সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়শই বিভিন্ন পোস্ট ভাইরাল হয়। তার মধ্যে একাধিক পোস্টের সত্যতা নেই। সাধারণ মানুষ না জেনেই সেগুলি শেয়ার করে ফেলেন পুনরায় বা সত্যি ভেবে সেগুলি বিশ্বাস করেন। সম্প্রতি এমনই এক পোস্ট সোশ্য়াল মিডিয়ায় ভাইরাল। ভুয়ো সেই পোস্টের সত্যতা জানা গেল ফ্যাক্ট চেকের মাধ্যমে।ভুয়ো পোস্টে কী দাবি করা হয়েছে?
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ওই ভুয়ো পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (NIA) সহ দেশের কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা সাম্প্রতিক সময়ে এমন বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে সমীক্ষা চালিয়েছে। ভুয়ো সেই পোস্টে দাবি, NIA-এর সেই সমীক্ষা থেকেই ম্পষ্ট নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার সমর্থন হারাচ্ছে মানুষের। সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনই দাবি করে একটি পোস্ট করেছেন জাতীয় কংগ্রেসের এক সদস্য়। সেই পোস্টে বলা হয়েছে, 'আমার এক বন্ধু যিনি NIA-তে কাজ করেন তিনি আমায় জানিয়েছেন বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে সাম্প্রতিক সময়ে বিজেপি সরকারকে মানুষ কতটা সমর্থন করে তা জানতে সমীক্ষা চালিয়ে দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। যা রেজাল্ট বেরিয়েছে তা চমকে যাওয়ার মতো। সমীক্ষার ফলাফল থেকেই স্পষ্ট সমর্থন হারাচ্ছে বিজেপি।'
ভুয়ো ওই পোস্টে দাবি করা হয়েছে, সমীক্ষা থেকেই স্পষ্ট এবার বিজেপি মেরেকেটে ১৯০-২২০ আসন পাবে। রাম মন্দির ইস্যুকে সামনে ভোটারদের মন জয়ের কৌশলও ব্যর্থ হয়েছে বিজেপির। ভুয়ো ওই পোস্টে দাবি, সমীক্ষা থেকেই স্পষ্ট দেশের যুব সম্প্রদায় ও মহিলারা মোদীর উপর সন্তুষ্ট নয়। ৫০ বছর ঊর্ধ্ব ব্য়ক্তিরা মোদীকে পছন্দ করছেন না। হিন্দি বলয়ের মধ্যে হরিয়ানা ও রাজস্থানে বিজেপি ফলাফল এক লাফে অনেকটাই কমবে। পূর্ব ভারত তথা বাংলা ও ঝাড়খণ্ডে ভালো ফল হবে না বিজেপির। ভুয়ো পোস্টে আরও দাবি করা হয়েছে, সমীক্ষার সামগ্রিক ফলাফল দেখে চিন্তিত বিজেপি। আর এসব দেখেই প্রতিহিংসার বশে কংগ্রেসের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ, আয়কর বিভাগের অপব্যবহার করে ১৭০০ কোটি টাকা আদায়ের মতো চাল চালছে। উল্লেখ্য, একাধিক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এই ভুয়ো পোস্টটি শেয়ার করা হয়েছে।
সত্য ঘটনাটি কী?
সরকারি সূত্র মারফত খবর NIA কোনও রাজনৈতিক দলের জন্য কোনওরকম সমীক্ষা চালায়নি। এনিয়ে আসল তথ্য সর্বপ্রথম যাচাই করেছে সংবাদমাধ্যম BOOM। এক সরকারি আধিকারিক BOOM-এর প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, 'NIA কোনও রাজনৈতিক সমীক্ষা চালায় না।'
সিদ্ধান্ত
বর্তমানে, NIA ভারতে প্রধান সন্ত্রাস দমন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করে। সন্ত্রাসবাদ ও অন্য়ান্য জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত তদন্ত পরিচালনার দায়িত্বে থাকে NIA। তাই ভাইরাল হওয়া পোস্টটিতে NIA-সহ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির নাম করে যে সমীক্ষা চালানোর কথা বলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুয়ো।
রাজনৈতিক দলগুলির জন্য সমীক্ষা পরিচালনা কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আদেশ বা এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। সাধারণত প্রাইভেট সংস্থাগুলি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে সমীক্ষা চালায়। জনমানসে সেই রাজনৈতিক দলগুলির সম্পর্কে মানুষের কী ধারণা বা নির্বাচনে কী ফলাফল হতে পারে সেই সংক্রান্ত সমীক্ষা চালায় এই ধরনের সংস্থা। উদাহরণস্বরূপ দ্য টেলিগ্রাফের সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে, বিজেপি গত বছর দেশব্যাপী সব লোকসভা কেন্দ্রের উপর সমীক্ষা চালানোর জন্য দু'টি বহিরাগত নির্বাচন পরামর্শদাতা সংস্থার উপর দায়িত্ব দিয়েছিল। একটি ছিল চেন্নাই ভিত্তিক সংস্থা ও অন্যটি ছিল দিল্লি ভিত্তিক সংস্থা।
এই বছরের শুরুর দিকে বিজেপি নমো অ্য়াপে 'জন মন' অনলাইন সমীক্ষা শুরু করে। এই সমীক্ষার লক্ষ্য নাগরিকদের মতামত জানা ও ২০২৪ সালের এপ্রিলে নির্ধারিত লোকসভা নির্বাচনের আগে শাসক দলের কর্মক্ষমতা মূল্যায়ণ করা। শাসক দলের শাসন, নেতৃত্ব ও সাংসদদের কাজে সন্তুষ্ট কিনা সেসব বিষয়ে জনগণের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছে।
(This story was originally published by Boomlive.in and republished by Ei Samay Digital as part of the Shakti Collective)