Sanjeev Sanyal : 'মদ-সিগারেটে ডুবে অধঃপতন বাঙালির!' মোদীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টার মন্তব্যে বিতর্ক, কে এই সঞ্জীব সান্যাল?
এই সময় | ৩০ মার্চ ২০২৪
'বাঙালি কেবল মদ-সিগারেটে ডুবে থাকে, আর পাড়ার ঠেকে গিয়ে নিজেকে বড় আঁতেল প্রমাণ করার চেষ্টা করে। আড্ডা মারা, নেতা হওয়া বা নিজেকে বুদ্ধিজীবী ভাবাটাই বাঙালির একমাত্র সাধ।' সম্প্রতি সঞ্জীব সান্যালের করা এই মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। নিজে বাঙালি হয়ে নরেন্দ্র মোদীর এই অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কী ভাবে বাঙালি জাতিকে এতটা অপমান করতে পারলেন? প্রশ্ন তুলে কার্যত তুলোধোনা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই সঞ্জীব সান্যালের পরিচয় জানেন?কে এই সঞ্জীব সান্যাল?অর্থনীতিবিদ, ইতিহাসবিদ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এবং সর্বোপরি একজন বাঙালি। অথচ স্বজাতি সম্পর্কে এতটা বিদ্বেষ কেন সঞ্জীব সান্যালের? ২০১৭ সালে শুরু হওয়া ভারতের অর্থনৈতিক সমাক্ষায় ছয়টি সংস্করণ প্রস্তুত করেছেন এই সঞ্জীব সান্যাল। ভারতের ইতিহাস নিয়ে তাঁর লেখা একাধিক বই রয়েছে বাজারে।
পড়াশোনাসঞ্জীব সান্যালের জন্ম কলকাতায়। পড়াশোনা করেছেন সেন্ট জেভিয়ার্স এবং সেন্ট জেমস স্কুলে। এরপর চলে যান নয়াদিল্লিতে। সেখানে শ্রীরাম কলেজ অফ কমার্স থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক পাশ করেন। এরপর চলে যান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জন্স কলেজে। ১৯৯২ সালে সেখান থেকেই দর্শন, রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯৯৪ সালে স্নতকোত্তর পাশ করেন সঞ্জীব সান্যাল।
কর্মজীবনপড়াশোনা চলাকালীনই অর্থনীতি নিয়ে হাতেকলমে কাজ শুরু করেন সঞ্জীব। ২০০৪ সালে তিনি অর্থনীতিবিদ পবন সুখদেবের সঙ্গো যৌথ উদ্যোগে দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্য়ে গ্রিন ইন্ডিয়ান ট্রাস্ট তৈরি করেন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত ডয়েচ ব্যাঙ্কে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে কাজ করেন। এরপর মনোনীবেশ করেন গবেষণায়। প্রকাশ পায় তাঁর প্রথম বই 'ল্যান্ড অফ দ্য সেভেন রিভার্স'। ২০১৭ সালে সঞ্জীব সান্যাল ভারতীয় অর্থ মন্ত্রকের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত সরকারের সচিব পদে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন। সঞ্জীব সান্যাল বরাবরই নেহরুর দর্শনের কট্টর সমালোচক। বরং তাঁর মতে ১৯৯১ সালের উদারীকরণের সিদ্ধান্ত ভারতের রেনেসাঁ। ভারতের ইতিহাসকে ঔপনিবেশিক, নেহরুপন্থী এবং মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখে বিচার করা হয়েছে বলে মত তাঁর। তাই সঠিক বিচার করে পুনরায় ইতিহাস লেখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন তিনি।
বাংলা নিয়ে সঞ্জীব সান্যালের মতামতএর আগে একটি সাক্ষাৎকারে সঞ্জীব সান্যালকে বাংলায় ৩৪ বছরের বাম শাসনকাল নিয়েও তীব্র সমালোচনা করতে শোনা যায়। তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এবং বাম সরকার কলকাতা তথা বাংলার অর্থনীতি, বুদ্ধিজীবী মহল এবং সাংস্কৃতি ক্ষেত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সেই ধাক্কা কলকাতা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তিনি একটি পডকাস্ট অনুষ্ঠানে বলেন, 'জ্যোতি বসুর খাতায় মরিচঝাঁপির গণহত্যার দাগ লেগে রয়েছে। তিনি ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ করতে শুরু করেছিলেন। আমার মনে আছে, ছেলেবেলায় আমি লণ্ঠন-মোমবাতি জ্বালিয়ে পড়াশোনা করতাম। আমি দরিদ্র পরিবারে বড় হইনি. আসলে তখন তো বিদ্যুৎই থাকত না।' সমাজতন্ত্র এবং সাম্যবাদের প্রতিও তীব্র ঘৃণা রয়েছে সঞ্জীব সান্যালের। তাঁর মতে যারা মৃণাল সেনের সিনেমা দেখে সমাজকে ভাবে তাঁদের সমাজের বঞ্চনা অভাব নিয়ে অভিযোগ করা উচিত নয়। সমস্ত শিল্পপতিরা কলকাতা ছেড়ে চলে যাচ্ছে, অথচ এই শহর আর একটা সত্যজিৎ রায়, স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কিংবা অরবিন্দ ঘোষ তৈরি করতে পারছে না। এমনটাই মত মোদীর আর্থি উপদেষ্টার। তাঁর এই ধরণের মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে তিনি স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, সমাজতন্ত্র এবং সাম্যবাদই গেরুয়া রাজনীতির মূল শত্রু।