মেট্রোয় ভিড়, মাছি তাড়াচ্ছে হাওড়ার বিভিন্ন রুটের অটো
এই সময় | ০২ এপ্রিল ২০২৪
সুপ্রকাশ চক্রবর্তী, হাওড়া: গঙ্গার নীচ দিয়ে মেট্রো পরিষেবা চালু হওয়ার পরে এক পক্ষকালও কাটেনি, তারই মধ্যে দ্রুত যাত্রাপথ বদল হয়েছে হাওড়া শহরের বড় অংশের বাসিন্দার। লোকজন হাওড়া ময়দান থেকেই মেট্রো চড়ে কলকাতায় চলে যাচ্ছেন। ফলে হাওড়া ময়দানের অটোয় ভিড় উপচে পড়লেও হাওড়া স্টেশন লাগোয়া বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত অটোয় যাত্রী বিশেষ হচ্ছে না।হাওড়া বাসস্ট্যান্ড থেকেও ফিরতি পথে যাত্রী মিলছে না অনেক রুটেই। শিবপুর হোক বা সালকিয়া— লোকজন হাওড়া স্টেশনের দিকে না গিয়ে হাওড়া ময়দানে চলে আসছেন। তাই রোজগার একধাক্কায় অনেকটাই কমে গিয়েছে এই রুটের অটো চালকদের।
সালকিয়া, বাঁধাঘাট, পিলখানা, মালিপাঁচঘড়া, বামুনগাছি থেকে হাওড়া স্টেশন ও হাওড়া ময়দান দুই রুটেই অটো রয়েছে। শিবপুর থেকে একটি রুটেই অটো হাওড়া ময়দান হয়ে হাওড়া স্টেশনে আসে। মেট্রো চালু হওয়ার পর থেকে এখন হাওড়া ময়দান রুটের অটোয় দেদার ভিড় হচ্ছে। হাওড়া স্টেশনে যাওয়ার অটো কার্যত মাছি তাড়াচ্ছে।
রুট বজায় রাখতে ফাঁকা অটো নিয়েই হাওড়ায় যেতে হচ্ছে। কিন্তু আরও বিপত্তি হচ্ছে ফেরার পথে। তখন একদমই যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ট্রিপের সংখ্যা কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। তবে রাত ন’টায় মেট্রো বন্ধ হচ্ছে। তার পরে হাওড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রী মিলছে আগের মতোই। কিন্তু দিনের বাকি সময়ের চিত্রটা চালকদের জন্যে মোটেই ভালো নয়।
আগে অনেকেই হাওড়া ময়দান পর্যন্ত বাসে এসে সময় বাঁচাতে অটো ধরে হাওড়া স্টেশনে চলে যেতেন। তারপর সেখান থেকে বাস ধরতেন। এমনই এক যাত্রী শেখর প্রামাণিক বলেন, ‘মেট্রো হয়ে যাওয়ায় এখন ময়দান থেকে আর অটো ধরে হাওড়ায় যাই না। বাস ময়দানে দাঁড়িয়ে থাকে অনেকক্ষণ, তাই বাধ্য হয়ে অটো ধরতে হতো। হাওড়ায় যেতে সাত টাকা ভাড়া লাগে। ইদানীং দশ টাকা তো ন্যূনতম ভাড়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু দশ টাকায় এখন এসি মেট্রোয় ১২ মিনিটে ধর্মতলা চলে যাচ্ছি। মানে গুঁতোগুঁতি করে যতক্ষণে হাওড়ায় পৌঁছতাম ততক্ষণে আরামে ধর্মতলায় চলে যাচ্ছি। ট্রেনের সময় জেনে গিয়েছি। তাই তেমন অপেক্ষাও করতে হচ্ছে না।’
আর এক যাত্রী সপ্তর্ষি হালদার বললেন, ‘অটোওয়ালাদের যা মেজাজ, তার থেকে বেঁচেছি। বাসের কন্ডাক্টররা তো এখান থেকে গাড়ি এগোতেই চান না। এখন ওঁরা বুঝছেন।’ হাওড়ার বাসের গতি নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তাই টোটো বা ই-রিকশা চালু হওয়ার পরে অনেকেই বাড়তি ভাড়া দিয়ে আরামে ও তাড়াতাড়ি যাওয়ার পন্থা বেছে নিতে শুরু করেন।
বিদ্যাসাগর সেতু চালু হওয়ার পঁচিশ বছর পরেও আমতলা ওপি-শ্যামবাজার, চ্যাটার্জিহাট-ধর্মতলা, রামরাজাতলা-রাজাবাজারের মতো রুট টিকে ছিল। কিন্তু টোটোর দাপটে দ্রুত সঙ্কটে পড়ে চ্যাটার্জিহাটের বাস উঠে যায়। রুট ছোট করেও অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারেনি আমতলা ওপি রুটের বাস। এখন মেট্রোর ধাক্কায় চালু থাকা রুটগুলি নতুন করে ধাক্কা খাচ্ছে। বিশেষ করে হাওড়া ময়দান হয়ে হাওড়া স্টেশনগামী অটোর রুট।