নেই। সব বিষয়ে আন্দোলন, প্রতিবাদের কোনও অর্থ আছে বলে মনে করি না।’