মেদিনীপুর থেকে তাঁকে লড়তে পাঠানো হয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুরে। প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই একের পর এক 'শব্দ ফাউল' নিয়ে চর্চা দিলীপ ঘোষ। এবার বর্ধমানের মহারাজা ভেবে রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ বনবিহারী কাপুরের গলায় মালা দিয়ে বসলেন দিলীপ ঘোষ। শুধু তাই নয়, দিলেন 'মহারাজ উদয়চাঁদ অমর রহে' স্লোগানও। ভুল ধরিয়ে দিতেই দিলীপের পালটা প্রশ্ন, 'এখানে আবার কাপুর এল কোথা থেকে?'ফলকের উপর লেখা ছিল 'রাজা বন বিহারী কপুর বাহাদুর সিএসআই। দেওয়ান-ই-রাজ ১৮৭৭-১৮৮৫ খ্রীষ্টাব্দ।’ কিন্তু, তা বোধহয় খেয়াল করেননি বঙ্গ BJP-র প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দল তাঁকে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের প্রার্থী করার পর থেকেই তিনি আপাতত প্রচার চালাচ্ছেন।
কাপুর কোথা থেকে এল!দিলীপ ঘোষ
রবিবারও তিনি গিয়েছিলেন মহারাজা উদয়চাঁদের মূর্তিতে মালা দিতে। তার বদলে রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ বনবিহারী কাপুরের গলায় মালা দিয়ে বসেন তিনি।
মাল্যদানের পর দিলীপ ঘোষ বলেন, 'বা! মহারাজ উদয় চাঁদ অমর রহে!' এরপর হাত দিয়ে মালাটি তিনি সাজিয়েও দেন বারংবার। সেই সময় নীচে থেকে কেউ একজন তাঁর 'ভুল ভাঙান'। দিলীপ ঘোষ বাম হাত দিয়ে মালা ঠিক করতে করতে বলেন, 'কাপুর কোথা থেকে এল!' এরপর নিজেই ফলক থেকে বাহাদুর শব্দটি পড়েন। তারপর মূর্তির দিকে তাকিয়ে রসিকতা করে দিলীপ ঘোষ বলেন, 'গোঁফটা ভালই রয়েছে।' এরপর সেখান থেকে চলে যান দিলীপ ঘোষ।
এই প্রসঙ্গে কটাক্ষের সুর শোনা গিয়েছে তৃণমূলের কণ্ঠে। রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস এই প্রসঙ্গে বলেন, 'মেদিনীপুর থেকে তিনি এখানে এসেছেন। বর্ধমানের ইতিহাস কিছু জানেন না। যিনি গোরুর দুধে সোনা খুঁজে পান তাঁর থেকে আর কী আশা করব।’
এই প্রসঙ্গে ইতিহাসবিদ সর্বজিৎ যশ বলেন, ‘বনবিহারীর কাপুরের বাড়ি ছিল গলসিতে। তিনি জ্যোতিষচর্চা করতেন এবং সেই কারণেই বর্ধমান রাজবাড়িতে আসতেন। এই সময় রাজত্ব ছিল বর্ধমানের রাজা আফতাব চাঁদের। তাঁর কোনও সন্তান ছিল না। রাজার স্ত্রী সেই সময় বনবিহারী কাপুরের কাছে তাঁর ছেলেকে দত্তক চান। বদলে তাঁকে রাজস্ব দেখাশোনা করতে দেওয়া হয়। এরপর বিজয় চাঁদ মহতাব অর্থাৎ দত্তকপুত্রকেই রাজ্য দেওয়া হয়। বনবিহারী কাপুরকেও সম্মান দেওয়া হত এবং তাঁর মূর্তিও বসানো হয়। বিজয়চাঁদের পুত্র হলেন উদয়চাঁদ, যিনি ১৯৪৩ সালে বর্ধমানের রাজা হন। অর্থাৎ রক্তের সম্পর্কে উদয়চাঁদের দাদু হলেন এই বনবিহারী কাপুর।’