এই সময়, আসানসোল: কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার আধিকারিকদের আবাসনে কেপমারির ঘটনায় বাড়ছে উদ্বেগ। কখনও সিবিআই আবার কখনও ভিজিল্যান্স তল্লাশির কথা শুনিয়ে বাড়ির সদস্যদের বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে নগদ টাকা, বিপুল অঙ্কের গয়না। এ ঘটনা অতীতে চিত্তরঞ্জন রেল শহরে ঘটেছে।সেই একই চিত্রনাট্যে বার্নপুর ইস্কো কারখানার এক আধিকারিকের আবাসন থেকেও টাকা, গয়না লুট করে চম্পট দিল দুষ্কৃতীরা। গত বুধবারের এই ঘটনায় ইস্পাতনগরীতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। আতঙ্কিত আবাসনের বাসিন্দারা। ওই দিন হিরাপুর থানার বার্নপুরের সিবি এনক্লেভের সিনিয়র ম্যানেজার সুমিত নাগরালের আবাসনে স্কুটার নিয়ে আসে এক ব্যক্তি।
সেই সময় বাড়িতে উপস্থিত ওই ম্যানেজারের স্ত্রী ও মেয়েকে সিবিআই ইনস্পেক্টর হিসেবে পরিচয় দেয় সেই ব্যক্তি। সুমিত নাগরালের স্ত্রীকে জানায়, কারখানায় ভিজিল্যান্স রেইড চলছে, তাতে তাঁর স্বামী সহ দু’জনকে আটক করা হয়েছে। এর পর আবাসনেও অভিযান চালাতে পারে ভিজিল্যান্স।
ফলে এই মুহূর্তে আবাসনে থাকা সমস্ত গয়না ও গুরুত্বপূর্ণ নথি ওই ব্যক্তি তার কাছে রাখার আবেদন জানায়। একটি ব্যাগে টাকা, গয়না রাখার কথা জানিয়ে সেই ব্যক্তি সুমিত নাগরালের স্ত্রীকে আশ্বস্ত করে। জানায়, তাঁর মেয়ের কাছে ওই ব্যাগ থাকবে। স্কুটারে তারা দু’জনে সেই ব্যাগ নিয়ে গিয়ে এক জায়গায় রেখে আসবে।
কিন্তু, কোয়ার্টার থেকে কিছু দূর যেতেই ওই ব্যক্তি ইস্কো আধিকারিকের মেয়েকে স্কুটার থেকে নামিয়ে ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। জানা গিয়েছে, ওই ব্যাগে ছিল ৩ লক্ষ টাকার সোনার গয়না, নগদ লাখখানেক টাকা, আধার, ভোটারকার্ড ও বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি। ঘটনার খবর পেয়ে ওই আবাসনে আসেন ইস্কো অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। হিরাপুর থানায় পুলিশ সেখানে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে। লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয় থানায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুমিত নাগরালের মতো এখনও পর্যন্ত ইস্কো কারখানার চার অফিসার এ ভাবে প্রতারিত হয়েছেন। প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২২ সালে। তখন প্রতারকরা এজিএম এস করুণাকরের বাড়িতে গিয়ে সিবিআই অফিসার সেজে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয় কয়েক লক্ষ টাকা। কয়েক মাস আগে ইস্কোর জিএম ভেনুগোপালের বাড়িতেও লক্ষাধিক টাকার গয়না এই ছকে প্রতারণা করে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।
বৃহস্পতিবার ইস্কো অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি দল পুলিশ ও কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানান। অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি ভাস্কর কুমার বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীদেরও বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে আরও সিসিটিভি বসানোর কথা ভাবা হচ্ছে।’
অন্য দিকে, গত বছর ২৪ অগস্ট চিত্তরঞ্জনের ফতেপুরের কারখানায় একই ঘটনা ঘটেছিল। সেখানে রেলকর্মী ইয়েলাপ্পা পরিমল মূর্তি কারখানায় কর্মরত থাকাকালীন তাঁর বাড়িতেও হানা দিয়েছিল কেপমারের দল। পরিমল মূর্তির স্ত্রী ওয়াই যজ্ঞেশ্বরী দেবীর কাছে তাঁর স্বামীর বিস্তারিত পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি জানিয়েছিল, কারখানায় পুলিশি তল্লাশি চলছে। তাঁর স্বামীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এই মুহূর্তে ঘরে যা রয়েছে সব তার হাতে তুলে দেওয়ার আবেদন জানায় সেই ব্যক্তি। সেই একই কথা, কারখানার পর তল্লাশি হতে পারে বাড়িতেও। যজ্ঞেশ্বরী দেবী সেই ব্যক্তির উপর বিশ্বাস রেখে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার গয়না ও নগদ টাকা দিয়ে বসেন। কারখানা থেকে ঘণ্টাখানেক পরে তাঁর স্বামী বাড়ি ফিরলে বুঝতে পারেন তাঁরা প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
পর পর এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন পুলিশ-প্রশাসনও। কমিশনারেটের এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রতিটি ঘটনার আলাদা তদন্ত চলছে।