• Israel Hamas War : বাবা কিন্তু বলছেন, ‘নৃশংস হলেও ছবিটা পুরস্কারেরই যোগ্য’
    এই সময় | ০১ এপ্রিল ২০২৪
  • এই সময়: শুধু মাথায় গুলি করে খুন নয়, অর্ধনগ্ন অবস্থায় জার্মান ট্যাটু আর্টিস্ট বছর বাইশের তরুণী শানি লউককে পিক-আপ ভ্যানে চাপিয়ে রীতিমতো উল্লাস করতে-করতে গাজ়ায় নিয়ে গিয়েছিল হামাস জঙ্গিরা। গত ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েলের মূল ভূখণ্ডে ঢুকে হামাসের ভয়াবহ তাণ্ডবের প্রমাণ হিসেবে সেই ভিডিয়ো-ছবি তখনই শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। সংবাদ সংস্থা এপি-র তোলা সেই ছবি বেশ কিছু মিডিয়া প্রকাশও করেছিল।সম্প্রতিই আমেরিকার একটি জার্নালিজ়ম ইনস্টিউটের বর্ষসেরা ছবির তকমা পেয়েছে ছবিটি। যা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই বলতে থাকেন, ‘এভাবে সন্ত্রাসকে প্রোমোট করার কোনও মানেই হয় না।’ শানি-র পরিচিত মহলের অনেকে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এমন নৃশংস ছবিকে পুরস্কৃত করে আদতে শানিকেই অসম্মান করেছে ওই সংস্থা।’

    এমনকী, কেন শানি লউকের নাম উল্লেখ করা হয়নি ছবিতে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে। পাঁচ মাস আগে জঙ্গিদের হাতে মেয়ে হারানো শানির বাবা নিসিম লউকের গলায় অবশ্য সম্পূর্ণ সুর। ইজ়রায়েলি এক মিডিয়া আউটলেট-কে তিনি বলেন, ‘আমার মতে, ছবিটা গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছবিগুলির একটি। এটা একটা সময়ের ডকুমেন্টশন। এই রকমের ছবিই মানবসভ্যতার স্মৃতি গড়ে দেয়। ১০০ বছর পরেও হামাসের তাণ্ডবের কথা উঠলে লোকে তো এরকম কিছু ছবির কথাই বলবে।’

    পিছনের দিকে হুডখোলা পিক-আপ ভ্যানে উপুড় করিয়ে শোয়ানো রয়েছে এক তরুণীকে। পরনে শুধু অন্তর্বাস। নাকি, ওটা তরুণীর নিথর দেহ? প্রথমে কিছুই বোঝা যায়নি। ভাইরাল ভিডিয়োতে দেখা যায়, প্রায় অর্ধনগ্ন তরুণীর পিঠ ও কোমরের উপর পা রেখে হাতে বন্দুক ও রকেট লঞ্চার হাতে নিয়ে উল্লাস করতে-করতে চলেছে অন্তত তিন জন জঙ্গি।

    কেউ আবার চরম ঘৃণায় থুতু ফেলছে তরুণীর শরীরে। গত ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েলে ঢুকে হামাসের তাণ্ডবের এই ছবি তখনই শোরগোল ফেলে দিয়েছিল গোটা বিশ্বে। প্রথমে মনে করা হয়েছিল, ইজ়রায়েলের কোনও মহিলা সেনাকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে হামাসের সদস্যরা। পরে জানা যায়, ওই তরুণী আদতে জার্মান-ইজ়রায়েলি ট্যাটু আর্টিস্ট শানি লউক।

    তাঁর হাঁটুর কাছে ট্যাটু দেখে মেয়েকে চিহ্নিত করেন শানির মা। মেয়ে বেঁচে আছে বলেও দাবি করেন তিনি। সপ্তাহদুয়েক পরে অবশ্য গাজ়া থেকে পাওয়া একটি ছিন্ন মুন্ডুর ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমাণ হয়ে যায়— শানি আর বেঁচে নেই।

    সম্প্রতি পুরস্কৃত এপি-র ‘টিম পিকটার স্টোরি’তে গাজ়া পরিস্থিতির স্মারক হিসেবে শিশুদের লাশের সারি, স্বজনহারার কান্নার মতো আরও ১৯টি ছবি ছিল। তবে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক তৈরি হয় শানির ওই ছবি ঘিরে। বিতর্ক জুড়েছে ওই ছবিটি যাঁর তোলা এপি-র সেই ফ্রিলান্স ফোটোজার্নালিস্ট আলি মাহমুদকে নিয়েও।

    একাধিক মহলের দাবি, সে দিন ওই ছবি তোলার পরপরই বিপদ বুঝে ইজ়রায়েলের বর্ডার পেরিয়ে গাজ়ায় চলে যান তিনি। নাকি, তিনিও আদতে হামাসেরই সদস্য? হামলার কথাও আগে থেকে জানতেন? এমন প্রশ্ন কিন্তু অন্তত চার জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে উঠেছে গোড়া থেকেই।

    মেয়ে হারানো বাবার মনে অবশ্য এ সব সন্দেহ দানা বাঁধেনি একেবারেই। তাঁর কথায়, ‘শুধু আমার মেয়ের ওই ছবি নয়, আমার মতে নোয়া আরগামানি নামে অন্য যে তরুণী ও তাঁর বয়ফ্রেন্ডকে জোক করে হামাস বাইকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, সেই ছবিও ডকুমেন্টেশন হিসেবে থেকে যাওয়া উচিত। শুনছি, অনেকেই শানির ওই ছবিটা নিয়ে প্রতিবাদে সামিল হয়েছে। ওঁর বন্ধুরাও শুনেছি সব কান্নাকাটি করছে। কিন্তু এখন আর কেঁদে কী লাভ বলুন তো? মেয়েকে তো আর ফেরত পাব না। তার চেয়ে বরং ওকে যে যন্ত্রণা সইতে হয়েছে, সেটা ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে থাক।’
  • Link to this news (এই সময়)