INDIA Mega Rally : রাজধানীর পথে আজ প্রতিবাদে ইন্ডিয়া, কেজরির সমর্থনে কোন কোন হেভিওয়েট?
এই সময় | ৩১ মার্চ ২০২৪
এই সময়, নয়াদিল্লি: আবগারি দুর্নীতি মামলায় ফের আম আদমি পার্টির (আপ) এক নেতা তথা দিল্লির মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠাল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। দিল্লির স্বরাষ্ট্র, পরিবহণ ও আইনমন্ত্রী কৈলাস গেহলতকে শনিবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠান তদন্তকারীরা। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর কৈলাসের দাবি, 'যা জানি বলেছি। ইডি আবার সমন পাঠালে ফের আসব।'আবগারি দুর্নীতি মামলায় আগেই আপের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে ইডি। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালকেও গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফলে কৈলাসের সমন নিয়ে জল্পনা বাড়ছিল। এর মধ্যেই শনিবার দিল্লিতে কেজরিওয়ালের বাসভবনে এসে তাঁর স্ত্রী সুনীতার সঙ্গে দেখা করেছেন ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেনের স্ত্রী কল্পনা। বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্তকারী সংস্থাকে কাজে লাগানোর বিজেপি প্রবণতার বিরুদ্ধে একযোগে লড়াই করার অঙ্গীকার করেছেন তাঁরা। সেই লড়াইয়ে সামিল বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া'ও। আজ, রবিবার দিল্লির রামলীলা ময়দানে কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে সমাবেশ করবে 'ইন্ডিয়া' শিবির। তাতে সামিল হবেন দিল্লির সাধারণ মানুষও।
দিল্লির আবগারি মামলায় প্রায় ৬০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে দাবি ইডির। তাদের আরও দাবি, 'সাউথ লবি'র কাছ থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে তাদের বেআইনি ভাবে আবগারি লাইসেন্স পাইয়ে দিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। ঘুষের সেই টাকা আপ গোয়ার নির্বাচনে ব্যবহার করা হয়েছে। এই আবগারি নীতি তৈরি এবং কার্যকর করার ক্ষেত্রে যে মন্ত্রিগোষ্ঠীর প্রধান ভূমিকা ছিল, তার অন্যতম সদস্য ছিলেন কৈলাস। ইডি-র দ্বিতীয় সমনে শনিবার হাজিরা দেন তিনি। তাঁর দাবি, তিনি গোয়ার নির্বাচনী প্রচারের অংশ ছিলেন না। ফলে আবগারি দুর্নীতির টাকা সেখানে ব্যবহার হয়েছে কি না, তিনি জানেন না।
শুধু আবগারি নীতি নয়, দিল্লির সিভিল লাইন্সে কৈলাসের নামে নির্ধারিত সরকারি বাংলোয় আপের বিজয় নায়ার থাকতেন বলেও অভিযোগ। আপের কমিউনিকেশন ইনচার্জ বিজয় মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের কাছাকাছি থাকবেন বলে কৈলাসের বাংলো তাঁকে দেওয়া হয়েছিল এবং এটাকে 'ক্রিমিনাল ব্রিচ অফ ট্রাস্ট' বলে উল্লেখ করেছে ইডি। কৈলাস এদিন বলেন, 'আমার স্ত্রী এবং সন্তানরা কখনওই বসন্ত কুঞ্জের বাসভবন ছেড়ে আসতে চাননি। তাই আমি সিভিল লাইন্সের সরকারি বাংলোয় কখনও থাকিনি। আমার জন্য নির্ধারিত বাংলোয় বিজয় নায়ার থাকতেন কি না, আমি জানি না।' তবে একের পর এক মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি আপের উপর চাপ বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
এই পরিস্থিতিতে গোটা বিরোধী শিবিরকে পাশে পাচ্ছে আপ। সেটা আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল সুনীতা কেজরিওয়াল এবং কল্পনা সরেনের সাক্ষাতে। জেএমএম নেতা হেমন্ত সরেনকে জমি কেলেঙ্কারি মামলায় গত জানুয়ারিতে গ্রেপ্তার করে ইডি। নিজের বিশ্বাসভাজন চম্পাই সরেনকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসিয়ে গিয়েছিলেন হেমন্ত। এদিকে, দিল্লিতে কেজরিওয়াল এখনও ইডির লকআপ থেকে দিল্লির সরকার চালালেও তাঁর স্ত্রী সুনীতাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসাতে পারেন বলে জল্পনা তুঙ্গে। এই পরিস্থিতিতে সুনীতা-কল্পনার সাক্ষাতের ভিডিয়ো পোস্ট করে আপের টুইট, 'অরবিন্দ কেজরিওয়ালজি এবং হেমন্ত সরেনজিকে স্বৈরাচারী সরকার গ্রেপ্তার করালেও এই দুই মহিলা নিজেদের রাজ্যের মানুষের জন্য লড়ে যাবেন।' কল্পনার কথায়, 'আমার স্বামী হেমন্ত সরেনজিকে গ্রেপ্তারির পর কেজরিওয়ালজিকে গ্রেপ্তার করা হলো। পুরো ঝাড়খণ্ড সুনীতা কেজরিওয়ালজির পাশে রয়েছে। আমরা নিজেদের যন্ত্রণা ভাগ করে নিয়েছি। ঠিক করেছি একসঙ্গে এই লড়াই এগিয়ে নিয়ে যাব।' শোনা যাচ্ছে আজ, রবিবার দিল্লির রামলীলা ময়দানে 'ইন্ডিয়া' জোটের প্রতিবাদ সমাবেশেও থাকবেন কল্পনা।
রামলীলা ময়দানে আয়োজিত এই র্যালির নাম রাখা হয়েছে 'গণতন্ত্র বাঁচাও সমাবেশ'৷ অংশ নিতে চলেছে 'ইন্ডিয়া' শিবিরের ২৮টি দল, যাদের স্লোগান, 'স্বৈরাচার হটাও, গণতন্ত্র বাঁচাও'। এই প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত থাকার কথা মল্লিকার্জুন খাড়গে, রাহুল গান্ধী (কংগ্রেস), ডেরেক ও ব্রায়েন, সাগরিকা ঘোষ (তৃণমূল), শরদ পাওয়ার (এনসিপি), উদ্ধব ঠাকরে, আদিত্য ঠাকরে (শিবসেনা ইউবিটি), অখিলেশ যাদব (সপা), তেজস্বী যাদব (আরজেডি), টি. শিবা (ডিএমকে), ফারুক আবদুল্লাহ (ন্যাশনাল কংগ্রেস), চম্পাই সরেন, কল্পনা সরেন (জেএমএম), সীতারাম ইয়েচুরি (সিপিএম), ডি রাজা (সিপিআই), দীপঙ্কর ভট্টাচার্য (সিপিআই-এমএল) এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের জি দেবরাজনের। কংগ্রেসের জয়রাম রমেশের বক্তব্য, 'এই সমাবেশ কোনও একজন ব্যক্তির জন্য নয়। ৪-৫টি বিষয়ে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। হেমন্ত সরেন, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মতো যাঁদের টার্গেট করা হয়েছে, তাঁদের পাশে থাকতেই এই সমাবেশ। এটাকে গণতন্ত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত, দলীয় সমাবেশ হিসেবে নয়।' এর পাশাপাশি মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, সামাজিক বৈষম্যের মতো বিষয়ও আজকের সভায় উঠে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে বিজেপি নেতা অমিত মালব্যের কটাক্ষ, 'কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারির পর আশপাশে আপের কোনও নেতাকে দেখা যায়নি। শুধু সৌরভ ভরদ্বাজ এবং আতিশি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। রাঘব চাড্ডা চোখের অপারেশনের কথা বলে লন্ডনে রয়েছেন, অথচ তাঁর স্ত্রী পরিনীতি চোপড়া দেশে ফিরে এসেছেন। যদি রাঘবের সত্যিই অপারেশন হতো, তাহলে তো পরিনীতি স্বামীর পাশে থাকতেন! শোনা যাচ্ছে স্বাতী মালিওয়ালও (আপের রাজ্যসভা সাংসদ) বিদেশে। তাহলে কি সকলে ডুবন্ত জাহাজ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন?'