Archer Limba Ram : বিজেপি সরকার মাইনে আটকেছে, অসুস্থ লিম্বা রামের ভরসা দিদি
এই সময় | ০১ এপ্রিল ২০২৪
পার্থ দত্ত: কেন্দ্র এবং রাজ্য—দুই বিজেপি সরকারের উপরই চরম বীতশ্রদ্ধ। তাই দিদি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সাহায্য চাইছেন ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা তিরন্দাজ অসুস্থ লিম্বা রাম। দীর্ঘ দিন ধরেই গুরুতর অসুস্থ লিম্বা। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। রবিবার দুপুরে কান্না জড়ানো কণ্ঠে ফোনে লিম্বা রামের আর্জি, ‘মমতা দিদিকে বলুন, আমার জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে। তা হলে আমি রাজস্থান ছেড়ে কলকাতায় চলে যাব।’একটা-দুটো নয়, তিন তিনটে অলিম্পিক্সে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন লিম্বা রাম। যার মধ্যে ১৯৯২ সালে বার্সেলোনা অলিম্পিক্সে অল্পের জন্য পদক হাতছাড়া হয়েছিল রাজস্থানের এই তিরন্দাজের। তবে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ, কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি দেশকে দিয়েছেন একাধিক পদক। ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা জাতীয় টিমের কোচিং করিয়ে এনে দিয়েছেন অসংখ্য সাফল্য। ‘অর্জুন’ পুরস্কার ও ‘পদ্মশ্রী’ও পেয়েছেন রাজস্থানের উদয়পুরের বাসিন্দা লিম্বা রাম।
তবে এই সব সাফল্য, পুরস্কারের এখন কোনও মূল্যই নেই লিম্বা বা তাঁর স্ত্রী জেনির কাছে। বেশ কয়েক বছর ধরে হার্ট, নার্ভের অসুখে আক্রান্ত ৫২ বছরের লিম্বা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পার্কিনসন। ফলে তাঁর স্মৃতিশক্তি ফিকে হয়ে আসছে। মাথা ঘুরে পড়ে যান প্রায়ই। শরীর এতটাই কাঁপে যে, খেতে পারেন না ভালো করে। হুইল চেয়ারই তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী। আর একমাত্র অবলম্বন স্ত্রী জেনি।
মমতা দিদিকে বলুন, আমার জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে। তা হলে আমি রাজস্থান ছেড়ে কলকাতায় চলে যাবলিম্বা রাম
নিঃসন্তান লিম্বার পাশে এখন কার্যত কেউ নেই। চিকিৎসা করানোর জন্য রাজস্থানের বিজেপি সরকার কোনও উদ্যোগ নেয়নি। তাই লিম্বাকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন জেনি। অনেক দিন ধরেই তাঁরা রয়েছেন দিল্লির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের যুব আবাসে। প্রথমে দিল্লি এইমসে চিকিৎসা হচ্ছিল। এখন দিল্লি গেটের কাছে চিকিৎসক দেবাশিস চৌধুরীর অধীনে জিবি পন্থ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লিম্বা।
সেই চিকিৎসা করানোর টাকা নেই লিম্বা-জেনির কাছে। কারণ, লিম্বা চাকরি করেন রাজস্থান সরকারের ক্রীড়া দপ্তরের স্পোর্টস অফিসার হিসেবে। মাসে মাইনে প্রায় ৭৮ হাজার টাকা। আগে এই টাকায় স্বামীর চিকিৎসা করাতে কোনও অসুবিধে হচ্ছিল না জেনির। তবে তিন মাস ধরে লিম্বার মাইনে বন্ধ করে দিয়েছে রাজস্থান সরকার।
কেন? জেনি জানালেন, লিম্বা কাজ করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই এখন কাজে যেতে পারেন না। আর চিকিৎসার জন্য তাঁরা রয়েছেন দিল্লিতে। হঠাৎ করেই রাজস্থান সরকারের দীর্ঘ চিঠি এসেছে তাঁদের কাছে। কী বয়ান সেই চিঠির? লিম্বা পত্নী জানান, তিনি লেখাপড়া তেমন জানেন না। আর লিম্বাও এখন পড়তে পারেনি জটিল আইনি ওই চিঠি। এই চিঠি দেওয়ার পরেই রাজস্থান সরকার মাইনে আটকে রেখেছে। ফলে তিনি লিম্বার আর চিকিৎসা করাতে পারছেন না।
এখানেই শেষ নয়, লিম্বা বহু কষ্টে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর ও ইন্ডিয়ান অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট পিটি উষাকে মেল পাঠিয়ে তাঁর পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন। তবে কেউই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। পদ্মশ্রী পুরস্কার পেলে চিকিৎসা সংক্রান্ত বা অন্য কোন কোন সুবিধা পাওয়া যেতে পারে, সেটাও জানেন না জেনি।
তাঁর আর্জি, মানুষটা তো দেশের গর্ব। হয়তো অসুস্থ। তা বলে কেউ এগিয়ে পর্যন্ত আসবে না। তিনি কারও কাছে ভিক্ষা চাইছেন না। শুধু অনুরোধ করছেন, লিম্বার হকের মাইনের টাকাটা দেওয়া শুরু হোক। তাতেই তিনি ওঁর চিকিৎসা করাবেন। লিম্বার মতো জেনিরও ভরসা মমতা দিদিতে।
ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, একমাত্র বাংলার মুখ্যমন্ত্রীই পারেন, তাঁদের সাহায্য করতে। জেনি মনে করেন, বাংলার মতো মানবিক রাজ্য আর কোথাও নেই। লিম্বা যখন প্লেয়ার ছিলেন, তখন কলকাতাতেই বেশি সময় কাটাতেন জাতীয় শিবিরে। ওখানে অ্যাক্সিডেন্টও হয়েছিল। যার প্রভাব পড়েছে বেশি বয়সে।
মমতা দিদি যদি বাংলায় লিম্বাকে সম্মান দিয়ে একটা চাকরি দেন, তা হলে তাঁরা রাজস্থান ছেড়ে বাংলার বাসিন্দা হয়ে যাবেন। সব মিলিয়ে একদা লক্ষ্যভেদ করে দেশকে বহু সম্মান এনে দেওয়া লিম্বা রাম এখন জীবন যুদ্ধে লক্ষ্যহীন। ভরসা বাংলার দরদী মুখ্যমন্ত্রী।