এই সময়, নয়াদিল্লি: বৃহস্পতিবারই দিল্লি হাইকোর্ট 'আয়কর দপ্তরের ধার্য জরিমানা পুনর্বিবেচনার' যে আপিল কংগ্রেস করেছিল তা খারিজ করে দিয়েছে। তার পরদিনই আয়কর দপ্তর এই শতাব্দী প্রাচীন দলকে ১৮২৩ কোটি ৮ লক্ষ টাকা জরিমানা জমা দেওয়ার নোটিস পাঠিয়েছে। তার পরেই কংগ্রেস অল আউট আক্রমণে নেমেছে। এই ঘটনাকে 'ট্যাক্স টেররিজ্ম' বা কর-সন্ত্রাস হিসেবে মন্তব্য করেছে দল। এই আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছেন খোদ রাহুল গান্ধী।দলের সদর দপ্তরে বসে কোনও রাখঢাক না করেই ইডি, সিবিআই-এর নাম করে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি। এজেন্সিগুলোর উদ্দেশে রাহুল বলেন, 'এই সরকারও কিন্তু একদিন বদলাবে। ইডি-সিবিআই নিজেদের কাজ করলে কিছু বলার ছিল না। তা তারা করছে না। আপনারা কিন্তু সাবধান হোন। যে দিন এই সরকারের গদি উল্টোবে, বর্তমান সরকারের কথায় বিরোধীদের প্রতি অন্যায় করলে কঠোর শাস্তির মুখে পড়বেন।' এত দিন বিরোধী নেতারা বারাবারই দেশে 'এজেন্সি-রাজ' কায়েমের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। নিশানা করেছেন মোদী-শাহ জুটিকে। কোনও দলই এজেন্সির কর্তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। রাহুল এ দিন সেই পর্দাটাই সরিয়ে দিলেন। তাঁর সঙ্গে এই সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন আরও দুই কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ ও অজয় মাকেন। তাঁদের বক্তব্য, যে কারণে কংগ্রেসকে এ দিন এই নোটিস দেওয়া হয়েছে, তা হলে এই একই কারণে বিজেপিকেও সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বেশি অঙ্কের জরিমানা করা উচিত। কিন্তু আয়কর দপ্তর তা করছে না।
রাহুল শুধু এটুকু বলেই থামেননি। তিনি এ দিন তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট দেন। সেখানে লিখেছেন, 'যারা গণতন্ত্রের বস্ত্রহরণ করছে, সরকার পরিবর্তন হলে তাদের বিরুদ্ধে নিশ্চিত ভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই ব্যবস্থা এমনই হবে যে ভবিষ্যতে এই সব করার সাহস আর কেউ পাবে না। এটা আমার গ্যারান্টি।' ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ মনে করছে, ইডি-সিবিআইকে যেমন তিনি এ দিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তেমনই এই পোস্টে ইঙ্গিত করেছেন মোদী সরকারকে। বার্তাও স্পষ্ট, এজেন্সিকে ব্যবহার করে যাঁরা গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে দিচ্ছেন না, তার সম্মানহানি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সময় এলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁদের মতে, 'এখানে গ্যারান্টি শব্দের ব্যবহার তাৎপর্যপূর্ণ। এ বারের লোকসভায় বিজেপির প্রচার-স্লোগান 'মোদী কি গ্যারান্টি'। তিনি সেই রেশ টেনেই শাস্তির গ্যারান্টি দিয়েছেন।'
লোকসভা নির্বাচনের আগে পুরোপুরি রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে কংগ্রেসকে বারংবার নিশানা করা হচ্ছে, তাদের ভোট প্রার্থীদের বিপাকে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে, এই অভিযোগ করে রমেশ বলেন, 'লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির তরফে কর-সন্ত্রাস বা ট্যাক্স টেররিজ্ম শুরু করা হয়েছে৷ আসলে ওরা বিরোধী দলগুলিকে আর্থিক দিক থেকে পঙ্গু করে দিতে চাইছে৷ তবে, এই নোটিসের জেরে আমাদের মনোবলে চিড় ধরবে না৷ আমাদের বিজেপি বিরোধিতায় কোনও ছেদ পড়বে না। আসন্ন নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করব৷' এই প্রসঙ্গে জয়রাম রমেশের কটাক্ষ, 'একের পর এক নোটিস আমাদের পাঠানো হচ্ছে, দাবি করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা জরিমানার৷ আমরা অপেক্ষা করছি কবে মহাত্মা গান্ধীজির সময়ে কংগ্রেস দলের কোষাধ্যক্ষ যমুনা লাল বাজাজের জরিমানার নোটিস আমাদের হাতে ধরানো হবে!' এই মর্মেই অজয় মাকেনের সংযোজন, 'বিজেপি নিজেই আয়কর আইন ভঙ্গ করেছে৷ তাদের কাছে ৪৬০০ কোটি টাকার আয়কর নোটিস পাঠানো উচিত৷' নির্বাচনী বন্ডের প্রসঙ্গও ফের তুলেছেন রমেশ। তাঁর দাবি, বিজেপি ৮২০০ কোটি টাকা পেয়েছে বন্ডের মাধ্যমে৷ আর এই কাজে ব্যবহার করা হয়েছে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে৷
মাকেন দাবি করেন, এই ধরনের আয়কর নোটিস পাঠানো হয়েছে বিরোধী শিবিরের আরও কয়েকটি দলকে৷ এর বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদ চাইছে কংগ্রেস।' সূত্রের খবর, সিপিআই-কেও ১১ কোটি টাকার নোটিস পাঠিয়েছে আয়কর দপ্তর। তবে এর সত্যতা যাচাই করেনি 'এই সময়।' মাকেন বলেন, 'এই কর-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে মামলা করব আমরা। তাঁর কথায়, 'আমাদের আশা সুপ্রিম কোর্ট গণতন্ত্র রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে।'
এর পাশাপাশি বিরোধী শিবিরের তরফে সম্মিলিত প্রতিবাদ জানানোর কথাও ভাবা হয়েছে৷ এর জন্য প্রয়োজনে সম্মিলিত ভাবে রাস্তায় নামা হবে বলেও এ দিন জানানো হয়েছে কংগ্রেসের তরফে।
যদিও আয়কর বিভাগ সূত্রে দাবি, কংগ্রেসের আয় ব্যয়ের যাবতীয় তথ্য পর্যালোচনা করার পরেই তাদের জরিমানার নোটিস পাঠানো হয়েছে৷ বকেয়া আয়কর, তার সুদ ও জরিমানার টাকা যোগ করলে এই অঙ্কের জরিমানাই হয়। আইটি আধিকারিকের ব্যাখ্যা, আয়কর আইনের ১৩(১) ধারা লঙ্ঘন করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়েছে।