Unemployment Rate : বিদ্যালাভে লোকসান, নাহি অর্থ নাহি মান! উচ্চশিক্ষিত বেকার বাড়ছে ভারতে
এই সময় | ৩১ মার্চ ২০২৪
এই সময়: ছোটবেলায় বাড়ির বড়দের থেকে আপ্তবাক্যটা অনেকেই শুনেছেন, 'পড়াশোনা করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে'। এখানে গাড়িঘোড়া চড়ার প্রেক্ষিত, ছোটবেলায় মন দিয়ে পড়াশোনা করলে, এমন দক্ষতা অর্জিত হবে, যা বড় হয়ে তাঁকে উপার্জনের পথ করে দেবে। যেখান থেকে অর্থের সংস্থান হয়ে পদব্রজে না থেকে গাড়ি চড়ার বাহুল্য দেখানো যাবে।এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই 'হিতোপদেশ' রাজা ধবলচন্দ্রের রাজত্বকালে মহান হিন্দু পণ্ডিত নারায়ণ পণ্ডিতের লেখা হিতোপদেশ না হলেও, চিরকালীন ভাবে সমকালীন বলে ধরা হয়ে থাকে আমজনতার কাছে। পড়াশোনা-বিদ্যা মানুষকে যে জ্ঞান, যে দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে, তার নিক্তিতেই তুল্যমূল্য বিচার করে পেশাদার দুনিয়ায় প্রবেশের পথ খুঁজে পাওয়া যায়।
কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) এবং ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (আইআইএইচডি) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত 'দ্য ইন্ডিয়ান এমপ্লয়মেন্ট রিপোর্ট ২০২৪' শীর্ষক রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পরেই বেজায় গোল বেঁধেছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, ২০০০ সাল থেকে পরের ২২ বছরে ভারতে পড়াশোনা করা শিক্ষিত বেকারের গ্রাফ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ২০০০ সালে যেখানে সেকেন্ডারি বা তদুপরি পাশ করা যুবক-যুবতীর ৫৪.২% 'বেকার' ছিল, সেখানে পরের ২২ বছরে সংখ্যাটা ২১.২১% বেড়ে ৬৫.৭% পৌঁছেছে। লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, একই সময়ের মধ্যে দেশে সার্বিক ভাবে 'বেকার' যুবার সংখ্যা কিন্তু ৬.৪৩% কমে ৮২.৯ শতাংশে নেমে এসেছে, ২০০০ সালে যা ছিল ৮৮.৬%।
মনে পড়ে যেতে বাধ্য হীরক রাজার দেশে ছবিতে সভাকবি-স্বভাবকবির বচন, 'বিদ্যালাভে লোকসান, নাই অর্থ নাই মান' তাহলে কি শুধুই ছবির সংলাপ নয়?
সাম্প্রতিক আইএলও পরিসংখ্যান কিন্তু সে'দিকেই ইঙ্গিত করছে। রিপোর্টে প্রকাশিত ২০২২-এর হিসেব বলছে, ভারতে নিরক্ষরদের (লিখতে বা পড়তে পারেন না) মধ্যে বেকারত্বের পরিমাণ যেখানে ৩.৪% মাত্র, সেখানে সেকেন্ডারি এডুকেশান বা তার বেশি শিক্ষায় শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের পরিমাণ নিরক্ষরদের তুলনায় ৬ গুণ বেশি (১৮.৪%)। সব থেকে করুণ পরিস্থিতি স্নাতক এবং তদূর্ধ্ব শিক্ষিতদের। চাকরি পাওয়ায় নিরক্ষরদের থেকে তাঁরা ৯ গুণ পিছিয়ে। এই শ্রেণিতে থাকা যুবক-যুবতীদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২৯.১%। একই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, যুবকদের (২৬.৪%) থেকে স্নাতক এবং তদূর্ধ্ব শিক্ষিত যুবতীরা (৩৪.৫%) চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কিন্তু অনেকটাই পিছিয়ে।
তবে আশার আলো রয়েছে। সমীক্ষকদলের তরফে জানানো হয়েছে, ২০০০ সালে যেখানে 'শিক্ষিত বেকার' যুবার সংখ্যা ছিল ২৩.৯%, সেখানে ২০১৯ সালে তা বেড়ে ৩০.৮% পৌঁছে গিয়েছিল। যদিও পরের ৩ বছরে তা কমে ১৮.৪% হয়েছে।
কেন্দ্রের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরণ চলতি সপ্তাহেই এই রিপোর্ট প্রকাশ করেন। যা প্রকাশ্যে আসার পরেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে কেন্দ্রকে এক হাত নিয়েছেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তিনি বলেন, 'মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা জানিয়েছেন কেন্দ্র বেকারত্বের সমস্যা দূর করতে পারবে না। যদি এটি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কথা হয়ে থাকে তা হলে আমাদের দৃঢ় ভাবে বিজেপিকে বিদায় নেওয়ার কথা বলতে হবে।' কেন্দ্রের শিক্ষানীতির অক্ষমতাকে কাঠগড়ায় তুলেছেন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনও।
যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, রিপোর্ট-এর সংখ্যা থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, ২০০০ সালের তুলনায় শতাংশের হিসেবে ছবিটা উন্নত হয়েছে। পাশাপাশি দেশে অসংগঠিত ক্ষেত্রে বহু 'শিক্ষিত' যুবা চাকরি করছেন, যার তথ্য আইএলও'র কাছে নেই। নিজস্ব ব্যবসা বা কাজ এবং অনিয়মিত কাজ এখনও দেশের যুব সমাজের একটা বড় অংশের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাচ্ছে। ফলে ছবিটা যতটা খারাপ বলে দেখানোর চেষ্টা করছেন বিরোধীরা, সেটা ততটা খারাপ নয়। প্রশ্নটা হচ্ছে, গ্লাসটা অর্ধেক খালি নাকি অর্ধেক ভর্তি, দেখার আঙ্গিক কোনটা হবে।