সত্যি কি EVM-এ কারচুপি সম্ভব? ব্যাখ্যা প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের
এই সময় | ০১ এপ্রিল ২০২৪
লোকসভা ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে। দিন যত এগিয়ে আসছে শাসক-বিরোধী দুই প্রান্তের প্রার্থীরা নিজেদের নির্বাচনী প্রচারে ঝড় তুলতে শুরু করেছেন। আর ভোট আসতেই ফের একবার EVM নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধী শিবির। সত্যিই কি EVM ট্যাম্পার করা সম্ভব?বিরোধী পক্ষের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, ইলেকট্রনিক মেশিন হওয়ার দরুন EVM-এ কারচুপি করা সম্ভব। EVM হ্যাক করা যায় বলেও নাগাড়ে অভিযোগ তুলেছে তারা। বহুক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে পরাজিত প্রার্থীরা EVM কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন।
নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যনির্বাচন কমিশনের EVM-এ কারচুপির অভিযোগ স্পষ্টভাবে খারিজ করে দিয়েছে। লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার সময়ও EVM হ্যাকিংয়ের অভিযোগ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের তরফে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, 'এখনও পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট এবং অন্য আদালতগুলিতে ওঠা এমন ৪০টি মামলা খারিজ হয়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রতি বছর নির্বাচনের পর EVM-এর উপর দোষ চাপানো হয়। EVM-এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যারা EVM-এর মাধ্যমে জয় পেয়েছেন, তারাও অভিযোগ করতে ছাড়েন না।'
EVM-এ কারচুপি সম্ভব?দেশের প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ড. এসওয়াই কুরেশি EVM কারচুপির অভিযোগ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'EVM-এ কারচুপি সম্ভব নয়। আমি দাবি করে বলতে পারি, এই মেশিনে কারচুপি করা সম্ভব নয়।' তাঁর সংযোজন, 'যদি এটা মেনে নেওয়া হয় দু'চারটি EVM মেশিনে গড়বড় হয়েছে, তার অর্থ এই নয় যে কারচুপি সম্ভব। যারা এই ধরণের অভিযোগ তুলছেন, তারাও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। আসলে পরাজয় স্বীকার করার মতো ক্ষমতা থাকা উচিত প্রত্যেকের। যারা হার স্বীকার করতে পারেন না, তারাই EVM-এ হ্যাকিংয়ের অভিযোগ তোলেন।'
কবে থেকে শুরু হয় EVM-এর ব্যবহার?প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এসওয়াই কুরেশি বলেন, 'কংগ্রেসের শাসনকালেই EVM-এর ব্যবহার শুরু হয়। যদি হ্যাকিং কিংবা কারচুপি হত তাহলে কংগ্রেস ক্ষমতাচ্যুত হত না।' তিনি আরও বলেন, 'আমার প্রশ্ন EVM কোন দলের শাসনকালে প্রথম এসেছিল? কংগ্রেসের শাসনকালেই তো EVM-এর প্রথম ব্যবহার শুরু হয়। যদি কারচুপি হত তাহলে কংগ্রেস ক্ষমতাচ্যুত কেন হল? সে ক্ষেত্রে তো এতকাল কংগ্রেসই ক্ষমতায় থাকত। যদি কারচুপি হয়ে থাকত, তাহলে BJP বাংলা, পঞ্জাব, কর্নাটকে পরাজিত হত? আসল বিষয় হল, যারা হেরে যায় তারাই EVM-এর উপর দোষ চাপায়।'
EVM-এর ইতিহাস১৯৮০ সালে প্রথম ভারতের নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলির সামনে EVM-এর প্রদর্শন করেন। এটি ব্যবহারের নির্দেশও দেওয়া হয়। ১৯৮২ সালে কেরালা বিধানসভা নির্বাচনে এটি প্রথমবার ব্যবহার করা হয়। তবে পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্ট এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সেই নির্বাচন বন্ধ করে দেয়। এরপর আইন সংস্কারের পর EVM-এর ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৯৮ সালে মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান এবং দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের একাধিক আসনে EVM-এর মাধ্যমে ভোটদান হয়। ১৯৯৯ সালে লোকসভা ভোটের সময় ৪৫ সংসদ আসনে EVM-এ ভোট দেন ভোটাররা। ২০০৪ সালে প্রথমবার লোকসভার ৫৪৩টি আসনেই EVM-এ ভোটদান হয়।