'লাস্ট বেঞ্চার রিক পড়াশোনায় ভালো', বোকা হতে চাওয়া ছাত্রকে নিয়ে গর্ব শিক্ষক রিপনকান্তির
এই সময় | ০১ এপ্রিল ২০২৪
বোকা হওয়া ভীষণ কঠিন? প্রতিযোগিতা, লক্ষ্য, উচ্চাশা সব কিছু ছেড়ে বোকা হতে চাওয়া সহজ বললেই হল! আর এই ‘কঠিন আশা’-র কথাটা সহজভাবে গড় গড় করে বলে ফেলেছিল রিক। ক্লাসরুমে তখন পাইলট, ডাক্তার, অরিজিৎ সিংয়ের দেহরক্ষী হওয়ার স্বপ্নগুলো অল্প অল্প করে আলো বাতাস পাচ্ছে। কিন্তু, কোথা থেকে যেন একরাশ আশা নিয়ে এক কণ্ঠ বলে উঠল- 'আমি বোকা হতে চাই'।ক্যামেরার অপরপ্রান্তে ছিলেন মাস্টারমশাই রিপনকান্তি বালা। শরৎচন্দ্রের রামের সুমতি হয়েছিল অনেক বিলম্বে। টোলের উত্তম-মধ্যমে কিছুটি শুধরাননি। এখন সেই টোল নেই। কিন্তু, স্মার্ট ক্লাস রয়েছে। ক্লাস থ্রিতে পড়া একটা খুদে কিনা চাইছে বোকা হতে?
একটু থমকেছিলেন শিক্ষক রিপনকান্তি বালা। এই অবুঝ ভাবনাটাতে 'বিচার' করতে বসেননি এই শিক্ষক। বরং বুঝতে চেয়েছিলেন। রিক গজদাঁত উজিয়ে বলেছিল, 'বাবাকে বলতে শুনেছি বোকা পেয়ে নাকি তাঁকে সবাই ঠকাচ্ছে। বাবা কাউকে ঠকাচ্ছে এমনটা শুনিনি। বাবার মতো আমিও কাউকে ঠকাতে চাই না।' সব বুঝেও যেন অনেকটা বোঝা হয়নি রিপনকান্তি বালার।
এই সময় ডিজিটাল-কে তিনি বলেন, ‘রিক পড়াশোনাতেও বেশ ভালো। কিন্তু, প্রথম বেঞ্চে বসার জন্য কোনও দিন আঁকুপাকু করতে দেখিনি। শেষ বেঞ্চে গিয়ে আপন মনে পড়াশোনা করে। ও এই রকমই।’ সত্যিই তো, সবাইকে এক ছাঁচে পড়তে হবে, এমন মাথার দিব্যি কে দিয়েছে?
তাঁর কথায়, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় নেগেটিভিটির শেষ নেই। তাই যদি একটু সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতি উতি ভালোলাগার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া যায়। আর শিশুরা তো সারল্যের আশ্রয়। তাই ওদের কিছু ভিডিয়ো করা। রিকের এই স্রোতের বিপরীতে হাঁটা আমাকে অবাক করেছে। ক্লাস থ্রিতে পড়ে। এই ধরনের কথা ওর মুখে শুনব, আশা করিনি।’
বোকা হওয়ার অ্যাম্বিশেন নিয়ে বড় হওয়া রিক যদি পড়াশোনায় সাহায্য চায় সেক্ষেত্রে তিনি ছিলেন আছেন, থাকবেন বলে জানান রিপনকান্তি। সরকারিভাবে যদি ওরা সাহায্য পায় তাহলে তো খুবই ভালো হয়।
বীরভূম জেলা লাভপুর থানার শীতলগ্রামেই বাড়ি রিক বাগদির। বাবা অভিজিৎ বাগদি পেশায় দিনমজুর। মা সুমিন্দা বাগদি বাড়ির দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন নিজের কাঁধে। অভাবের সংসারে ছেলেকে পড়ানোর বিষয়ে কোনও খামতি তাঁরা রাখেননি। ভাইরালের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে তাঁরা চিন্তিত নন। তবে সন্তান জীবনে এগিয়ে যাক, এটাই চাইছেন এই ‘বোকা হতে চাওয়া’ খুদের বাবা-মা।