• পঞ্চায়েতে জয়ের পর আরও বড় পরীক্ষা, ঝাড়গ্রামে সোনামণিতেই ভরসা বামেদের
    এই সময় | ৩০ মার্চ ২০২৪
  • ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রে সোনামণি টুডুকে প্রার্থী করেছে বামফ্রন্ট। সোনামণির হাত ধরেই কি জঙ্গলমহলের লালদুর্গ ফিরে পাবে বামেরা? এর আগে গ্রামসভার ভোট বা পঞ্চায়েত নির্বাচন, যতবারই লড়াই করেছেন ততবারই জয়যুক্ত হয়েছেন সোনামণি। এবারও কি সেই রেকর্ড ধরে রাখতে পারবেন ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম-এর প্রার্থী সোনামণি।বাম আমলে লালদুর্গ হিসেবেই পরিচিত ছিল জঙ্গলমহল। গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে জেলা পরিষদ, বিধানসভা থেকে লোকসভা সবই ছিল দখলে তাদের। ২০১১-তে রাজ্যে পালাবদলের পর ক্রমশই শক্তি হারাতে থাকে বামেরা । ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে সিপিএমের প্রার্থী পুলিনবিহারী বাস্কেকে ব্যাপক ভোটে হারিয়ে জয়লাভ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী উমা সরেন। তৃণমূল রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী বীরবাহা সরেন টুডুকে সামান্য কিছু ভোটে হারিয়ে জয়যুক্ত হন বিজেপির প্রার্থী কুনার হেমব্রম। কিন্তু ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচন ও ২০২৩ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল ভালো ফল করে। তার পাশাপাশি জঙ্গলমহলের ভোট বাক্সে বামেদের ভোটও বৃদ্ধি পায়। এমনকী পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ী হন সোনমণি টুডুও। তাই সোনামণিকে প্রার্থী করার পরেই জঙ্গলমহলের লাল দুর্গ পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে বামেরা।

    বরাবরই মানুষের পাশে সোনামণিপড়াশোনার সময় থেকেই মানুষের সমস্যায় পাশে দাঁড়ানোর অভ্যাস সোনামণির। পড়াশোনার পাশাপাশি একটি রেডিও সংস্থায় কাজের কারণে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনেছেন। জানার চেষ্টা করেছেন তাদের সমস্যার কথা। আবার স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই সমস্যার সমাধানও করেছেন । ২৯ বছর বয়সী সোনামণি টুডু পুরুলিয়া জেলার বান্দোয়ান থানার অন্তর্গত কুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনপানি গ্রামের বাসিন্দা। ঝাড়খন্ড রাজ্যের জামশেদপুর ব্লকের দলদলি গ্রাম পঞ্চায়েতের কডিহা গ্রামে তাঁর জন্ম। সেখানেই পড়াশোনা করে বেড়ে ওঠা। ঘাটশিলা বিডিএসএল মহিলা কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর জামশেদপুর কো-অপারেটিভ কলেজ থেকে ২০১৬ সালে সাইকোজলিতে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

    সোনামণি টুডু

    স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে কাজ২০১১ সাল থেকেই রেডিও সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সোনামণি। কলেজ জীবনে ছাত্র সংগঠন করেছেন। ২০১৩ সালে প্রথম গ্রামসভার ভোটে ভোটারদের পূর্ণ সমর্থনে নির্বাচিত হয়ে দলদলি গ্রাম পঞ্চায়েতের জল প্রকল্প ও স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে কাজ করার সুযোগ পান। ২০১৫ সালে বান্দোয়ানের বাসিন্দা মণিশ টুডুর শুধু সঙ্গে বিবাহ হয় সোনামণির। মণিশ টুডু কুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের একজন চুক্তিভিত্তিক কর্মী। তাঁদের একটি সন্তান রয়েছে। ২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে কুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএম-এর প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়াই করেন। ভালো ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করে সোনামণি। তবে এবার সোনামণির লড়াইটা আরও বড় ময়দান।

    নাম ঘোষণার পরেই প্রচারেশুক্রবার সন্ধ্যায় নাম ঘোষণার পরেই প্রচারের ময়দানে নেমে পড়লেন সোনামণি। শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান, এলাকার মানুষজনকে স্বনির্ভরতা সহ বিভিন্ন বিষয়কে সামনে রেখে প্রচারে নামেন তিনি। এই বিষয়ে সোনামণি বলেন, 'রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল যেভাবে দুর্নীতি করছে মানুষ তা বুঝে গিয়েছে। অপরদিকে কেন্দ্রের শাসকদল মন্দির ও মসজিদ নিয়ে রাজনীতি করছে, তাও মানুষ বুঝে গেছে। শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কাজ পাচ্ছেন না। শাসক দলের নেতা, মন্ত্রীর ভাইপো, ভাইজি ,ভাগনা সহ পরিবারের সদস্যরা চাকরি পাচ্ছেন আর যোগ্য ব্যক্তিরা বঞ্চিত হচ্ছেন। আমার লড়াই শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের জন্য, কর্মসংস্থান তৈরি করা।'

    সোনামণি টুডুর হাত ধরে ঝাড়গ্রামের লালদুর্গ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব বামেদের?হ্যাঁনাজানি না

    প্রধান প্রতিপক্ষ কারা?এদিকে ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল, এইউসিআই, আইএসএফ প্রার্থী ঘোষণা করেছে। কিন্তু বিজেপি এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি। ভোটের ময়দানে কাকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছেন সোনামণি? তাঁর সাফ উত্তর, 'গতকাল আমার নাম ঘোষণা করা হয়েছে, আজ থেকে প্রচারে নামলাম। পুরো লোকসভা কেন্দ্রটি ঘুরে দেখি, তারপরেই বলতে পারব। কিন্তু মানুষ আমাদেরকেই চাইছে। রাজ্য সরকারের দুর্নীতি সকলের সামনেই প্রমাণিত হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে, চাকরির ক্ষেত্রে, সমস্ত ক্ষেত্রেই এদের দুর্নীতি রয়েছে। যার ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যুবসমাজ। শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের কর্মস্থানের দাবিতে আমি লড়াই করব।'

    জিতলে প্রথমেই গুরুত্ব কর্মসংস্থানেজিতলে প্রথম কোন সমস্যা সমাধানের জন্য সচেষ্ট হবেন সেটিও স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেন সোনামণি। তিনি বলেন, 'আমার বাড়ি রাস্তার ধারেই। আমি প্রতিদিনই দেখি ৪০৭ লরিতে লেবার লোড করে জামশেদপুরে নিয়ে যাচ্ছে কাজের জন্য। এখানকার বহু যুবক যুবতীরা দক্ষিণ ভারতে কাজের জন্য গিয়েছেন। এলাকা ছেড়ে পরিবারকে ছেড়ে কেন বাইরে যেতে হবে? কারণ এখানে কাজ নেই। সেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাটাই আমি প্রথমে করব। মানুষকে স্বনির্ভর করব। মানষ স্বনির্ভর হলেই নিজের মতো স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারবে। এই সরকারি অনুদানের উপর তাদের নির্ভর করতে হবে না।'

    জয় নিয়ে আশাবাদীনিজের জয় নিয়েও ১০০ শতাংশ আশাবাদী সোনামণি। তিনি বলেন, 'তৃণমূল যেভাবে দুর্নীতি করছে এবং বিজেপি যেভাবে ধর্মের রাজনীতি করছে মানুষ তা দেখছে। মানুষের কর্মসংস্থান , শিক্ষা এবং খাদ্যের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তাই কর্মসংস্থান শিক্ষা ও খাদ্যের জন্য মানুষ আমাদের পাশেই থাকবে। ভোটের ফলাফল কী হবে আমি জানি না। কিন্তু এটা বলতে পারি মানুষ আমাদেরকে সমর্থন করবে। জয়ের ব্যাপারে আমি ১০০ শতাংশ আশাবাদী।'
  • Link to this news (এই সময়)