এই সময়: শুধু আর্জি নয় আর, এবার যেন দাবির সুর। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়টিকে বহু দিন ধরেই পাখির চোখ করে রেখেছে ভারত। মাসখানেক আগে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘আমরা একশো ভাগ নিশ্চিত যে একদিন ঠিক নিরাপত্তা পরিষদের পার্মানেন্ট মেম্বার হবে ভারত। তবে এ-ও বলতে চাই যে, ব্যাপারটা সহজ হবে না। অনেক দেশই আমাদের আটকাতে চাইবে।’এ দিন গুজরাটের রাজকোটে এক সম্মেলনের ফাঁকে একইরকম কনফিডেন্ট শোনাল জয়শঙ্করকে। তবে এবার অন্যদের দোষারোপ নয়। মস্ত্রীর কথায়, ‘নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তার কিছে নেই। একদিন ঠিক হবেই। তবে এত বড় একটা ব্যাপার অ্যাচিভ করতে গেলে এ বার আমাদের আরও অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে।’ বিশ্বের একটা বড় অংশ চাইছে বলেই ভারতের এই ‘স্থায়ী’ ক্লাবে ঢোকাটা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আজ থেকে মোটামুটি আট দশক আগে পথচলা শুরু করে রাষ্ট্রপুঞ্জ। তখন থেকেই রাষ্ট্রপুঞ্জের সিকিউরিটি কাউন্সিলের পার্মানেন্ট মেম্বার পাঁচটি দেশ। এত দিনে সংখ্যাটা কেন বাড়ল না— সেই সওয়াল করতে গিয়েই মন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘চিন, ফ্রান্স, আমেরিকা, ব্রিটেন ও রাশিয়া— নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এই পাঁচটা দেশ ঠিক করে নিল যে ওরাই হবে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। কেন? সেই সময়ে তো আরও অন্তত ৫০টি স্বাধীন দেশের অস্তিত্ব ছিল। এখন রাষ্ট্রপুঞ্জের অনুমোদিত দেশের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ১৯৩-এ পৌঁছেছে। এখনও সিকিউরিটি কাউন্সিলে ৫ স্থায়ী সদস্য থাকবে কেন?’
পরে অবশ্য নিজেই এর ব্যাখ্যা দেন জয়শঙ্কর। রাষ্ট্রপুঞ্জে কোনও খসড়া প্রস্তাব উত্থাপিত হলে তাতে ভেটো দেওয়ার অধিকার রয়েছে একমাত্র স্থায়ী সদস্য দেশগুলির। ভারত বহুবার এ জন্য অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে। কখনও আমেরিকা, আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চিন ভেটো দেওয়া। যেমন, ভারতের পক্ষে বিপজ্জনক বহু পাক জঙ্গিকেই ‘আন্তর্জাতিক জঙ্গি’র তকমা দেওয়া যায়নি শুধু বেজিংয়ের আপত্তিতে।
সরাসরি না-বললেও কার্যত তেমনই ইঙ্গিত দিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, ‘আসলে এই পাঁচটি দেশ নিরাপত্তা পরিষদের পুরো ব্যাপারটাই নিজেদের কন্ট্রোলে রাখতে চায়। এরা অনুমতি না দিলে এখানে কিছুই পরিবর্তন করা যাবে না। প্রস্তাব এলে কেউ সমর্থন করবে, কেউ বিরোধিতা করবে। আর কেউ পেছন থেকে কলকাঠি নাড়বে।’ তবে চিন-রাশিা-ইউএস-ব্রিটেন-ফ্রান্সের এই মনোপলি বেশিদিন চলবে না বলেই দাবি করেন মন্ত্রী। ভারতের মতো জাপান, জার্মানি, ইজিপ্টও নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আর্জি জানাচ্ছে।
বাকিদের সম্পর্কে কোনও মন্তব্য না করলেও মন্ত্রীর কথায়, ‘ভারতকে আর বেশি দিন আটকে রাখা যাবে না। গণতন্ত্রর প্রকৃত অর্থ গত ১০ বছরে বুঝিয়ে দিয়েছে ভারত সরকার। কোভিড অতিমারী সামাল দিয়েও ৭ শতাংশ গ্রোথের দিকে এগোচ্ছে ভারত। বহু দেশই চাইছে ভারত পার্মানেন্ট মেম্বার হোক। এ জন্য আমাদের পরিশ্রম করার পাশাপাশি রাষ্ট্রপুঞ্জেরও উপরেও চাপ তৈরি করতে হবে। ইদানীং বিশ্বের একটা বড় অংশ মনে করছে, ইউএন দুর্বল হয়ে গিয়েছে। এই ধারনার বদল চাই। আমূল সংস্কার চাই রাষ্ট্রপুঞ্জের।’