এই সময়, ঢোলাহাট: শনিবার ঘড়িতে তখন বিকেল ২.২০। কুলপির ঢোলাহাটের আকাশে তখন চক্কর কাটছে হেলিকপ্টার। কয়েক মিনিটের মধ্যেই হেলিকপ্টার থেকে নেমে কয়েক পা হেঁটে সরাসরি জন গর্জন সভার মঞ্চে উঠলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের প্রার্থী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে কাতারে কাতারে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের ভিড় উপচে পড়েছিল এ দিনের সভাস্থলে। গত বিধানসভা নির্বাচনে দুই বিজেপি প্রার্থীকে তৃণমূলে যোগদান করিয়ে প্রথম চমকটা দিলেন অভিষেক।মঞ্চে তখন মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরা, গিয়াসউদ্দিন মোল্লা, বঙ্কিম হাজরা, যোগরঞ্জন হালদার, জয়দেব হালদার, অলোক জলদাতার মতো একাধিক বিধায়ক ছাড়াও জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের একাধিক নেতা-বিধায়ক উপবিষ্ট। মঞ্চে ছিলেন জেলা সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী, প্রবীণ তৃণমূল নেতা শক্তি মণ্ডল-সহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি, সহকারী সভাধিপতি এবং জেলা পরিষদের সদস্যরা। কেউই ভাবতে পারেননি অভিষেক নিজের গড় ডায়মন্ড হারবার ছেড়ে মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে এসে এ ভাবে চমক দেবেন? মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বাপি হালদারের সমর্থনে কুলপির ঢোলাহাটে জনসভায় এসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার দুই নেতা দিলীপ জাতুয়া ও শান্তনু বাপুলিকে তৃণমূলে যোগদান করান। তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন অভিষেক নিজেই।
পরে বক্তব্যে অভিষেক বলেন, ‘আমি কথা দিলে কথা রাখি। ডায়মন্ড হারবারের পাশের কেন্দ্র এই মথুরাপুর। আগামী দিনে এই কেন্দ্রের সার্বিক উন্নয়নের দায়িত্ব আমার। আপনারা বাপিকে আশীর্বাদ করে জয়যুক্ত করুন। শান্তনু এবং দিলীপ ঘরে ফিরেছে। আশা করব সকলে মিলে একসঙ্গে জোট বেঁধে লড়াই করে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে নদীতে বিসর্জন দেব।’ ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে দিলীপ জাতুয়া মন্দিরবাজার ও শান্তনু বাপুলি রায়দিঘি বিধানসভা থেকে বিজেপির প্রতীকে লড়াই করেন। এ দিন দলবদলের পর শান্তনু বলেন, ‘তৃণমূল একটি বড় পরিবার। পরিবারে থাকতে গেলে মান অভিমান হয়। ২০২১ সালে সেই অভিমান থেকে দল ছেড়েছিলাম। কিন্তু বিজেপিতে গিয়ে কোনও কাজ করতে পারিনি। এই দলটা জনবিরোধী। মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন। তাই তৃণমূলে ফিরে এলাম।’
শান্তনু প্রয়াত কংগ্রেস বিধায়ক সত্যরঞ্জন বাপুলির ছেলে। অন্যদিকে, দিলীপ একসময় তৃণমূলের মন্দিরবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন। ২০২১ সালে দলবদল করেন। বর্তমানে মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার বিজেপির সহকারী সভাপতি ছিলেন। এদিন তৃণমূলে ঘর ওয়াপসির পর দিলীপ বলেন, ‘বিজেপি বাঙালি বিরোধী দল। আমাদের পরিচালনা করতেন ভিন রাজ্যের নেতারা। কাজ করতে পারছিলাম না। বিশৃঙ্খলার পরিবেশ ছিল ওই দলে। মান-অভিমান থেকে তৃণমূল দল ছেড়েছিলাম। আর কখনও বহিরাগতদের দলে যাব না।’
তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক শওকত মোল্লা বলেন, ‘বিজেপি বাংলার মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন। সুযোগ পেলেই মানুষে মানুষে, ধর্মে ধর্মে বিভাজন করার চেষ্টা করে। দিলীপ ও শান্তনু আবার দলে ফিরে আসায় আমরা সকলেই খুশি হয়েছি। সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলা আরও মজবুত হবে।’ তবে এই দলবদল নিয়ে মথুরাপুরের বিজেপি প্রার্থী অশোক পুরকাইত বলেন, ‘বিজেপি সর্বভারতীয় দল। এই দলবদলের কোনও প্রভাব ভোটে পড়বে না। উল্টে দলের কর্মীরা আরও সংঘবদ্ধ ভাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হবে।’