• ১২ বছরের কিশোরীকে ধূমধাম করে বিয়ে ৬৩-র পুরোহিতের ! 'কাম' বৃদ্ধিতে নাবালিকার গায়ে সুগন্ধি প্রয়োগ
    এই সময় | ০২ এপ্রিল ২০২৪
  • না, এখনও অভিশাপমুক্ত হয়নি সমাজ! অন্ধকারাচ্ছন্ন মনোভাব কাটিয়ে উঠতে এখনও বোধহয় অনেকগুলো বছর পার করা বাকি। ছোট্ট মেয়ে, বয়স মেরেকেটে ১২ বছর হবে। আর এই বয়সেই তাকে 'বিয়ের দাঁড়িপাল্লায়' চাপিয়ে দেওয়া হল। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার ঘানায় ৬৩ বছরের এক উচ্চবর্ণের পুরোহিতের ১২ বছরের এক নাবালিকার বিয়ের খবর প্রকাশ্যে আসতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় হইচই। নিন্দা নেটিজেনদের। ২১ শতকেও দাঁড়িয়ে কী ভাবে এমন প্রথা কোনও দেশে হইহই করে পালন করা হয় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন নেটিজেনরা।সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্য়ে প্রকাশ্যে আসে নুমো বোরকেতে লয়েহ সুরু XXXIII-এর বিয়ের একটি পোস্ট। সেই পোস্টে দেখা যায় পেশায় পুরোহিত নুমো বিয়ে করছেন এক ১২ বছরের নাবালিকাকে। একা নন, বিয়ে নাকি হচ্ছে প্রথা মেনে। আশপাশে দাঁড়িয়ে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। অভিযোগ, জোর করে ওই নাবালিকাকে বিয়ে করেছেন ওই পুরোহিত। তাও আবার সমাজের তথাকথিত 'কেউকেটা'-দের সামনে। হইহই করে তাঁরাও এই বিয়েতে সামিল হয়েছেন। আর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই নিন্দার ঝড় বয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

    যে নাবালিকাকে বিয়ে করেন নুমো তার বয়স মাত্র ১২ বছর। সাজিয়ে-গুছিয়ে নুমোর সামনে পেশ করা হয় তাকে। নুমোর কাছে বেশ পরিপাটি ভাবে পোশাক পরে সেজেগুজে যেতে গুজে হাজির হয় ওই নাবালিকা। অভিযোগ, ছোট্ট ওই মেয়েটিকে বউয়ের বেশেই হাজির হতে বলা হয় নুমোর সামনে। এখানেই শেষ নয়, যৌন চাহিদা বৃদ্ধিতে তাকে সুগন্ধিও মেখে আসার নিদান দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। বিষয়টির নিন্দা করতে ছাড়ছেন না সমালোচকরা। তাদের যুক্তি, ওই পুরোহিতের এই ধরনের বিয়ে থেকে এটাই প্রমাণ হচ্ছে বিয়ে মানে শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়। এই ধরনের প্রথা যদি থেকেও থাকে তবে তা বিলোপের জন্য সওয়াল করেছেন নেটিজেনরা। পাশাপাশি সুরুর বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি তুলেছেন তাঁরা। তুরুর 'গোরবু উলোমো' উপাধিও রয়েছে। সেই বিচারে তিনি একজন সমাজের উচ্চ বর্ণের পুরোহিত। তিনি এই ধরনের কাজ কী করে করতে পারেন প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন তাঁরা। বিষয়টির নিন্দা করেছেন ঘানাবাসীও। বিয়ের সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন ওই সম্প্রদায়ের এক ডজনেরও বেশি সদস্য। তাঁদের সকলের উপস্থিতি কী ভাবে এমন বিয়ে হয় তা নিয়ে সরব হয়েছেন সকলে।

    তবে সমালোচনা কানে তুলতে নারাজ নুনগুয়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। ওই পুরোহিত ও নাবালিকা দু'জনের ওই সম্প্রদায়ভুক্ত। তাঁরা অবশ্য এই বিয়ের সমর্থনেই সওয়াল করেছেন। সমালোচনাকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। ওই সম্প্রদায়ের কয়েকজন নেতা স্থানীয় ব্যক্তি এই বিয়ের সমর্থনে আবার যুক্তিও দিয়েছেন। তাঁদের যুক্তি, 'মানুষ আসলে আমাদের প্রথা ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানে না।' প্রথা-ঐতিহ্যের দোহাই দেখিয়ে 'অপারাধে' মদত দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছেন নেটিজেনরা।

    বিবিসির এক রিপোর্ট অনুযায়ী, দ্বিতীয়বার ওই নাবালিকাকে বিবাহ পরবর্তী দায়িত্ব গ্রহণের স্বীকৃতি স্বরূপ একটি অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে। সেই অনুষ্ঠানে সন্তানধারণেরও অনুমতি পাবে সে। সুরুর যুক্তি, ছয় বছর আগে ওই নাবালিকায় পুরোহিতের স্ত্রী হওয়ার জন্য আচার শুরু করেছিল। তবে সমগ্র এই প্রক্রিয়াটি তার শিক্ষায় কোনও হস্তক্ষেপ করেনি। যদিও ঘানার আইন প্রথাগত বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। তবে সাংস্কৃতিক অনুশীলনের ছদ্মবেশে বাল্যবিবাহকে নিষিদ্ধ করে। ঘানায় বিয়ের জন্য আইনগত ন্যূনতম বয়স ১৮।

    বিবিসির একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘানায় বাল্য়বিবাহের হার কমলেও এখনও এই প্রথাকে সম্পূর্ণকে সমাজ থেকে উপড়ে ফেলা সম্ভব হয়নি। এনজিও গার্লস নট ব্রাইডস অনুসারে এখনও ঘানায় ১৯ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে। ৫ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে ১৫ বছরের আগেই। যদিও বিতর্কিত এই বিয়ের বিষয়ে এখনও সরকারি তরফে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
  • Link to this news (এই সময়)