এই সময়, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি: মাথার উপর থেকে কয়েক মিনিটে উড়ে গিয়েছে টিনের চাল। ভিটেতে মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে তিনটি চালা ঘর। কপালের বলিরেখায় স্পষ্ট চিন্তার ভাঁজ। তবুও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পাঁচ মিনিটের জন্যে তাঁর উঠোনে পা রেখে যে তাঁর দুর্দশার কথা শুনেছেন, তাতেই যেন বড় আস্থা খুঁজে পেয়েছেন আলিপুরদুয়ারের তোপসিখাতার ছয় মাইলের বৃদ্ধা জ্যোৎস্না রায়।তিনি বলেন, ‘কী পাব, কী পাব না, তা নিয়ে আমার কোনও প্রত্যাশা নেই। শত ব্যস্ততার মাঝেও যে মুখ্যমন্ত্রী আমার ভাঙা দুয়ারে এলেন, এর চেয়ে বড় পাওনা আর কী হতে পারে?’ মিনি টর্নেডোর খবর পেয়ে রবিবার রাতেই জলপাইগুড়ি ছুটে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার আলিপুরদুয়ারে যান তিনি। দুপুর ২.৫৬ টা নাগাদ আলিপুরদুয়ারের পুলিশ লাইনের মাটি ছোঁয় মুখ্যমন্ত্রীর চপার।
তারপর তাঁর কনভয় ছোটে আলিপুরদুয়ার এক নম্বর ব্লকের ঝড় কবলিত তোপসিখাতার ছয় মাইল এলাকায়। সেখানেই তোপসিখাতা এক নম্বর বিএফপি স্কুলে জেলা প্রশাসনের তরফে খোলা হয়েছে আশ্রয় শিবির। সেখানে পৌঁছেই দুর্গতদের ভিড়ে মিশে যান মমতা। কোলে তুলে নেন এক শিশুকন্যাকে। মন দিয়ে শোনেন মাথার ছাদ হারানো মানুষগুলির অভাব-অভিযোগ।
সবার কথা শোনার পরে তিনি বলেন, ‘এখন নির্বাচনী বিধিনিষেধ চলছে। কিন্তু বিপর্যয়ের সময়ে আমাদের সরকার অথবা জেলা প্রশাসন তো চুপ করে বসে থাকতে পারে না। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বুঝে জেলা প্রশাসনকে তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। রবিবার সারা রাত জেগেছিলাম। অনুমান করতে পারিনি যে, আলিপুরদুয়ারে এত বড় বিপর্যয় ঘটে গেছে। তাই ছুটে এসেছি। সময়ের অভাবে ও আমার হেলিকপ্টার দিনে আড়াই ঘণ্টার বেশি উড়তে না পারায় কুমারগ্রাম অথবা কোচবিহারে যাওয়া হলো না। কিন্তু আমি সবার পাশে আছি। মঙ্গলবার মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস কুমারগ্রামে যাবেন।’
এরপর বিকেল ৪.২৫ নাগাদ পুলিশ লাইনের হেলিপ্যাড থেকে চালসার উদ্দেশে উড়ে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই একটি বেসরকারি রিসর্টে রাতে থাকছেন তিনি। এ দিকে, রবিবারের আতঙ্কে এখনও যেন গ্রামবাসীদের পিছু ছাড়ছে না। কারও মাথা ফেটেছে, কারও বা পা ভেঙেছে ঝড়ের কবলে পড়ে। তিন জেলাতেই এক অবস্থা। এখনও বিদ্যুৎহীন বেশ কিছু এলাকা।
কৃষকদের আশঙ্কা, নষ্ট হয়েছে কোটি টাকার ফসল। জেলা প্রশাসন তা জানতে নথি সংগ্রহ করছে। ময়নাগুড়ির বার্নিশ এবং রাজারহাট গ্রামে কাঁচাবাড়ির যেমন চাল উড়েছে, তেমনই লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে কংক্রিটের ঘর। ছড়িয়েছিটিয়ে গেরস্থালির জিনিস। রাস্তায় পড়ে অজস্র টিনের চাল, ভাঙা গাছ।
সকাল থেকে গোটা এলাকা ঘুরে দেখছিলেন জলপাইগুড়ির জেলাশাসক শামা পারভিন। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের চিফ সেক্রেটারি। উদ্ধারকার্য সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা ঠিকভাবে ত্রাণ পাচ্ছেন কিনা, সে সব কিছুই ঘুরে দেখেন তিনি। কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত রান্না করা খাবার বিলি করেছে।