এই সময়, আসানসোল: দীর্ঘ ১১ বছর পর বেসরকারি উদ্যোগে কয়লা তোলার কাজ শুরু হতে চলেছে এশিয়ার গভীরতম চিনাকুড়ি কোলিয়ারি থেকে। কিন্তু তার আগেই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলো দুই ঠিকাশ্রমিকের। মৃতদের নাম আকাশ বাউড়ি ও অনিল যাদব। মঙ্গলবার বিকেলের এই ঘটনায় ফের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে ইসিএল।জানা গিয়েছে, ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার চিনাকুড়ি কোলিয়ারি থেকে কয়লা তোলার আগে এদিন ২ নম্বর পিটের পুরোনো হেড গিয়ার (যার মাধ্যমে ডুলি খনি থেকে ওঠানামা করে) মেরামতের কাজ করছিলেন পাঁচ ঠিকাকর্মী। অভিযোগ, তারমধ্যে একমাত্র আকাশ বাউড়ি সেফটি বেল্ট পরেছিলেন। সে সময়ে হেড গিয়ারের একটি পুরোনো লোহার চাদর বদলানোর সময়ে আচমকা গাইড রোপ বা লোহার দড়ি ছিঁড়ে পড়ে।
তখন আকাশ ও অনিল যাদব হেড গিয়ার থেকে নীচে পড়ে যান। আকাশ ১৫-২০ ফুট নীচে পড়ে ডুলিতে আটকে পড়েন। পায়ে মারাত্মক আঘাত নিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে সাকতোড়িয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। কিন্তু অনিল খনির ২,২০০ ফুট গভীরে পড়ে গিয়ে মারা যান বলে জানিয়েছেন সোদপুর এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার একে নন্দী।
তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে সর্বশেষ উৎপাদন হওয়ার পর ডিরেক্টর জেনারেল অফ মাইন্স সেফটির নির্দেশে এই খনিটি বন্ধ করা হয়। নতুন করে ১৬ মিলিয়ন টন কয়লা তোলার জন্য খনিটি বিকেএম নামে একটি সংস্থাকে চুক্তির ভিত্তিতে দেওয়া হয়। ওই সংস্থা যত টাকা রাজস্ব তুলবে তার ৮ শতাংশ ইসিএল-কে দিতে হবে বলে চুক্তি হয়। ওই সংস্থা হেড গিয়ারের কাজ করানোর জন্য আর একটি বেসরকারি সংস্থাকে কাজে লাগিয়েছিল। পুরো বিষয়টি নিয়ে খনি কর্তৃপক্ষ পৃথক ভাবে তদন্ত শুরু করেছে।’
এই ঘটনার পরে এলাকার বাসিন্দারা এবং এখানকার কর্মী ও সমস্ত ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃত্ব একযোগে কোলিয়ারি এলাকায় এসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। কয়লাখনির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সিটু নেতা সুজিত ভট্টাচার্য বলেন, ‘সম্পূর্ণ ভাবে ঘটনার দায় বর্তায় ওই বেসরকারি সংস্থার উপর। ইসিএল নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।’
তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা রতন মাসির অভিযোগ, ‘যেখানে ওঁরা কাজ করছিলেন সেখানে ঠিকাদারি সংস্থার কোনও অফিসার বা সুপারভাইজার পর্যন্ত ছিলেন না।’ ঘটনার খবর পেয়ে এদিন সন্ধ্যা নাগাদ এলাকায় আসেন কুলটির বিজেপি বিধায়ক অজয় পোদ্দার। তিনি এই ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখানে কাজ করার সময়ে ডিরেক্টর অফ মাইন্স সেফটির নির্দেশ মানা হয়নি। গোটা বিষয়টি নিয়ে আমি ইসিএলের সিএমডি-র কাছে অভিযোগ করব। যে বেসরকারি কোম্পানি এই কাজ করছিল তাদেরও গাফিলতি রয়েছে।’
এদিকে, কুলটি থানার পুলিশ জানায়, মৃত দু’জনের পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে।