কালীঘাট মন্দিরের চূড়ায় তিন স্বর্ণদণ্ড উন্মোচিত, ব্যবহৃত কত সোনা?
প্রতিদিন | ৩১ মার্চ ২০২৪
স্টাফ রিপোর্টার: গুঞ্জন ছিল, আসবে আসবে। অবশেষে শনিবার সে মুখ দেখাল।
চৈত্রের প্রখর রোদে ঝলমলিয়ে উঠল কালীঘাট মন্দিরের (Kalighat Temple) সোনার চূড়া। একটা দুটো নয়। নিখাদ ২৪ ক্যারেট গোল্ড দিয়ে তৈরি তিন তিনটে সোনার চূড়া দণ্ডে আলো পড়ে চোখ ধাঁধিয়ে দিল ভক্তদের। কালীঘাট মন্দিরের সংস্কারের এক অঙ্গ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করল নতুন এই স্বর্ণ মুকুট।
২০১৯ সালের কথা।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কালীঘাট মন্দিরের সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয় কলকাতা পুরসভাকে। ২০২৩-এর জুন মাসে সামান্য রদবদল। ঠিক হয় মন্দিরের অভ্যন্তরের সংস্কার করবে রিলায়েন্স গোষ্ঠী। বহিরঙ্গের সংস্কার করবে কলকাতা পুরসভা। সেইমতোই এগোচ্ছে কাজ। মন্দির কমিটি সূত্রে খবর, মন্দিরের অন্দরসজ্জার জন্য ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় করছে রিলায়েন্স গোষ্ঠী। সে টাকা থেকেই নির্মাণ করা হয়েছে দুশো বছরেরও বেশি পুরনো মন্দিরের সোনার চূড়া। ধর্মের বিচারে কালীঘাটের স্থান অসমের কামাখ্যা মন্দিরের ঠিক পরেই। ৫১ সতীপীঠের মধ্যে কামাখ্যা মন্দিরের চূড়া সোনা দিয়ে বাঁধানো হয়েছে ২০২০ সালে। এবার কলকাতার কালীঘাটও ঢুকে পড়ল সেই তালিকায়।
শাস্ত্র অনুযায়ী, মহাকালী দেবীর তামসী রূপ। অনেকের মতে, কালীঘাটের দেবী মায়ের ভয়ংকর রূপের শ্রেষ্ঠ নিদর্শনগুলির অন্যতম। এই কালীঘাটের মন্দিরের চুড়ো গত শতাব্দী ধরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কারণ? মন্দির কমিটির লোকেদের বক্তব্য, এই কালীমন্দির বাংলার স্থাপত্যের এক অন্যতম নিদর্শন। গ্রামের মাটির বাড়ি ও কুঁড়েঘরের সংমিশ্রণ ধরা পড়ে এই কালীমন্দিরের ছাদে। যে স্থাপত্যে মন্দিরের ছাদ তৈরি, তাকে গ্রামবাংলায় ?চালাঘর? বলা হয়। যে কারণে স্থাপত্য ভাষার কালীঘাট মন্দিরের নাম ?চালা টেম্পল?।
এই চালা টেম্পলের কোথায় লাগানো হয়েছে সোনা? কালীঘাট মন্দিরের মাথায় তিনটি তিনকোনা চুড়ো। তিনটে চুড়োয় রয়েছে তিনটি স্তম্ভ। মাঝের স্তম্ভটি বহন করছে একটি উল্লম্ব পতাকা। এতদিন সবকটি ছিল মাটির। এখন তা হল সোনার। মন্দির কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, ৫০ কিলোগ্রাম সোনা ব্যবহার করা হয়েছে মন্দিরের চুড়োয়। সোনার ছোঁয়া লাগলেও আগের স্থাপত্যের কিছুমাত্র বদল করা হয়নি। সূত্রের খবর, মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে শুরু করে ভোগের ঘর, নাটমন্দির, মূলমন্দির, বলির জায়গাতেও আমূল সংস্কার চলছে। কাজ প্রায় শেষের মুখে।
শনিবার নিঃশব্দে স্বর্ণচুড়ো আমজনতার জন্য খুলে দেওয়া হলেও অনুষ্ঠান একটা হবে। স্থানীয় কাউন্সিলর প্রবীরকুমার মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গিয়েছে, তাই ইচ্ছে থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বোধন করতে পারছেন না। তবে ফি বছর পয়লা বৈশাখের আগে কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিতে আসেন মমতা। কাউন্সিলর জানিয়েছেন, সেদিন সোনার চুড়ো উন্মোচনকে কেন্দ্র করে একটা ছোট অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে রামমন্দিরে সোনার দরজার সঙ্গে একে তুলনা করছেন বিজেপি নেতারা। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের কথায়, রামমন্দিরের সঙ্গে কালীঘাটের তুলনা চলে না। এটা ঐতিহাসিক স্থান। অন্যতম সতীপীঠ। কালীঘাটের মন্দিরে ফি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত সমাগম হয়। রামমন্দিরের উদ্বোধনের নেপথ্যে রাজনীতি রয়েছে। কিন্তু বাংলায় ধর্ম নিয়ে কোনও রাজনীতি হয় না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন ধর্ম যার যার। উৎসব সবার।