• ঠান্ডা, ঢেউ আর শ্বাসকষ্ট নিয়েও কুক প্রণালী জয়ী বঙ্গকন্যা সায়নী
    এই সময় | ০৩ এপ্রিল ২০২৪
  • সূর্যকান্ত কুমার : কাছে তবুও যেন কত দূরে। পাড় দেখা যাচ্ছে কিন্তু, উত্তাল সমুদ্রের বিশাল ঢেউ যেন প্রাচীর তুলে দিয়েছে। তিনি কি হেরে যাবেন? অধরাই কি রয়ে যাবে নিউ জিল্যান্ডের কুক প্রণালী জয়? শেষে স্রেফ মনের জোরে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করলেন বাংলার জলকন্যা। সপ্তসিন্ধু জয়ের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন সায়নী দাস। তাঁর মুকুটে এবার সাফল্যের পালক কুক প্রণালী।

    বরফ শীতল উত্তাল সমুদ্রে সাড়ে ২৯ কিমি পথ ১১ ঘণ্টা ৫১ মিনিটে সাঁতরে অসুস্থ হয়ে পড়েন সায়নী। সাঁতার কাটার সময়ে সমুদ্রে বৃষ্টির মুখে পড়তে হয় তাঁকে। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে তাঁর শরীরে। এত ঢেউ যে ফিনিশিং পয়েন্ট বুঝতে অসুবিধা হওয়ায় কিছুটা বেশি পথ সাঁতার কাটতে হয় কালনার মেয়েকে। লক্ষ্য কাছে এসেও যেন দূরে সরে যায়। মনে মনে বলতে থাকেন, কত দূর আর কত দূর।

    মঙ্গলবার ভারতীয় সময় ৪টে ৫৩ মিনিটে (নিউ জিল্যান্ডে তখন রাত সাড়ে ১২টা) সায়নীকে ফোনে ধরা হলে কোনওরকমে বলেন, ‘এখনও বেশ অসুস্থ বোধ করছি। আগে চারটে চ্যানেল পার করেছি, তবে কুক প্রণালীর মতো এত মানসিক চাপে কখনও পড়তে হয়নি। একটা সময়ে মনে হয়েছিল বোধহয় আর পারলাম না। এ যাত্রা আর হলো না। বিরূপ প্রকৃতির কাছে বুঝি হেরেই গেলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মনের জোর, সাহস আর সকলের শুভেচ্ছায় ক্রস করতে পারলাম।’

    এর আগে সায়নী জয় করেছেন ইংলিশ চ্যানেল, ক্যাটালিনা (ক্যালিফোর্নিয়া) ও মলোকাই চ্যানেল (হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ)। এবার নিউ জিল্যান্ডের কুক প্রণালী জয়ের ফলে তাঁর সামনে চ্যালেঞ্জ নর্থ চ্যানেল, সুগারু ও জিব্রাল্টার প্রণালী। তা হলেই সায়নীর মাথায় উঠবে সপ্তসিন্ধু জয়ের মুকুট। এদিন সাঁতার শেষ করতে বেশ রাত হয়ে যাওয়ায় জাতীয় পতাকা উড়িয়ে সেলিব্রেশন করতে পারেননি।

    বুধবার তা করবেন বলে জানিয়েছেন সায়নী। আগামী ১০ এপ্রিল রাতে তিনি ফিরছেন কলকাতায়। নিউ জিল্যান্ডের উত্তর ও দক্ষিণ দ্বীপকে আলাদা করেছে কুক প্রণালী। একদিকে তাসমান সাগর আর অন্য দিকে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর। তার মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী এই চ্যানেলের দূরত্ব ২২ কিমি। তবে ক্রস কারেন্টের কারণে বহু সময়েই বেড়ে যায় দূরত্ব।

    এদিন স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ২২ মিনিটে ওয়েলিংটন থেকে শুরু হয় তাঁর যাত্রা। শেষ করেন আরাপাওয়াতে। এদিনের অভিজ্ঞতা তিনি শেয়ার করেন ‘এই সময়’-এর সঙ্গে। বলেন, ‘সকাল ৮ টায় শুরুর কথা। তাই ভোর ৫ টাতেই বাসা থেকে রওনা হয়ে যাই। তখনই ঠান্ডা হাওয়া আর বৃষ্টি পড়ছিল।’ সাঁতার শুরুর পর মা রূপালি দাস মেন বোটে আর বাবা রাধেশ্যাম দাস ছিলেন রাবার বোটে।

    বলেন, ‘জল এত ঠান্ডা ছিল যে, কিছুটা যাওয়ার পর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। তার উপর জোয়ারের কারণে বড় বড় ঢেউয়ের বিরুদ্ধে সাঁতার কাটতে বেশ সমস্যা হচ্ছিল। জেলিফিস গায়ে লাগছিল, তবে ওরা বন্ধুর মতো হয়ে গিয়েছে তাই ওটা সমস্যা হয়নি।’ দক্ষিণ মেরুর সঙ্গে নিউ জিল্যান্ডের গড় দূরত্ব সাড়ে তিন হাজার মাইল। ফলে ঠান্ডার সঙ্গে ঢেউ বাড়তি প্রতিকূলতা তৈরি করেছিল।

    সায়নী বলেন, ‘ফিনিশিং পয়েন্ট বুঝতে পারছিলাম না। শেষে যে কী ভাবে শেষ করলাম আমি নিজেও জানি না। বেশ কিছুক্ষণ অসুস্থ অবস্থায় ছিলাম। বাসায় ফিরে আলুসেদ্ধ আর ভাত খেয়েছি। এখন দু’তিন দিন পুরোপুরি বিশ্রামে থাকব। কোনও স্পনসর পেলে দু’মাস আগে শীতল আবহাওয়ার কোনও জায়গায় প্রাকটিস করতে পারলে এই সমস্যায় পড়তে হতো না।’

    এক সময়ে মেয়েকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান বাবা রাধেশ্যাম দাস। বলেন, ‘দেখছিলাম, ও আর পারছিল না। জলে দীর্ঘক্ষণ চশমা পরে থাকার কারণে চোখের চারপাশে ইনজুরি হয়েছে। এখন ওকে সুস্থ করে তোলারই কাজ করছি আমরা।’
  • Link to this news (এই সময়)