Arvind Kejriwal Arrest: ভারতে অস্থিরতা, সরব রাষ্ট্রপুঞ্জও
এই সময় | ৩০ মার্চ ২০২৪
নয়াদিল্লি: জার্মানি, আমেরিকার পরে এ বার রাষ্ট্রপুঞ্জ! আন্তর্জাতিক ওই সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফানে দুজারিক এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, 'আমরা আশা রাখি ভারত-সহ যে দেশগুলিতেই নির্বাচন হচ্ছে সেখানে রাজনৈতিক এবং নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত থাকবে, যাতে অবাধ, সুষ্ঠু এবং ভয়হীন পরিবেশে প্রত্যেকে ভোট দিতে পারেন৷' তাঁকে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারি ও কংগ্রেসের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করা প্রসঙ্গে। তা নিয়ে তিনি সরাসরি কোনও মন্তব্য অন্য দুই দেশের মতো করেননি, কিন্তু মহাসচিবের তরফে যে বার্তা দিয়েছেন, তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।এ ক্ষেত্রে সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এর আগেও এই দেশে বহু নির্বাচন হয়েছে কিন্তু ভারতের 'রাজনৈতিক অস্থিরতা' নিয়ে এর আগে কেউ-ই কখনও প্রশ্ন তোলেনি। বরং আমেরিকা-সহ বহু দেশে বৃহত্তম এই গণতন্ত্রের নির্বাচন প্রক্রিয়ারা তারিফই করেছে একাধিকবার। তা হলে এমন কী ঘটল, যে কারণে কেন্দ্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার থাকা সত্ত্বেও 'পলিটিক্যাল আনরেস্ট' নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে রাষ্ট্রপুঞ্জকেও? তার কিছুটা আভাস রয়েছে দুজারিকের বক্তব্যে। তিনি জোর দেন, 'রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক অধিকার'-এর উপরে। বিশ্লেষকরা অনেকেই মনে করছেন, এর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে 'রাজনৈতিক অস্থিরতার' ব্যাখ্যা।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এক বিশেষজ্ঞের মতে, 'সব সময়ে যে সরকার পড়ে গেলে বা তার বারবার পরিবর্তন ঘটলে তবেই রাজনৈতিক অস্থিরতা বলা হবে তা কিন্তু নয়। সেই দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ কী, বিরোধী দলগুলো বিনা বাধায় কতটা ফাংশন করতে পারছে, সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক অধিকার সুরক্ষিত রয়েছে কি না, সর্বোপরি সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার নাগরিকের কণ্ঠরোধ করছে কি না, মিডিয়া কতটা স্বাধীন ভাবে সরকার-বিরোধী খবরও করতে পারছে ও তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে - এই সব কিছুই তার অন্তর্গত। এ বার ভারতকে এখানে রেখে দেখলেই অনেক কিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে।'
নয়াদিল্লির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস'-এর প্রফেসর বললেন, 'সাধারণত এই সব নিয়ে বন্ধু দেশ বা আন্তর্জাতিক সংগঠন মন্তব্য করে না। তবে এবার একজন সিটিং সিএম-কে যে হেতু গ্রেপ্তার হতে হয়েছে ও প্রধান বিরোধী দল (কংগ্রেস)-এর অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে ঠিক নির্বাচনের আগেই, তা আন্তর্জাতিক মহলেও আলোড়ন ফেলেছে, যার বহিঃপ্রকাশ এই মন্তব্যগুলোর মাধ্যমে ঘটছে।' যদিও এই 'বহিরাগত' মন্তব্যে খুবই অসন্তুষ্ট কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও রাষ্ট্রপুঞ্জের 'আশা' নিয়ে শুক্রবার রাত ১১টা পর্যন্ত তারা কোনও মন্তব্য করেনি।
তবে একটি অনুষ্ঠানে দেশের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় বলেন, 'ভারত এমন একটা গণতন্ত্র যার অত্যন্ত মজবুত একটি বিচার বিভাগ রয়েছে। এটি কোনও একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জন্য কমপ্রোমাইজ় করা যায় না। ভারতের অন্য কারও থেকে আইনের শাসন নিয়ে পাঠ নেওয়ার প্রয়োজন নেই।' তাঁর সংযোজন, 'আইনের চোখে এই দেশে সবাই সমান। এখন দুর্নীতি করলে জেলে যেতেই হবে।' তবে, পশ্চিমের দেশ ও সংস্থাগুলোর নজরে কিন্তু ভারত বেশ কয়েক বছর ধরেই 'পিছিয়ে পড়ছে।' এমনকী অতি সম্প্রতি V DEM যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতে গণতান্ত্রিক সূচকে ভারতকে তারা ১০৮ নম্বরে রেখেছে। এটা নির্বাচনী গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে।
ওই রিপোর্টে ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এই দেশে 'নির্বাচনী স্বৈরতন্ত্র' চলে। এই শব্দবন্ধের অর্থ হচ্ছে, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান যখন কোনও স্বৈরাচারী প্রক্রিয়াকে অনুকরণ করে ও তা মেনে চলে। V-DEM, যে রিপোর্ট নিয়ে মোদী সরকার সমালোচনায় সরব হয়েছিল, সেই সৼ৾ংস্থার ডিরেক্টর স্ট্যাফান লিন্ডবার্গ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'এই ইনডেক্সিংয়ে কোনও ভুল বা পক্ষপাতিত্ব নেই। ভারতের এই নিম্নমুখীনতার কারণ সে দেশের জাতীয় নির্বাচন কমিশনের অটোনমির তলানিতে এসে ঠেকা, বাক-স্বাধীনতা, মিডিয়া ও সিভিল সোসাইটির উপর সেন্সরশিপ রুটিনে পরিণত হওয়া এবং সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে দেশদ্রোহিতা, মানহানি ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের যথেচ্ছ প্রয়োগ করা, যার মধ্যে শিক্ষাবিদ ও স্টুডেন্টরা রয়েছে যাঁরা সিএএ ২০১৯-এর বিরুদ্ধাচারণ করেছিলেন।'
এর পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্য সরকার কোনও পাল্টা ব্যাখ্যা দেয়নি। সূত্রের খবর, পশ্চিমের চোখে সবক্ষেত্রেই দেশের পারফরম্যান্স ক্রমাগত নামতে থাকায়, ভারত তার নিজস্ব ডেমোক্র্যাটিক রেটিং ইনডেক্স নিয়ে আসছে। ORF (অবজ়ার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন) সেই কাজ করবে। সরকারি সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে নীতি আয়োগের সঙ্গে এই সৼ৾ংস্থার কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। ২০২২ থেকে এই প্রয়াস শুরু হয়েছে। তবে অনেকেরই প্রশ্ন, ভারত যদি নিজের তৈরি ইনডেক্সে নিজেকেই উচ্চ আসন দেয়, তা হলে কি তার গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বজুড়ে বাড়বে, বিশেষ করে এই দেশ যখন 'বিশ্বগুরু' হতে চাইছে?