• বাঁশরিয়া ট্যাক্সিচালক... গেঁয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়
    এই সময় | ৩১ মার্চ ২০২৪
  • নো হর্ন প্লিজ়। না। হর্ন বাজিয়ে, মানুষকে অতিষ্ঠ করে তিনি যাত্রীদের ডাকেন না। জন-অরণ্যের কোলাহল, যানবাহনের কান ঝালাপালা করে দেওয়া হর্নের দাপট ঠেলে আপনার কানে ভেসে আসতেই পারে সেই মেঠো হাওয়ায় মন উদাসী বাঁশির সুর। হ্যাঁ, ব্যস্ত কলকাতার বুকেই। হলদে ট্যাক্সিতে বসে বাঁশি বাজিয়ে যাত্রীদের ডাকেন চালক শিবু রায়।হাওড়া বা শিয়ালদহ স্টেশন, শ্যামবাজার, ধর্মতলা, গড়িয়াহাট বা গল্ফগ্রিন— হন্যে হয়ে আপনি যখন ট্যাক্সি খুঁজছেন, তখনই আপনার কানে আসতে পারে বাঁশির সুর। তা অনুসরণ করলেই কয়েক গজের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে বাঁশরিয়া শিবুকে। চালকের আসনে বসে নিজের খেয়ালেই বাঁশি বাজিয়ে চলেছেন তিনি। ট্যাক্সিতে উঠলে অবশ্য বাঁশি বন্ধ, ইঞ্জিন স্টার্ট।

    বছর ষাটের শিবু আদতে বিহারের মধুবনির মানুষ। এক জ্ঞাতি দাদার হাত ধরে কলকাতায় আসেন তেরো–চোদ্দ বছর বয়সে। সেই দাদাই তাঁকে একদিন মেলা থেকে কিনে দিয়ে ছিলেন একটি বাঁশি। সেই থেকে বাঁশি বাজানো শুরু। শিবুর কথায়, ‘আমি এখন থাকি মাদুরদহে। ওখানেই আমার বড় হয়ে ওঠা। কারও কাছে বাঁশি শিখিনি। ছোট থেকেই মহাদেব আর কৃষ্ণের ভক্ত। আমাদের পাড়ায় একটা মন্দির ছিল। দাদা বাঁশিটা কিনে দেওয়ার পর থেকে ওই মন্দিরে বসেই বাঁশি বাজাতাম। বাজাতে বাজাতেই শিখে গেলাম একদিন। সেই দিনটা আমার মনে নেই। প্রথম যে দিন বাঁশি থেকে সুর বেরিয়েছিল খুব আনন্দ পেয়েছিলাম।’

    তারপর শিবু একসময়ে চারচাকা চালানো শিখলেন। তিনি জানান, কালো-হলুদ ট্যাক্সি চালানো দিয়ে তাঁর হাতেখড়ি। এদিন বিয়েও হলো। ছয় মেয়ে আর এক ছেলে মিলিয়ে মোট সাত সন্তানের বাবা তিনি। সবার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলে আশানন্দ এই শহরেই ক্যাব চালক।

    শিবুর সতীর্থ ট্যাক্সিচালক সুরেশ দাস বলেন, ‘ওঁকে অনেকেই চেনে। শহরের যেখানে উনি গাড়ি থামাবেন, সেখানে বসেই বাঁশি বাজাতে শুরু করবেন। ওঁর বাঁশির আওয়াজ শুনে প্যাসেঞ্জারও চলে আসেন।’ তিনি জানান, ট্যাক্সি থামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও শিবু কারও সঙ্গে খুব একটা কথা বলেন না। আপন মনে বাঁশি বাজাতে থাকেন। ওটাই যে নেশা!

    বাইপাস লাগোয়া কালিকাপুর ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকেই দিন শুরু হয় শিবুর। এরপরে ট্যাক্সি নিয়ে শহরে চক্কর দিতে থাকেন। আর অবসরে বাঁশি। সারা দিন প্রবল খাটুনির পরেও রাতে বাড়ি ফিরে পাড়ার মন্দিরে বাঁশি বাজান শিবু। তাঁর কথায়, ‘যে দিন বাঁশিটা হাতে পেয়েছি, তার পরে একদিনের জন্য বাঁশিটা হাতছাড়া করিনি। রোজ বাজাই। বাঁশির সুর শুনেই প্যাসেঞ্জার আমার গাড়ির কাছে চলে আসেন।’

    সকাল থেকে রাত, ব্যস্ত তিলোত্তমার বুকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক বাঁশরিয়া ট্যক্সিচালক। এ ভাবেই...
  • Link to this news (এই সময়)