• Laxmi Bhandar : লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ক্যারিশমা! পার্লারমুখী গ্রামের মহিলারা
    এই সময় | ৩০ মার্চ ২০২৪
  • লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ক্যারিশমা বোধহয় একেই বলে! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ড্রিম প্রজেক্ট লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে নাম লেখালেই মহিলাদের অ্যাকাউন্টে টাকা আসছে। আগে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে মেয়েরা মাসে ৫০০ টাকা করে পেতেন। মার্চ মাস থেকে সেটা বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করা হয়েছে। সেই টাকা হাতে পেয়ে গ্রামের মহিলারা ভিড় করছেন বিউটি পার্লারে।যে সব বাড়ির মহিলাদের কাছে রূপচর্চা ছিল নেহাতই বিলাসিতা, তাঁরাও এখন পার্লারে যাচ্ছেন। সেখানে স্কিন, হেয়ার ট্রিটমেন্ট, ম্যানিকিয়োর, পেডিকিয়োর করাচ্ছেন। বিয়ের কনে সাজানো বা উৎসব-অনুষ্ঠানে বাড়িতে ডাক পড়ছে এলাকার বিউটিশিয়ানদের। বাংলার গ্রামগঞ্জে তৈরি হয়েছে অসংখ্য পার্লার।

    ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া কিংবা উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারের মতো পিছিয়ে পড়া আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাতেও রমরমিয়ে চলছে পার্লার। অনেক মহিলা বিউটিশিয়ানের কোর্স করে ব্যবসাও করছেন। এই পেশার হাত ধরেই নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন গ্রামের মহিলারা।

    রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, ২০২১-এ লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে গত তিন বছরে পঞ্চায়েত এলাকায় ৬ হাজারের মতো নতুন পার্লার তৈরি হয়েছে। এটা সরকারি হিসেব। যদিও বেসরকারি হিসেবে সংখ্যাটা কম করে ১০-১২ হাজার। পঞ্চায়েত দপ্তরের এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, গ্রামের দিকে যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁদের অধিকাংশই সরকারি পারমিশন নেন না।

    অনেকে নিজের বাড়িতে ব্যবসা করেন। তাঁরা ট্রেড লাইসেন্সও নেন না। ফলে গ্রামীণ এলাকায় কত পার্লার চলছে, তার হিসেব পাওয়া কঠিন। অনেক বিউটিশিয়ান আছেন, যাঁরা ঘুরে ঘুরে কাজ করেন। তাঁদের সংখ্যাটাও কম নয়। বছরখানেক হলো বেসরকারি জায়গা থেকে বিউটিশিয়ান কোর্স করে বাড়ির কাছেই পার্লার খুলেছেন হাওড়ার শ্যামপুরের গৃহবধূ মৌমিতা প্রামাণিক।

    তিনি জানিয়েছেন, তাঁর পার্লারে যাঁরা আসেন, তাঁদের সিংহভাগই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মহিলা। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ছাড়া তাঁদের সে অর্থে কোনও রোজগার নেই। তাঁরা পার্লারে খুব বেশি টাকা খরচ করতে পারেন না। তাঁদের কথা ভেবে রূপটানের রেট কমিয়েছেন মৌমিতা। তাঁর কথায়, ‘সব মহিলাই সাজতে ভালবাসেন। তবে টাকার অভাবে অনেকে শখ মেটাতে পারতেন না। একটা সময় ছিল, যখন বিয়ের দিন পাড়ার মেয়েরা কিংবা আত্মীয়স্বজনরা কনে সাজাতেন। এখন আমাদের মতো বিউটিশিয়ানদের ডাক পড়ে। বাড়িতে ছোটখাট অনুষ্ঠান থাকলেও বাড়ির বউরা এখন পার্লারে যান। বিয়ের মরশুম থাকলে কাস্টমারের সংখ্যা আরও বাড়ে।’

    তিনি জানান, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চালু হওয়ার পর থেকে বাড়ির বউদের এখন বরের কাছে হাত পাততে হয় না। টিভি এবং সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য গ্রামের মেয়েদের মধ্যে সৌন্দর্য সচেতনতাও বেড়েছে। তার জন্যই গ্রামের মেয়েরা এখন অনেক বেশি সংখ্যায় পার্লারে আসছেন।

    দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর এলাকার একটি বিউটি পার্লারের মালিক তনিমা নস্কর বলেন, ‘আগে শুধুমাত্র সম্পন্ন মহিলারাই পার্লারে আসতেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চালু হওয়ার পরে অনেক সাধারণ পরিবারের মহিলারাও পার্লারে আসছেন। প্রথমে খরচ শুনে অনেকে ফিরে যেতেন। তাঁদের জন্য আমরা আলাদা রেট চার্ট তৈরি করেছি।’

    বিউটিশিয়ান কেয়া শেঠের বক্তব্য, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে টাকা পেয়ে গ্রামেরা মেয়েরা এখন নিজেদের ইচ্ছেমতো খরচ করতে পারছেন। আমার বাড়িতে যে সব মহিলারা কাজ করে, তারাও দেখি নিয়মিত রূপচর্চা করে। শুনলে অবাক হবেন, আমি এমন অনেককে চিনি, যারা টিফিনের খরচ বাঁচিয়ে মাসে একবার হলেও পার্লারে যায়।’

    রাজ্যের পিছিয়ে পড়া জেলা পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বীরভূম, বাঁকুড়া এবং আলিপুরদুয়ারের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাতেও বিউটি পার্লারের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুর দাবি, গরিব আদিবাসী পরিবারের মেয়েরা আগে পার্লারে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারতেন না। এখন ছবিটা বদলাচ্ছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা হাতে আসায়, আদিবাসী মহিলাদের মধ্যেও পার্লারে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।

    অনেক মহিলা আবার বিউটিশিয়ানের পেশায় যুক্ত হয়েছেন। এসসি, এসটি, ওবিসি ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ফিনান্স কর্পোরেশন থেকে প্রায় কয়েক হাজার আদিবাসী মহিলাকে ইতিমধ্যেই বিউটিশিয়ানের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। তাঁদের অনেকেই নিজের এলাকায় পার্লার খুলে ব্যবসা করছেন। কেউ আবার শহরের বিউটি পার্লারে কাজ করছেন।

    গ্রামের মেয়েদের স্বাবলম্বী করে তুলতে উৎকর্ষ বাংলা প্রকল্পে বিভিন্ন রকমের বিউটিশিয়ান কোর্স করাচ্ছে রাজ্য কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং স্কিল ডেভেলপমেন্ট দপ্তর। এর মধ্যে রয়েছে, অ্যাসিস্ট্যান্ট হেয়ার ড্রেসার অ্যান্ড স্টাইলিস্ট, অ্য…
  • Link to this news (এই সময়)