এই সময়: ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি একটা খুন। যে রহস্যের কিনারা হলো না মার্চ পার করেও! দক্ষিণ স্পেনের সমুদ্র-ঘেঁষা রিসর্ট টাউন ভিলাজয়োসার একটি গ্যারেজের বাইরে দু’জন অজ্ঞাতপরিচয় দু্ষ্কৃতী পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে পরপর ছ’টা গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়ে যায় রুশ এয়ারফোর্সের প্রাক্তন পাইলট ম্যাক্সিম কুজমিনভকে।অভিযোগ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে এই পাইলটই গত বছর মিলিটারি কপ্টার রাশিয়া থেকে পালিয়ে ইউক্রেন শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন। এমনকী, ‘শত্রু’ দেশের নাগরিকত্বও! ঘটনাচক্রে, এর ক’দিন পরেই আর্কটিক সেলে রহস্যমৃত্যু হয় রাশিয়ার প্রধান বিরোধী।
কিন্তু মারল কারা? স্পেনের গোয়েন্দারা লাগাতার অভিযোগ করে চলছেন, তাঁদের দেশে ঢুকে রাশিয়াই ওই কোভার্ট অপারেশন চালিয়েছে। যার প্রমাণ হিসেবে তাঁরা গ্যারেজের সামনে থেকে পাওয়া গুলির খোলের কথা বলছেন। স্প্যানিশ পুলিশ গুয়ার্দিয়া সিভিলের দাবি— এই গুলির খোল নিশ্চিত ভাবেই সোভিয়েত আমলের সেমি-অটোম্যাটিক মাকারভ পিস্তলের।
তাতেই বা খুনের পিছনে ‘রাশিয়ার হাত’ প্রমাণ হয় কী ভাবে? নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্প্যানিশ পুলিশ কর্তার দাবি, ‘ছ’টা গুলিতে ঝাঁঝরা করে যে ভাবে বডির উপর দিয়ে একাধিক বার রয়্যাল এনফিল্ড চালিয়ে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা, তাতে প্রতিশোধের বার্তা ছিল স্পষ্ট। আই উইল ফাইন্ড ইউ, আই উইল কিল ইউ— খুনের পর যেন এই মেসেজটাই দিতে চেয়েছিল ওরা।’
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, MI-8 মিলিটারি কপ্টার নিয়ে রাশিয়া ছেড়ে পালানোর দিনই নিজের চরম বিপদ ডেকে এনেছিলেন ম্যাক্সিম। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যে তাঁর ‘বিশ্বাসঘাতক’কে রেহাই দেবেন না, গোড়াতেই সেই ইঙ্গিত দিয়েছিল রাশিয়ান মিলিটারি অ্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিসেস। রীতিমতো প্রেস কনফারেন্স করে ক্রেমলিন সে বার বলেছিল, ‘দেশবাসীর সঙ্গে এই বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে ওই পাইলটকে। যেখানেই থাকুক, ম্যাক্সিমকে খুঁজে আমরা খুঁজে বার করে দেশের আইন অনুযায়ী শাস্তি দেবই।’
স্পেনে কি সেটাই করে দেখাল ক্রেমলিন? প্রাথমিক ভাবে যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করেছে পুতিনের দেশ। যদিও স্পেনের দাবি, ইউরোপ জুড়ে রাশিয়ান স্পাই নেটওয়ার্ক মারাত্মক শক্তিশালী। বারবার এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেও আটকানো যায়নি ক্রেমলিনকে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্পেনেরই এক পুলিশকর্তা দাবি করেন, ২০১৯-এ বার্লিনে প্রাক্তন চেচেন কম্যান্ডার এবং তার আগের বছর রাশিয়ার প্রাক্তন সেনা-গোয়েন্দা সের্গেই স্ক্রিপালকে ব্রিটেনে ঠিক এ ভাবেই মেরেছিল রাশিয়ার গুপ্তচর সংস্থা।
নাভালনির মৃত্যুর পিছনেও সরাসরি ক্রেমলিনের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এমনকী, সাবেক রুশ গুপ্তচর সংস্থার কেজিবি-র সিগনেচার পাঞ্চেই সেলবন্দি অবস্থায় নাভালনির মৃত্যু হয় বলে দাবি অনেকের।
ম্যাক্সিম কি নিজের বিপদের কথা জানতেন না? অবশ্যই জানতেন। আর ঠিক সেই কারণেই গত অক্টোবরে ইউক্রেন থেকে চলে গিয়ে স্পেনে ঘাঁটি গেড়েছিলেন তিনি। নাম পাল্টে-পাল্টে থাকছিলেন অত্যন্ত সাধারণ ভাবে। এস ক্লাসের ব্ল্যাক মার্সিডিজ চড়তেন। বাছাই করা বারে যেতেন। তা সত্ত্বেও কী ভাবে রাশিয়া তাঁর খোঁজ পেল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।