Lok Sabha Election 2024: তালা নয়, কাগজেই কামাল! কারচুপি রুখতে প্রথম লোকসভা ভোটে কী ভাবে সিল ব্যালট বাক্স?
এই সময় | ০১ এপ্রিল ২০২৪
এগিয়ে আসছে লোকসভা নির্বাচন। প্রচার ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। এবার ১৮ তম লোকসভা নির্বাচন হতে চলেছে। ৪৪ দিন ধরে চলবে আসন্ন লোকসভা নির্বাচন। দেশের প্রথম লোকসভা নির্বাচনের পর এত দিন ধরে কখনও আর ভোট চলেনি। প্রথম লোকসভা ভোটের একাধিক তথ্য আজও অজানা। তারই কিছু টুকরো স্মৃতি ভাগ না করলেই নয়!ভোট সংগ্রহে EVM-এই ভরসা রাখে নির্বাচন কমিশন। বিরোধী পক্ষের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, ইলেকট্রনিক মেশিন হওয়ার দরুন EVM-এ কারচুপি করা সম্ভব। EVM হ্যাক করা যায় বলেও নাগাড়ে অভিযোগ তুলেছে তারা। বহুক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে পরাজিত প্রার্থীরা EVM কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন। প্রথম লোকসভা নির্বাচনে ইভিএম ছিল না। দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ব্যবহার করা হয়েছিল ২০ লাখেরও বেশি স্টিলের ব্যালট বাক্স। আর সেই ব্যালট বাক্সগুলি বিশেষত্ব জানলে অবাক হবেন। দেশের প্রথম লোকসভা নির্বাচনে যে ব্যালট বাক্সগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল সেইগুলির বিশেষ নকশার জন্য় কারচুপির প্রায় সুযোগই ছিল না বললেই চলে।
ব্যালট বাক্সগুলির বিশেষত্ব?
বাক্সগুলি এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছিল যাতে সেগুলিতে একবার সিল করে দেওয়া চট করে তা খোলা না যায়। সিল করা ও সিল খোলার সময়ও ছিল বিশেষ নিয়ম। বুথে পোলিং এজেন্টদের সামনেই শুধুমাত্র ব্যালট বাক্সগুলির সিল খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ভোট শেষের পর ফের সেই একই পোলিং এজেন্টদের সামনে সিল করে দেওয়া হত ব্য়ালট বাক্সগুলি। মনে হতেই পারে এই পদ্ধতিতে তো তালার প্রয়োজন হওয়ার কথা। নিশ্চয় মনে হচ্ছে প্রতিটি ব্যালট বাক্সের জন্য আলাদা আলাদা তালাও কিনতে নিশ্চয় নির্বাচন কমিশন সেবার বিপুল খরচ করেছিল? না, একেবারেই নয়। এর জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল বিশেষ কাগজের সিল। বাক্সগুলি সুকৌশলে তৈরি করা হয়েছিল। তালা ছাড়াই যাতে বাক্সগুলি বন্ধ করা যায় সেই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ব্যালট বাক্সগুলির বিশেষ এই নকশার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মেসার্স গোদরেজ অ্যান্ড বয়েস ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড, বোম্বে, মেসার্স হায়দ্রাবাদ, অলউইন মেটাল ওয়ার্কস লিমিটেড, হায়দ্রাবাদ এবং মেসার্স ওরিয়েন্টাল মেটাল প্রেসিং ওয়ার্কস, বোম্বে-এর মতো কোম্পানিগুলির উপর। এমন ভাবে স্টিলের ব্যালট বাক্সগুলি তৈরি করা হয়েছিল যাতে সামান্য কাগজের সাহায্যেও সেগুলিকে বন্ধ করা যায়। কাগজের এই সিল খোলার কাজ কিন্তু মোটেও সহজ ছিল না। আর তাই ব্য়ালট বাক্সগুলি সিল করার জন্য তালার প্রয়োজন হয়নি। বাক্সগুলি এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছিল যাতে সেগুলিকে বিশেষ কাগজের সাহায্যে সিল করার পর সিল না সরানো পর্যন্ত খোলা না যায়।
ভোট শুরুর আগে পোলিং এজেন্টদের সই সংগ্রহ করে বাক্সগুলিতে কাগজের সিল করে দেওয়া হয়েছিল সেবার। সিল করার আগে পোলিং এজেন্টদের দিয়ে সই করানোর পিছনেও যথেষ্ট কারণ ছিল। কারণ কেউ যদি কাগজের সিলটি সরিয়ে অন্য কাগজের সিল রাখার কথা চিন্তা করে, তবে প্রার্থীদের সেই না থাকলে তার সেই চেষ্টা ব্যর্থ হবে। তাই কেউ কারচুপি করতে চাইলে সহজেই তা ধরা যাবে। নিরাপত্তার জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে কাগজের সিল প্রস্তুত করা হয়েছিল।
বিশেষ ধরনের কাগজের সিলই ব্য়বহার করা হয়েছিল ব্যালট বাক্সগুলিতে। বিশেষ এই সিল নকল করার কাজও মোটেও সহজ ছিল না। সেক্ষেত্রে কারচুপির সম্ভাবনাও ছিল কম। নির্বাচন কমিশন নাসিকের ইন্ডিয়া সিকিউরিটি প্রেসে বিশেষ এই কাগজের সিল প্রস্তুত করেছে। কাগজের সিল ছিল দুই ধরনের। কাগজের সিলগুলিতে গোলাপী রঙে 'ইলেকশন কমিশন ইন্ডিয়া' লেখা ছিল। কাগজের সিল থাকার কারণে, ব্যালট বাক্সে তালা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। ২০ লাখের বেশি ব্যালট বাক্সে তালার পরিবর্তে কাগজের সিল বসিয়ে সেবার সাশ্রয় হয়েছিল মোটা টাকা।