• Taiwan Earthquake : ২৫ বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প! লন্ডভন্ড তাইওয়ান, দেখুন ভিডিয়ো
    এই সময় | ০৩ এপ্রিল ২০২৪
  • বিধ্বংসী ভূমিকম্পের কবলে তাইওয়ান। বুধবার সকালে স্বশাসিত এই দ্বীপ রাষ্ট্রটি কেঁপে উঠল ৭.৪ রিখটার স্কেল মাত্রার একটি ভয়াবহ ভূমিকম্পে। ইতিমধ্যেই জারি করা হয়েছে সুনামি সতর্কতা। তাইওয়ানের পাশাপাশি ভূমিকম্পের তীব্রতা অনুভব করেছে দক্ষিণ জাপান এবং ফিলিপিন্সও। এখনও পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত কমপক্ষে ৫০। তবে অসংখ্যা প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।স্থানীয় সময় অনুযায়ী, ঠিক সকাল ৮টা নাগাদ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তাইওয়ান। তাইওয়ানের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.২। যদিও ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে জানাচ্ছে, এই জোরাল কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৪। এটির এপিসেন্টার ছিল দক্ষিণ তাইওয়ানের হুয়ালিয়েন শহরের ১১ মাইল অর্থাৎ ১৮ কিলোমিটার দূরে। এর গভীরতা ছিল ৩৪.৮ কিলোমিটার।

    কম্পনের মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে একাধিক বাড়ি ভেঙে পড়ার খবর মিলেছে। স্থানীয় টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা গিয়েছে পূর্ব তাইওয়ানের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হুয়ালিয়েনের একাধিক বাড়ি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ছে। রাস্তা মাঝখান থেকে দু'ভাগ হয়ে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে ইতিমধ্যেই। যেখানে কম্পনের ভয়াবহতা বোঝা গিয়েছে। একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, ঝাঁ চকচকে আবাসন সামনের দিকে পুরোপুরি হেলে গিয়েছে। আশপাশ থেকে ধুলো উড়ছে। অপর একটি ভাইরাল ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, বিশাল বড় আবাসন বা বাড়ি পুরোপুরি গুঁড়িয়ে গেলে যেমন ধুলোর ঝড় ওঠে, তেমনটাই হচ্ছে। আতঙ্কে হুড়োহুড়ি জুড়ে দিয়েছেন বাসিন্দারা। যদিও ভিডিয়োগুলির সত্যতা যাচাই করেনি এই সময় ডিজিটাল।

    এদিকে, জাপানের মৌসম বিভাগ ইতিমধ্যেই সুনামির লাল সতর্কতা জারি করেছে। জাপানের বন্দর শহরগুলিতে তিন মিটার উঁচু সুনামি আছড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে মিয়াকোজিমা দ্বীপ।

    তাইওয়ান প্রশাসন একটি অফিসিয়াল বিবৃতি জারি করে উল্লেখ করেছে, 'উপকূলীয় অঞ্চলের এলাকাবাসীদের জানানো হচ্ছে, কঠিন এই পরিস্থিতিতে শক্ত থাকুন। আপনাদের নিরাপদে রাখতে প্রশাসন সর্বতভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আচমকা সুনামির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সতর্ক থাকুন। প্রশাসনের নির্দেশ পালন করুন।' জানা গিয়েছে, এদিন সকালে জোরাল কম্পন অনুভব করেন তাইওয়ানের বাসিন্দারা। পাশাপাশি তীব্রতা অনুভব করেছেন দক্ষিণ পিংটুং এবং উত্তর তাইপেই শহরের বাসিন্দারাও। তবে কেবলমাত্র একটিই নয়, ৭.৪ রিখটার স্কেল মাত্রার মূল কম্পনের পাশাপাশি আফটারশকেও কেঁপে ওঠে তাইওয়ান। দ্বিতীয় কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৫। হুয়ালিয়েন শহর কার্যত লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাইপেইয়েপ ওয়েদার এজেন্সি মারফত একাধিক তথ্য সামনে আসছে যা ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকার পরিস্থিতি বর্ণনা করছে। ভূমিকম্পের জেরে থমকে গিয়েছিল তাইওয়ানের মেট্রো পরিষেবা। ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় তা ফের চালু করা গিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে সকলকে সতর্ক করা হয়েছে। কারও বাড়িতে গ্যাস লিক রয়েছে কি না, তা নজর রাখতে বলা হয়েছে।

    প্রত্যক্ষদর্শী কেলভিন হং বলেন, 'আমি ডাউনটাউনের একটি হোটেলে ছিলাম। ঘটনার সময় দৌড়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, আমার গায়ে পোশাক ছিল না। বীভৎস জোরাল কম্পন ছিল। কোনওমতে দৌড়ে হোটেলের লবিতে আশ্রয় নিই। নবম তলায় এই কম্পনের তীব্রতা ভয়ংকর ছিল।'

    বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছে, চলতি দশকের মধ্যে তাইওয়ানে এটা সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প। তাইপেইর সেন্ট্রাল ওয়েদার অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সেসিমোলজি সেন্টারের ডিরেক্টর উ চিয়েন ফু বলেন, 'স্থলভাগের খুব কাছে এই জোরাল কম্পন হয়েছে। তাইওয়ান জুড়েই এই কম্পন অনুভূত হয়েছে। ১৯৯৯ সালের পর এই প্রথম এত জোরাল কম্পন অনুভূত হল। অর্থাৎ ২৫ বছরে এটাই সবচেয়ে বিধ্বংসী ভূমিকম্প।' তাঁর সংযোজন, 'এখনও আশঙ্কা কমেনি। আফটারশক আসতেই থাকবে এবং তা কোনওমতেই ৬.৫ থেকে ৭ রিখটার স্কেল মাত্রার কম হবে না। জনগণের উচিত প্রশাসনের নির্দেশিকা অনুসরণ করে ভূমিকম্পের সময় সাবধান থাকা।'

    উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাইওয়ানে ৭.৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। যাতে ২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। যা তাইওয়ান দ্বীপের ইতিহাসে সবচেয়ে বিভীষিকাময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল। সেই স্মৃতিই যেন গ্রাস করেছে তাইওয়ানকে। আশঙ্কা করা হচ্ছে প্রচুর প্রাণহানির। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও সংখ্যা জানায়নি প্রশাসন।
  • Link to this news (এই সময়)