এই সময়: গত বছর ওডিশার বাহানারা বাজারে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় বাঁ হাত খুইয়েছিল দক্ষিণ দিনাজপুরের রিয়াজ় আফ্রিদি। এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে আহতদের দেখতে এসে তখনই কিশোরকে কৃত্রিম হাত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর দফায় দফায় চলেছে হাসপাতালে ভর্তি করে সেই হাত লাগানোর প্রস্তুতি সেরেছেন ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন (পিএমআর) বিভাগের চিকিৎসকরা।অবশেষে সোমবার লাগলো ইংল্যান্ড থেকে আমদানি করা লাখ সাতেক টাকা দামের সেই কৃত্রিম রোবটিক হাত। এমন প্রয়াস রাজ্যের সরকারি পরিষেবায় এই প্রথম। এসএসকেএমের পিএমআর বিভাগের চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কনুই কিংবা কবজি ভাঁজ করা থেকে শুরু করে চামচে করে খাবার খাওয়া, এমনকী কোনও কিছু শক্ত করে ধরা— কাঁধ থেকে বাদ পড়া হাতের প্রায় সব কাজই করতে সক্ষম এই রোবটিক আর্ম।
বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিকের কথায়, ‘রিয়াজে়র কাঁধের একেবারে গোড়া থেকেই হাতটা বাদ গিয়েছিল। তাই কৃত্রিম হাত লাগানোটা খুব চ্যালেঞ্জের ছিল। কারণ, মাংসপেশি বেশি থাকলে কৃত্রিম হাত নাড়াচাড়া করা সহজ হয়।’ কিন্তু রিয়াজের ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। কেননা, গত নভেম্বর থেকেই বারে বারে কিশোরকে হাসপাতালে ভর্তি করে কাঁধের ব্যায়াম ও অঙ্গ সঞ্চালনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তালিম দেওয়া হয়েছে। চলেছে অনুশীলনও।
তাই নতুন হাত পেয়ে আনন্দে চোখের জল এদিন বাঁধ মানেনি আর দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র রিয়াজের। গত ২ জুন যশবন্তপুর এক্সপ্রেসে করে বেঙ্গালুরু থেকে বাড়ি ফেরার সময়ে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় বাঁ হাতটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল রিয়াজে়র। এসএসকেএমে ভর্তি করার পর সেই হাতটি একেবারে কাঁধ থেকে বাদ দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না চিকিৎসকদের কাছে। ফলে ভয়াবহ মানসিক আঘাত পায় কিশোর।
তাকে দেখতে এসে তখনই মুখ্যমন্ত্রী এসএসকেএম কর্তাদের নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন, রিয়াজ়ের জন্য অত্যাধুনিক কৃত্রিম হাতের ব্যবস্থা করতে হবে। সেইমতো প্রস্তুতি নেয় হাসপাতালও। ইংল্যান্ড থেকে আনানো হয় এই কৃত্রিম রোবটিক হাত। তার মধ্যে রয়েছে অজস্র সেন্সর, যেগুলি কাঁধে থাকা স্নায়ুগুচ্ছের সঙ্কেত মেনে হাত ভাঁজ করা, মুঠো করা, কোনও কিছু ধরার কাজ ভালো ভাবেই করতে পারবে কৃত্রিম হাত।