এই সময়: মহাকাশ এমন একটি জায়গা, যেখান থেকে পৃথিবীকে একটি ভাসমান নীল বিন্দু মনে হয়। আর সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো, ‘সেখান থেকে তুমি কোনও দেশের সীমা রেখা দেখতে পাবে না’—১৯৮৫ সালে মাহাকাশ থেকে ফেরার পরে সৌদি আরবের তৎকালীন যুবরাজ সুলতান ইবনে সালমান আল সৌদ বলেছিলেন এ কথা। সেই কথাই নতুন করে স্মরণ করালেন ভারতের প্রথম মহাকাশচারী উইং কমান্ডার রাকেশ শর্মা।রাকেশ মনে করেন, কাল্পনিক সীমানা দিয়ে ভাগ করা এই পৃথিবীর মতো অবস্থা যেন না হয় মহাকাশ বা অন্য কোনও গ্রহের। তাঁর মত, সে চাঁদই হোক বা অন্য কোনও গ্রহ, সেখানে যে দেশ যা-ই উৎপন্ন করুক না কেন, তা যেন সব দেশের মধ্যে সমবণ্টন করা হয়। তাঁর মোদ্দা বক্তব্য, পৃথিবীর ওই গ্রহগুলিতে যেন নরক নির্মাণ না হয়। মঙ্গলবার একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে রাকেশ ওই কথাগুলি বলেছেন।
রাকেশের কথায়, ‘আপনি যখন উপরে যান, তখন সেখান থেকে কেবল সৌন্দর্য চোখে পড়ে। পৃথিবীর কোনও দেশের কোনও সীমানাই সেখান থেকে চোখে পড়ে না। তখন এটা ভেবে খুব আশ্চর্য লাগে যে, কেন আমরা দ্বন্দ্বের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি! এর মূল কারণ হলো, শক্তিশালীরা চিরকালই দুর্বলদের উপর রাজ করে, তাদের এলাকা দখল করে। উদ্দেশ্যটা হলো, দুর্বলদের অধীনে থাকা প্রাকৃতিক সম্পদ দখল করা। এখান থেকেই স্পষ্ট, এই বিশ্বের সম্পদের বণ্টন ন্যায়সঙ্গত ভাবে হয়নি।’
রাকেশ আরও বলেন, ‘আমার মতে, সমস্ত দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক মান উন্নত করার জন্য মহাকাশ সত্যিই লাভজনক হতে পারে৷ আমি মনে করি, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইসরো’ বিক্রম সারাভাইয়ের মতাদর্শ মেনেই চলছে। যদি বিশ্বের সব দেশ মহাকাশ অভিযান এবং সেই সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার পরিবর্তে সহযোগিতা করে, তা হলে সারা বিশ্বের মানুষই উপকৃত হতে পারবে। আমরা মহাকাশ থেকে যা-ই পাই না কেন, সেগুলি সকলে মিলে ভাগ করে নিলে তার থেকে ভালো কিছু হতে পারে না। কারণ, রাষ্ট্রপুঞ্জ খুব স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে যে, মহাকাশ কোনও দেশ নয়, মানব জাতির সম্পদ।’
উইং কমান্ডার শর্মার আহ্বান, ‘আসুন আমরা একটি একচেটিয়া মডেল ব্যবহার করে মহাকাশকে উপনিবেশ না করে ফেলি। গ্রহাণুতে হোক বা চাঁদ কিংবা মঙ্গল গ্রহ, যেখানে যা-ই চাষ করি না কেন, যদি আমরা সেই সম্পদ পৃথিবীর সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারি, তা হলে পারস্পরিক সংঘাতের শিকড় উপড়ে ফেলা যাবে।’