CAA-র জন্য প্রয়োজন পুরোহিতের শংসাপত্র! দ্বিধাবিভক্ত মতুয়া সমাজ? খোঁজ নিল এই সময় ডিজিটাল
এই সময় | ৩১ মার্চ ২০২৪
লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে লাগু হয়েছে CAA। নাগরিকত্ব পেতে গেলে শরণার্থীদের যে সমস্ত নথি জমা দিতে হবে তার মধ্যে অন্যতম হল আবেদনকারীর ধর্মীয় পরিচয়ের শংসাপত্র। সম্প্রতি 'দ্য হিন্দু'-র তরফে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেন্দ্রের হেলপ লাইনে ফোন করলে জানানো হয়, ধর্মীয় যোগ্যতার সার্টিফিকেট কোনও সাদা কাগজ বা ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে দেওয়া সম্ভব। হয়তো কোনও স্থানীয় পুরোহিত বা কোনও পুরোহিত প্রতিষ্ঠান তা দিতে পারে। পাশাপাশি মানুষ আস্থা রেখেছে এমন প্রতিষ্ঠানও এই সার্টিফিকেট দিতে পারবে।নিঃশর্ত নাগরিকত্ব নিয়ে মতুয়াদের মনে আশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু, আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নির্দিষ্ট পোর্টালে জমা দিতে হবে নথি। তারপর দিতে হবে ইন্টারভিউও। এতে কী প্রতিক্রিয়া মতুয়াদের?
ঠাকুরবাড়িতে আসা এক মতুয়া ভক্ত জানান, সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যে যে নথি জমা দিতে বলা হচ্ছে, শরণার্থীদের কাছে তা থাকা কার্যত অসম্ভব। উত্তর দমদম নিউ ব্যারাকপুর পুরসভা বিলকান্দা ২ পঞ্চায়েতের লেলিনগড় এলাকার ৮০ শতাংশ মানুষ মতুয়া সম্প্রদায়ের। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বিষয়টি অনেকেই শুনেছেন। তবে গোটা বিষয়টি এখনও তাঁদের কাছে স্পষ্ট নয়। তাঁদের কথায়, ' ভোটার আধার , প্যান কার্ড আছে। বহু বছরের ভোটার তাঁরা। এই দেশেরই নাগরিক।' অন্যদিকে, ধর্মীয় শংসাপত্রের বিষয়টি জেনেছেন পুরোহিতরা। কিন্তু, তা কী ভাবে দেওয়া হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এই প্রসঙ্গে মতুয়া সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সুখেন্দু নাথ অধিকারী বলেন, 'আমরা কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। আমরা হরিচাঁদ এবং গুরুচাঁদ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা করি। CAA কোন দিকে যাচ্ছে তা বুঝতে পারছি না। অনেকে অনেক কথা বলছে। দোটানায় রয়েছি।' গোঁসাই লক্ষ্মণ ঘোষ বলেন, 'আমাদের আই কার্ড, জমি রয়েছে। নতুন করে নাগরিকত্বের প্রয়োজন কেন? তা আমরা বুঝতে পারছি না। আমি জানি আমি এই দেশের নাগরিক। তাই বিষয়টি নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে মাথাব্যথা নেই।'
ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে সুর চড়িয়েছে রাজ্য শাসক দল। নিউ ব্যারাকপুর পুরসভার পুরপ্রধান প্রবীর সাহা জানান, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে এই CAA আইন পাশ করে তা বাস্তবায়ন করতে ৫ বছর লেগে গেল! একজন ভারতীয়কে নাগরিকত্বের পরিচয় দিতে ইন্টারভিউতে বসতে হবে।মুখ্যমন্ত্রী আগেই বলে দিয়েছে কাউকে কোনও জায়গায় কাগজ জমা দিতে হবে না।' অসম প্রসঙ্গও শোনা যায় তাঁর কণ্ঠে।
ঠাকুরবাড়ির সদস্য তথা রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর বলেন, 'লোকসভা ভোটে মতুয়া ভোট নিজের দিকে টানতে এই ভাঁওতাবাজি করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে আগেই যা জানানোর জানিয়ে দিয়েছেন। যেখানে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড আছে এবং যেখানে মতুয়ারাই ভোটে দাঁড়াচ্ছেন সেখানে আবার কীসের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে!' গোটা বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করে ভোট বিতরণী পার করার চেষ্টা করছে বিজেপি বলেও অভিযোগ তোলেন মমতাবালা।
পালটা হুংকার শোনা গিয়েছে BJP-র বারাসতের প্রার্থী স্বপন মজুমদারের কণ্ঠেও। তিনি বলেন, 'অন্য দেশের একটি নির্দিষ্ট ধর্মের সন্ত্রাসবাদীরা নাম ভাঁড়িয়ে যাতে নাগরিকত্ব না পায় সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত।' পাশাপাশি তিনি জানান, মতুয়ারা কোনওভাবেই কোনও রকম সমস্যার সম্মুখীন হবেন না। তাঁদের সুরক্ষিত রাখতেই নরেন্দ্র মোদীর সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।