আবগারি দুর্নীতি মামলায় সম্প্রতি ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন কেজরিওয়াল। আপাতত কেজরিওয়াল ইডি হেফাজতে রয়েছেন। তবে তিনি জেল থেকেই বসেই সরকার চালাবেন আগেই তা জানিয়ে দিয়েছিল আপ। সেই মোতাবেক জেল থেকে বসে তিনি নির্দেশনাও দিয়েছেন। তবে জেলে বসে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের মুখ্যমন্ত্রিত্ব আদৌ তিনি যে পছন্দ করছেন না তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন উপরাজ্যপাল ভি কে সাক্সেনা। তবে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কেজরিওয়াল কত দিন নিজের পদ ধরে রাখতে পারবেন তা স্পষ্ট করেননি তিনি।
এই আবহেই প্রশ্ন উঠছে দিল্লির পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী তাহলে কে হবেন? সম্প্রতি তাঁর একটি ভিডিয়ো বার্তা সামনে এসেছে। সেখানে নিজের স্বামী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন সুনীতা। জানিয়েছেন, ইডি তাঁর বাড়ি থেকে মাত্র ৭৩ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে।এই আবহে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা হরদ্বীপ সিং পুরী কেজরির স্ত্রীকে আক্রমণ করে বলেছেন, 'আসলে সুনীতা তাঁর স্বামীর জায়গা দখলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি নিজের সহকর্মীদের থেকে আলাদা করে নিয়েছেন। আসলে সুনীতা ম্য়াডাম তাঁর স্বামীর জায়গায় বসতে চাইছেন। রাবড়ি দেবীও বিহারে এক সময়ে এই পথেই হেঁটেছিলেন।' অরবিন্দের গ্রেফতারির পর সুনীতাকে তাঁর চেয়ারে বসেই প্রেস কনফারেন্স করতে ভাষণ দিতে দেখা যায়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর দাবি করেন করেন 'সুনীতাও রাবড়ি দেবীর পদ অনুসরণ করবেন।' অনুরাগের দাবির পর একই সুর হরদ্বীপের গলাতেও।
অনুরাগের কথায়, 'যখন লালু প্রসাদ যাদব পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে ধরা পড়েন, তখন প্রথম দিকে সব নির্দেশনা রাবড়ি দেবীকেই দিতে দেখা যেত। পরে ধীরে ধীরে সেই চেয়ার দখল করেন তিনি।' উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে দুর্নীতি মামলায় লালু জেলযাত্রার পর বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেন তাঁর স্ত্রী রাবড়ি দেবী।
কেজরিওয়ালের নিন্দা করে হরদ্বীপ সিং বলেন, 'আপ সুপ্রিমো নিজে মুখে এক সময় বলেছিলেন তিনি কখনও মদের দোকান খুলতে দেবেন না। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে তিনিই মদ কেলেঙ্কারিতে জড়িত। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকেও তদন্তে সহযোগিতা না করে নয়বার সমন এড়িয়ে গিয়েছেন। মানুষ যদি বিশৃঙ্খলায় জড়ায় তবে অবশ্যই সেসবের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।' 'আন্না আন্দোলন' চলাকালীন, অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছিলেন যে কোনও দুর্নীতি হবে না কিন্তু এখন তিনি সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দলের সাথে যুক্ত' সংযোজন হরদীপ সিং পুরীর।
উল্লেখ্য, ২১ মার্চ কেন্ত্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের হাতে গ্রেফতার হন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তাঁর স্ত্রী সুনীতা কেজরিওয়াল একজন প্রাক্তন IRS অফিসার। সিভিলস সার্ভিসে ২০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে সুনীতা কেজরিওয়ালের। তথ্য অনুযায়ী সুনীতা কেজরিওয়াল প্রাণীবিদ্যায় স্নাতকোত্তর। ১৯৯৩ ব্যাচের IRS অফিসার সুনীতার সঙ্গে ১৯৯৫ ব্যাচের IRS অফিসার অরবিন্দর প্রথম দেখা হয়েছিল ভোপালে। পরে সেই সাক্ষাৎ বিয়ের পরিণতি পায়। ২০০৬ সালে অরবিন্দ কেজরিওয়াল IRS পদ থেকে পদত্যাগ করলেও সুনীতা সিভিল সার্ভিসে থেকে যান। এরপর অরবিন্দ কেজরিওয়াল যখন সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন তখন তিনি দিল্লিতে আলাদা পরিচিতি পান। ২০১৬ সালে জুলাই মাসে সুনীতা কেজরিওয়ালও VRS নিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন লাল বাতির গাড়ি। সেই সময় নির্বাচনী প্রচারে তাঁর অতিরিক্ত ছুটি নেওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছিল প্রচুর। এসব কিছুর পর VRS-এর খবর প্রকাশ্যে আসে। VRS নেওয়ার আগে সুনীতা কেজরিওয়ালকে দিল্লির আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনাল (ITAT) আয়কর কমিশনার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। সেই বিভাগ থেকে পেনশন পান তিনি।