• Pocso Act : মা-মেয়ের চক্রে ফেঁসে জেলে কলেজ ছাত্র, বেল হাইকোর্টে
    এই সময় | ৩০ মার্চ ২০২৪
  • সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বে’র হাতছানি এড়াতে না পেরে খেসারত দিলেন কলেজ পড়ুয়া তরুণ। ফেসবুকে স্বল্পবসনা নাবালিকার ছবি ও বন্ধুত্বের ডাকে সাড়া দেন ওই তরুণ। তাতেই ফেঁসে গিয়ে দু’লাখ টাকা মেটাতে না পারায় পকসো আইনে অভিযুক্ত হয়ে প্রায় সাড়ে তিন মাস জেল খাটতে হলো তাঁকে। শেষ পর্যন্ত তাঁর অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট দেখে হাইকোর্ট জামিন মঞ্জুর করেছে।বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চ যাবতীয় নথি এবং পুলিশের রিপোর্ট খতিয়ে দেখে মধুচক্রের ফাঁসে ওই তরুণের আটকে যাওয়ার দাবির সত্যতায় মান্যতা দেয়। আদালত বিস্মিত এমন ‘ট্র্যাপ’ দেখে। যেখানে মায়ের মোবাইল ফোন থেকে নাবালিকা মেয়ে ঘনিষ্ঠ ভাবে মেলামেশার আহ্বান জানাচ্ছে!

    আবার ওই তরুণের সঙ্গে নাবালিকার দেখা হওয়ার পরে মেয়ের মা হাজির হচ্ছেন দু’লাখ টাকার দাবি নিয়ে। এতে গভীর ষড়যন্ত্রই দেখছে আইনজীবীমহল। এই জামিন-আর্জির মামলায় বিচারপতি বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ ওই মা এবং মেয়েকে নিজেদের বক্তব্য জানানোর জন্যে তলব করলেও তাঁরা হাজির হননি। তাতে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব আরও গভীর হয়েছে।

    ওই মা-মেয়ে এর আগেও একই ভাবে ব্ল্যাকমেল করে একাধিক লোকের থেকে মোটা টাকা হাতিয়েছেন বলে আদালতে অভিযোগ করেন অভিযুক্ত তরুণের আইনজীবী। পুলিশ মানছে, সোশ্যাল মিডিয়ার বাড়বাড়ন্তে এমন কত ঘটনা রোজ ঘটছে, তার হদিশ করা মুশকিল। কিছু ক্ষেত্রে মহিলার তরফে অভিযোগ হচ্ছে, আবার খুব কম ক্ষেত্রে পুলিশের দ্বারস্থ হচ্ছেন পুরুষ।

    অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফেঁসে গিয়ে লোকলজ্জার ভয়ে মোটা টাকা দিয়ে পুরুষ নিষ্কৃতি পাচ্ছেন। এই মামলায় তরুণটির দুই আইনজীবী নীলাদ্রিশেখর ঘোষ ও সম্পূর্ণা চট্টোপাধ্যায় নিজেদের মক্কেলের প্রলুব্ধ হওয়ার মধ্যে যে অন্যায় আছে, তা মেনেও বলেন, যে ভাবে নাবালিকা মেয়েকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে মা ফোনে জাল বিছিয়েছেন, তা অপরাধের নতুন ট্রেন্ড।

    এমন চক্রের ব্যাপারে নাগরিকদের যেমন সতর্ক হওয়া উচিত, তেমনই আইনরক্ষাকারী সংস্থাগুলিরও এ নিয়ে প্রচার করা প্রয়োজন।

    কয়েক মাস আগে ফেসবুকে ‘লাল পরী’ নামে একটি পেজ দেখে চোখ আটকায় কলেজ পড়ুয়া তরুণের। ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের ডাকে সাড়া দিতেই ওই পেজ থেকে স্বল্পবসনে আরও ছবি পাঠানো হতে থাকে তাঁর মেসেঞ্জারে।

    ওই তরুণের তরফে হাইকোর্টে জমা দেওয়া ছবি-নথিতে স্পষ্ট, ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্যে যত রকম পোজে নিজের ছবি দেওয়া যায়, সবই তাঁকে পাঠায় ওই নাবালিকা। সঙ্গে চলতে থাকে চ্যাট। দেখা যায় দু’জনের বাড়িই কাছাকাছি। তার পরেই তরুণটির ফাঁকা বাড়িতে হাজির হয় নাবালিকা। দু’লাখ টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে অস্বীকার করার মধ্যেই হাজির হন নাবালিকার মা। তিনিও একই দাবি করতে থাকেন।

    কিন্তু টাকা দিতে অপারগ হওয়ায় তরুণটির নামে ধর্ষণ-সহ একাধিক ধারায় পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ ওই তরুণকে গ্রেপ্তার করে। প্রায় সাড়ে তিন মাস জেলে থাকা তরুণটি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। সেখানে তাঁর আইনজীবী হানি ট্র্যাপের বিষয়টি সামনে আনেন। তার পরেই আদালত পুলিশকে দিয়ে অভিযোগের তদন্ত করায়। সব শেষে জামিনের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
  • Link to this news (এই সময়)