• কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মৃত ৫, রাতেই জলপাইগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রী, শোকপ্রকাশ মোদীর
    এই সময় | ০১ এপ্রিল ২০২৪
  • এই সময়: কালবৈশাখীর ধ্বংসলীলায় মাত্র ১৫ মিনিটেই ছাড়খাড় হয়ে গেল জলপাইগুড়ি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে রাত পর্যন্ত চার জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। গুরুতর আহত হয়ে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ ও ময়নাগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি শ'দেড়েক মানুষ। রবিবার সন্ধেয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে এক্স প্ল্যাটফর্মে (সাবেক টুইটার) দুঃখপ্রকাশ করেন।

    পরে জরুরি ভিত্তিতে রাতেই বিশেষ বিমানে জলপাইগুড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। রাতে পৌঁছে স্থানীয় নেতাদের নিয়ে আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করতে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। আজ, সোমবার বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনে জলপাইগুড়ি আসার কথা রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসেরও।

    উত্তরবঙ্গে দু-তিন দিন বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া দপ্তর। টুকটাক হচ্ছিলও। কিন্তু সেটাই রবিবার দুপুর সাড়ে তিনেট নাগাদ কালবৈশাখীর রূপ নেয়। মাত্র মিনিট পনেরোর ঝড়েই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আলিপুরদুয়ার-কোচবিহারও। ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টিও হয় এ দিন।

    ময়নাগুড়িতে ৫০০ গ্রাম ওজনের শিল পড়েছে বলেও দাবি এলাকাবাসীর। এ দিনের ঝড়ে ময়নাগুড়ি ও ক্রান্তি এলাকায় প্রচুর গাছ ভেঙে পড়ে। তাতে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে বা তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন বহু এলাকা। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জলপাইগুড়ি পলিটেকনিক কলেজেরও। সেখানে এখন কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। ঝড়ে তাদের শৌচাগারের চাল উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে। চাল উড়ে গিয়েছে একাধিক বাড়ির। গৃহহীন বহু মানুষ। আহত দেড়শোরও বেশি। ঝড়ের পরে উদ্ধারকাজ শুরু করে পুলিশ ও দমকল। তৎপর ছিল পুরসভাও।

    এ দিন ঝড়ের খবর পাওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে এক্স প্ল্যাটফর্মে দুঃখপ্রকাশ করে লেখেন, 'আজ বিকেলে হঠাৎ ভারী বৃষ্টিপাত এবং ঝোড়ো হাওয়ায় জলপাইগুড়ি-ময়নাগুড়ির কিছু এলাকায় প্রাণহানি, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, গাছ এবং বিদ্যুতের পোল উপড়ে পড়ার মতো ঘটনায় বিপর্যয় নেমে এসেছে। জেলা এবং ব্লক প্রশাসন, পুলিশ এবং কুইক রেসপন্স টিম বিপর্যয় মোকাবিলা এবং ত্রাণ দিতে তৎপর। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসন মৃতদের পরিজন এবং আহতদের ক্ষতিপূরণ দেবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে আছি। আমি নিশ্চিত জেলা প্রশাসন উদ্ধার এবং ত্রাণের জন্য সবরকম প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে।'

    এর খানিক পরেই অবশ্য জরুরি ভিত্তিতে জলপাইগুড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী। রওনা হয়ে যান বিশেষ বিমানে। এ দিন জলপাইগুড়ি জেলায় ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে যে চার জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা হলেন দ্বিজেন্দ্রনারায়ণ সরকার (৫২), অনিমা বর্মন (৪৯), যোগেন রায় (৭০) ও সমর রায় (৬৪)।

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্বিজেন্দ্রনারায়ণের বাড়ি কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ এলাকায়। ঝড়ের সময় জলপাইগুড়ির সুকান্তনগর এলাকায় গাছের নীচে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। গাছ চাপা পড়ে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত অনিমা বর্মন (৪৮) জলপাইগুড়ির পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েত এবং সমর রায় জলপাইগুড়িরই রাজারহাটের বাসিন্দা। আরও এক মৃত যোগেন রায় পুঁটিমারি এলাকার বাসিন্দা।

    মৃতদেহগুলি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজে পাঠিয়েছে পুলিশ। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কোচবিহার ২ ব্লক ও মাথাভাঙা ১ ব্লক, আলিপুরদুয়ার এক নম্বর ব্লক ও কুমারগ্রাম ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকাও।
  • Link to this news (এই সময়)