National Medical Commission : চিকিৎসক বা হাসপাতাল, বন্ধ হচ্ছে বিজ্ঞাপনী প্রলোভন!
এই সময় | ০৩ এপ্রিল ২০২৪
এই সময়: শহরের সেরা হাঁটু প্রতিস্থাপন হয় অমুক ডাক্তারের হাতে, তমুক হাসপাতালে। কিংবা আমাদের ক্যাথ ল্যাবেই হয় সবচেয়ে বেশি সফল অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। অথবা কিডনির চিকিৎসায় আমাদের প্রতিষ্ঠানই শ্রেষ্ঠ।বিভিন্ন কর্পোরেট হাসপাতাল কিংবা প্রাইভেটে প্র্যাকটিস করা চিকিৎসকদের নামে এমন অজস্র প্রলোভনে মোড়া বিজ্ঞাপনী প্রচার চোখে পড়ে সর্বত্র। গণমাধ্যম কিংবা হোর্ডিংয়ে কি নিজের ছবি-সহ বিজ্ঞাপন দিতে পারেন চিকিৎসক? আর পাঁচটা পণ্যের উপভোক্তাদের যে ভাবে বিজ্ঞাপনী প্রলোভনের ফাঁদে ফেলা যায়, তেমনটা কি যায় রোগীকুলের ক্ষেত্রেও?
একটি জনস্বার্থ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট সে কথা জিজ্ঞেস করেছিল মডার্ন মেডিসিন চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক সংস্থা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন (এনএমসি)-কে। বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনার জন্য সাত সদস্যের একটি এক্সপার্ট প্যানেল গড়ে এনএমসি। সেই এক্সপার্ট প্যানেল সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এমন ভাবে বিজ্ঞাপন করা যায় না। এনএমসি-র ওই প্যানেলের সাম্প্রতিক বৈঠকের ‘মিনিটস’ বলছে, এ নিয়ে একমত হয়েছেন প্যানেলর সব সদস্যই। সূত্রের খবর, অচিরেই এ সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে সুপ্রিম কোর্টে। পাশাপাশি, শীর্ষ আদালত চাইলে, এ নিয়ে একটি সুস্পষ্ট গাইডলাইনও তৈরি করে দেবে ওই এক্সপার্ট প্যানেল।
আপাতত ওই প্যানেল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মোটের উপর ছ’-সাতটি ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া যায় বিজ্ঞাপনে। কেননা, সেই সব ক্ষেত্রে কোনও চিকিৎসক বা বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের দেওয়া বিজ্ঞাপন নৈতিকতার পরিধির মধ্যেই থাকবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— চিকিৎসক নতুন করে কোথাও প্র্যাকটিস শুরু করা বা বিরতি কিংবা সাময়িক অনুপস্থিতির কথা জানাতে পারবেন, ঠিকানা বদল কিংবা প্র্যাকটিসের ধরন বা সময় বদলের কথাও জানানো যাবে, জনগণকে জানানো যাবে কী কী পরিষেবা কবে কখন মিলবে, তা-ও। কিন্তু এর বাইরে কোনও বিজ্ঞাপনী চমক দেওয়া চলবে না আর পাঁচটা পণ্য বা পরিষেবার মতো।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার এনএমসি-র ‘প্রফেশনাল কন্ডাক্ট অফ রেজিস্টার্ড মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার্স’ বিধির মধ্যেই পড়ে। সে জন্য এনএমসি-কে এ সম্পর্কে নোটিস দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। আর সেইমতো বিশেষ কমিটি তৈরি করে সিদ্ধান্তও নিয়েছে এনএমসি।
ঘটনার সূত্রপাত অবশ্য গত বছরের গোড়ার দিকে, যখন মুম্বইয়ের বন্ধ্যত্বরোগ বিশেষজ্ঞ অনিরুদ্ধ মালপানি কর্পোরেট হাসপাতাল ও প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার্সদের দেওয়া অবাধ অনৈতিক বিজ্ঞাপনী প্রচার নিয়ে প্রশ্ন তুলে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন শীর্ষ আদালতে। তাতে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, বিভিন্ন কর্পোরেট হাসপাতাল এবং প্রাইভেট ডাক্তারদের নানা বিজ্ঞাপনী প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে ভুল তথ্য দিয়ে প্রলুব্ধ করার অধিকার কে দিয়েছে?
জনস্বার্থ মামলায় এমন বেশ কিছু বিজ্ঞাপনের দৃষ্টান্তও তুলে ধরা হয়েছিল, যাতে চিকিৎসা শাস্ত্রের বিপণন করা হয়েছে নৈতিকতার কথা না ভেবেই। অথচ এনএমসি-র আইনেই স্পষ্ট বলা রয়েছে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে আত্মপ্রচারের জন্য এমন অনৈতিক বিজ্ঞাপনের আশ্রয় নিতে পারেন না একজন চিকিৎসক কিংবা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি হাসপাতালগুলির একটা বড় অংশই অবশ্য এখন এনএমসি-র এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছে।
অ্যাসোসিয়েশন অফ হসপিটালস অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সভাপতি রূপক বড়ুয়া বলেন, ‘সত্যিই, অনেকে বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন দেয়। মানুষকে সঠিক তথ্য দেওয়ার জন্য বড়জোর পরিষেবার খবর দেওয়া যায়। সেটা জনস্বার্থেই করা হয়। তাই বিজ্ঞাপন পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু কোনও অতিমানবিক ও অবৈজ্ঞানিক দাবি থাকা উচিত নয়।’ এরই পাশাপাশি তিনি জানান, তাঁদের সদস্য হাসপাতালগুলি কেউ চিকিৎসকের নামে বিজ্ঞাপন দেয় না। কোনও অপ্রয়োজনীয় দাবিও করা হয় না।