পরীক্ষায় বসতে বাধা দিয়ে প্রধান শিক্ষকের মার, চরম সিদ্ধান্ত ছাত্রের
এই সময় | ০৩ এপ্রিল ২০২৪
রূপক মজুমদার, বর্ধমান : হাত ভেঙে যাওয়ায় বেশ কিছুদিন কামাই করতে হয়েছিল স্কুল। সেরে উঠে একেবারে সোমবার ক্লাস টেনের ইউনিট টেস্ট দিতে স্কুলে আসে ছাত্র ওসমান গনি চৌধুরী। কিন্তু তাকে পরীক্ষায় বসতে দিতে রাজি ছিলেন না শক্তিগড়ের সফদর হাশমি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ ঘোষ। অভিযোগ, স্কুল কামাইয়ের কারণে ওসমানকে পরীক্ষায় বসতে দেননি তিনি।চিকিৎসার কাগজপত্র দেখিয়েও ছাড় মেলেনি। এক সময়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কিছুটা তর্কেও জড়িয়ে পড়ে বছর ১৫-র ওই ছাত্র। অভিযোগ, সে সময়ে জুনিয়র ক্লাসের একদল ছাত্রের সামনে ওসমানকে মারধর করেন প্রধান শিক্ষক। শেষে পরীক্ষা না-দিয়েই বাড়ি ফিরতে হয় তাকে। আর ওই দিন দুপুরে বাড়ি থেকে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় শক্তিগড় মাঠপাড়ার বাসিন্দা ওসমানের।
ঘটনার পর থেকে গা-ঢাকা দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। মঙ্গলবার স্কুলে আসেননি অন্য শিক্ষকরাও। এদিন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না-তদন্তের পর ছাত্রের দেহ নিয়ে স্কুলে আসেন পরিবারের লোকেরা। স্কুলগেটের সামনে দেহ রেখে চলে বিক্ষোভ। সেখানে যোগ দেন এলাকার বাসিন্দারাও।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ প্রধান শিক্ষক, স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রতিশ্রুতি দিলে দেহ নিয়ে যান পরিবারের লোকেরা। স্কুলের কাছে সমস্ত রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক শ্রীধর প্রামানিক।
হায়দরাবাদে এক কারখানায় কাজ করেন মৃত ছাত্রের বাবা রাজু চৌধুরী। মা দিনমজুরের কাজ করেন। ছেলে আর নেই শুনে সোমবার রাতেই হায়দরাবাদ থেকে বাড়ি ফেরেন রাজু। তাঁর অভিযোগ, ‘আমার ছেলেকে স্কুলের হেডস্যার, সভাপতি আর তাঁর ভাই মিলে মারধর করেছে সবার সামনে। অপমানে লজ্জায় বাড়ি এসে ও গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গরিব বলে ওরা যদি ভাবে ছাড় পাবে, সেটা হতে দেবো না।’ প্রতিবেশী শেখ আনোয়ার আলির কথায়, ‘করোনার পর স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সেখানে একজন ছাত্র পরীক্ষা দিতে চাওয়ায় তাকে সেই সুযোগ করে না-দিয়ে সকলের সামনে মারধর করা উচিত হয়নি।’
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ ঘোষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি শেখ কামাল হাসান বলেন, ‘আমার নামে কেন ওঁরা অভিযোগ করেছেন জানি না। আমি ঘটনাস্থলে ছিলামও না। সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
প্রশ্ন উঠেছে, হাজিরার কারণে পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত কী ভাবে নিল স্কুল পরিচালন সমিতি? অভিভাবকদের অভিযোগ, এই শিক্ষাবর্ষের শুরুতেও এমন নোটিস দেওয়া হয়নি। তাঁদের প্রশ্ন, উপযুক্ত কারণ দেখানো সত্ত্বেও স্কুলের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় কেন বসতে দেওয়া হলো না ছাত্রকে? এইসব প্রশ্ন মাথায় রেখে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে শক্তিগড় থানার পুলিশ।
ঘটনা প্রসঙ্গে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক শ্রীধর প্রামানিক বলেন, ‘আমরা স্কুল থেকে রিপোর্ট নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে যা নির্দেশ আসবে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ যদিও জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসের একাধিক কর্মীর বক্তব্য, ‘এ ভাবে ডিআই সাহেব কত ঘটনাকে যে ঠান্ডাঘরে পাঠিয়েছেন তার হিসেব নেই। এই ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত করে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে শো-কজ় তো করতেই পারতেন ডিআই। উনি সেটাও করেন না।’