আদিবাসীদের জমি দখলের সিন্ডিকেট, ৩১ কোটি টাকা পাচার শাহজাহানের!
এই সময় | ০২ এপ্রিল ২০২৪
এই সময়: সন্দেশখালিতে আদিবাসীদের জমি এবং মাছের ভেড়ি দখলের মতো গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত হলেন শেখ শাহজাহান। এই কারবারে তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ৩১ কোটি টাকা পাচারের হদিশ পেয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সন্দেশখালির বেতাজ বাদশাকে গ্রেপ্তারের পরে ইডি আদালতকে জানিয়েছে, জমি দখলের জন্য শাহজাহানের নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয়েছিল সিন্ডিকেট।খাতাকলমে দখল হওয়া সেইসব জমি এবং ভেড়ির মালিক দেখানো হতো সিন্ডিকেটের সদস্যদের। এর পর সেই সব ভুয়ো মালিকদের ব্যবহার করে চিংড়ি কেনাবেচার লেনদেন দেখিয়ে পাচার করা হতো টাকা। সোমবার বিশেষ আদালতে জমি দখল এবং চিংড়ি দুর্নীতি মামলায় শাহজাহানকে হাজির করে এই দাবি করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
এ দিন আদালতে কেন্দ্রীয় এজেন্সির আইনজীবী অভিযোগ করেন, ‘সন্দেশখালির মানুষের স্বার্থে শাহজাহানকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে।’ এমনকী, জেলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে যে ভাবে তাঁকে শোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে, তাতেও আপত্তি তোলেন শাহজাহানের আইনজীবী জাকির হোসেন।
এ দিন দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শোনার পরে শাহজাহানকে ওই মামলায় ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এ দিন শাহজাহানকে হেফাজতে নিতে আদালতে একের পর এক যুক্তি তুলে ধরেন ইডি-র আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী।
তিনি দাবি করেন, ‘সন্দেশখালিতে সিন্ডিকেট তৈরি করেছিলেন শাহজাহান। আদিবাসীদের জমি বা ভেড়ি দখলের পরে নিজের লোকেদের মালিক বানিয়ে দিতেন তিনি। জমি দখলের কালো টাকা চিংড়ি কেনাবেচার মাধ্যমে সাদা করা হতো। শেখ সাবিনা নামে শাহজাহানের একটি সংস্থার হদিশও মিলেছে। ওই সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকার লেনদেনের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।’
সূত্রের খবর, যে সংস্থার নাম তদন্তে উঠে এসেছে তা শাহজাহানের মেয়ের নামে খোলা হয়েছিল। ফলে, এবিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য শাহাজাহানকে নিজেদের হেফাজতে নিতে আদালতে আবেদন জানান ইডি-র আইনজীবী। সওয়াল-জবাবের সময়ে অভিযুক্ত নেতার গ্রেপ্তারি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁর আইনজীবী।
তিনি দাবি করেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বসিরহাট মহকুমা আদালতের অনুমতি নিয়ে ইডি জেলে গিয়েছিল। শোন অ্যারেস্ট দেখানো হলেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করানো হয়নি তাঁকে। যে এফআইআরের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করেছে ইডি, পুলিশের জমা দেওয়া সেই মামলার একটি চার্জশিটেও শাহজাহানের নাম নেই।’
দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে কেস ডায়েরি দেখতে চান বিচারক বিদ্যুৎকুমার রায়। তদন্তকারী অফিসার কেস ডায়েরি পেশ করেন। ইডি সূত্রে খবর, ওই মামলার প্রাথমিক তদন্তে এখনও পর্যন্ত ৩১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা পাচারের তথ্য উঠে এসেছে। দখল হওয়া জমি এবং ভেড়ির মালিক বানানো হতো যাদের, তাঁরাও এই মামলায় সাক্ষী দিয়েছেন বলে দাবি তদন্তকারী সংস্থার।
এ দিন শাহজাহানকে হেফাজতে নিতে বিশেষ আদালতে আবেদন করে তদন্তকারী সংস্থা। বিচারক শাহজাহানকে বিকেল চারটের মধ্যে পেশ করার নির্দেশ দেন। এর পর, তাঁকে বসিরহাটের সংশোধনাগার থেকে আনা হয় ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিচার ভবনে। লকআপে ঢোকার সময়ে ভিড়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিতে হোঁচট খান সাসপেন্ডেড তৃণমূল নেতা শাহজাহান।
আদালত চত্বরে আইনজীবীদের একাংশ শাহজাহানের ফাঁসি চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। প্ল্যাকার্ড নিয়েও অনেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখানে। এখনও পর্যন্ত ধৃত শাহজাহানের বিরুদ্ধে দুটি ইসিআইআর(মামলা) করেছে ইডি। একটি রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে এবং অন্যটি বেআইনি ভাবে জমি দখল এবং মাছ চাষে দুর্নীতির অভিযোগে।
এদিন আদালত থেকে শাহজাহানকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় জোকা ইএসআই হাসপাতালে। সেখান থেকে আপাতত তাঁর ঠিকানা সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি দপ্তর।