খুনের প্রমাণ লোপাট করতে দেহে নুনের বস্তা! গ্রেপ্তার ১
এই সময় | ০২ এপ্রিল ২০২৪
অরূপকুমার পাল, ঝাড়গ্রাম: অঙ্ক কষেই সব কিছু ঠিক করেছিল অভিযুক্ত। খুনের পরে মৃতদেহ ফেলে দেওয়া হয়েছিল গোপীবল্লভপুরে ঝিল্লির জঙ্গলে। দ্রুত পচন ধরাতে দেহে চাপা দেওয়া হয়েছিল একবস্তা নুন। সংসারে গড়পড়তা যেখানে মাসিক দু-তিন কেজি নুন কাফি, সেখানে একবস্তা কেন? এরপরেই তদন্তে নেমে খুনের কিনারা করে পুলিশ।নুনের বস্তার সূত্রে গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্তকে। উদ্ধার হওয়া পচাগলা দেহের পরিচয়ও জানা যায়। গোপীবল্লভপুরের এসডিপিও পারভেজ সরফরাজ বলেন, ‘সমর সাউ (৪০) কে খুনের ঘটনায় রবিবার তাঁর ভাই অমর সাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেহটি পচে যাওয়ায় আমরা প্রথমে তাঁর পরিচয় জানতে পারিনি। দেহটির উপরে নুনের বস্তা চাপা দেওয়া ছিল। দেহে দ্রুত পচন ধরাতে নুনের ব্যবহার করেছিল অভিযুক্ত। সেটাই আমাদের তদন্তে সাহায্য করেছে।’
সোমবার ধৃত অমর সাউকে ঝাড়গ্রামের এসিজেএম বিচারক আনিসুর রহমানের এজলাসে তোলা হয়। মামলার তদন্তকারী অফিসার খুনের ঘটনার পুনর্নিমাণ ও খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের জন্য পুলিশি হেফাজতের আবেদন করেন। সরকারি আইনজীবী পবিত্রকুমার রানা বলেন, ‘বিচারক পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৮ মার্চ গোপীবল্লভপুর থানার ঝিল্লি পাখিরালয়ের জঙ্গল থেকে এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ আস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজে পাঠায়। মৃতদেহের পরিচয় জানতে শুরু হয় তদন্ত। গত ৩০ মার্চ গোপীবল্লভপুর থানায় সমর সাউ নামে এক যুবককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তাঁর পরিবার।
দু’দিন আগে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির দেহ দেখানো হয় পরিবারকে। দেহ পচে যাওয়ায় শনাক্ত করতে খানিকটা সমস্যা দেখা দেয়। এরপর পুলিশ তদন্তে নেমে মুদির দোকান ও ভুষিমালের দোকানে হানা দেয়। গত এক সপ্তাহের মধ্যে কে, কে নুনের বস্তা কিনেছে, জানতে চায় পুলিশ। তদন্তে অমর সাউয়ের কথা জানতে পারেন তদন্তকারীরা।
দেহ উদ্ধারের চার দিন আগে গত ২৪ মার্চ বীরসাচকের একটি দোকান থেকে এক বস্তা নুন কিনেছিল সে। তারপরেই তদন্তের মোড় ঘুরে যায় অন্যদিকে। সন্দেহের তালিকায় থাকা অমর সাউকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। জেরায় ভেঙে পড়ে দাদাকে খুনের কথা কবুল করে সে।
পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে, সমর ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতেন। মথ-রঘুনাথপুর গ্রামের বাড়িতে মা,বাবার সঙ্গে দু’জনেই থাকতেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে টাকা-পয়সা এবং সম্পত্তি নিয়ে মাঝে মধ্যেই গন্ডগোল লেগে থাকত বলে অভিযোগ। ২২ মার্চ সন্ধ্যায় দাদা সমরের সঙ্গে পেশায় অটোচালক ভাই অমরের গন্ডগোল হয়। লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান সমর।
প্রতিবেশীরা এলে, মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছে বলে দাবি করে অভিযুক্ত। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে দাদাকে সোজা ঝিল্লি পাখিরালয়ের জঙ্গলে নিয়ে চলে যায় সে। রাত হওয়ায় বিষয়টি কারও নজরে পড়েনি। সেখানে গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করা হয় সমরকে। দু’দিন পরে বীরসাচক থেকে ৫০ কিলোর একটি নুনের বস্তা কিনে ফের জঙ্গলে গিয়ে দাদার দেহের উপরে ঢাকা দেয় সে।