অজয় খুঁড়ে পাওয়া বিষ্ণুমূর্তির শিল্পশৈলীতে মুগ্ধ পুরাতত্ত্ববিদরা
এই সময় | ০৩ এপ্রিল ২০২৪
অভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, কাটোয়া : পুরাকীর্তি তো উদ্ধার হয় অনেক কিন্তু, এমন চোখজুড়ানো শিল্পকর্ম কালেভদ্রে মেলে। মঙ্গলকোটে অজয়ের চর থেকে তেমনই এক বিষ্ণুমূর্তি মিলেছে যার নির্মাণশৈলীতে মুগ্ধ পুরাতত্ত্ববিদরাও। উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট। কষ্টিপাথরের এই মূর্তিটি লোকেশ্বর বিষ্ণুর বলে জানিয়েছেন পুরাতত্ত্ববিদরা।মঙ্গলকোটের আতকুল গ্রাম সংলগ্ন অজয় নদ থেকে উদ্ধার হওয়া এই মূর্তি প্রসঙ্গে রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগের সিনিয়র আর্কিয়োলজিস্ট ও মুঘলমারি প্রত্নস্থলের এক্সকাভেশন ডিরেক্টর প্রকাশ মাইতি বলেন, ‘এটা নবম-দশম শতাব্দীর লোকেশ্বর বিষ্ণুমূর্তি। এর ফাইননেস অসাধারণ। আর্লি স্টেজের যে মূর্তি পাওয়া যায় সেগুলো রাফ হতো।’
পাথরটিরও বিশেষত্ব রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অজয়-কুনুর নদীর ওই এলাকায় তাম্র-প্রস্তর যুগের বহু নিদর্শন রয়েছে। পরবর্তী কালে শুঙ্গ, মৌর্য্য, কুষাণ, পাল, সেন বংশে সেই পরম্পরা চলে এসেছে। এই মূর্তির কাজ সর্তিই অনবদ্য।’
সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ অজয়ে স্নান করতে গিয়েছিলেন আতকুল গ্রামের বাসিন্দা অক্ষয় মাঝি, বাবু মাঝি, মানব মাঝি, সঞ্জয় ঘোষরা। তাঁদেরই পায়ে ঠেকে পাথরের মূর্তিটি। প্রচণ্ড ভারী মূর্তিটি তাঁরা কোনওরকমে পাড়ে তুলে আনেন। পরে ট্রাকে করে গ্রামে আনা হয় সেটিকে। মূর্তিটি পরিষ্কার করে ওই দিনই শুরু করে দেওয়া হয় পুজোপাঠ। মূর্তিটির কিছু অংশ ভেঙে গিয়েছে।
তবে অবশিষ্ট অংশও অপূর্ব। মূর্তিটির মাথার পিছনের চালচিত্রের সঙ্গে ভেঙে গিয়েছে সর্পছত্রও। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুখের একদিক। চতুর্ভুজা মূর্তির দু’টি হাতও ভাঙা। বাকি দু’টি হাত রয়েছে লক্ষ্মী-সরস্বতীর মাথার উপরে। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের সুপারিন্টেন্ডেন্ট আর্কিওলজিস্ট শুভ মজুমদার বলেন, ‘মাথায় সর্পছত্র থেকে নিশ্চিত এটা লোকেশ্বর বিষ্ণু। সে কারণে লক্ষ্মী, সরস্বতীর মাথায় হাত রয়েছে। বিষ্ণু দাঁড়িয়ে রয়েছেন দ্বিভঙ্গ আকারে। এত বড় লোকেশ্বর বিষ্ণুর মূর্তি সাধারণত দেখা যায় না।’
তবে পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির মতে, ‘মিথোলজিক্যালি সর্পছত্রের সঙ্গে নারায়ণের যোগ অনেক বেশি।’ কাটোয়ার অঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক স্বপন ঠাকুরের বক্তব্য, ‘বুদ্ধ বা জৈনমূর্তি থেকে প্রভাবিত হয়ে এটি তৈরি করা হয়ে থাকতে পারে। আমার মনে হয়, এটা বিশেষ ভাবে বানানো। এই মূর্তির গঠনশৈলী বেশ অভিনব। লক্ষ্মী, সরস্বতীর মাথায় হাত থেকে বাৎসল্যরসও ফুটে উঠছে।’
মঙ্গলকোট বা কাটোয়া মহকুমার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাথরের বিষ্ণুমূর্তি উদ্ধার হওয়া নতুন কিছু নয়। আতকুলের কিছু দুরে খেড়ুয়া সংলগ্ন অজয় থেকে অতীতে একাধিক বিষ্ণুমূর্তি উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু গঠনরীতি ও আকার অন্য সব মূর্তির থেকে এটিকে আলাদা করেছে। যদিও এই মূর্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। আতকুল গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শিবমন্দিরেই প্রতিষ্ঠিত থাকবেন বিষ্ণুদেব।
এখানেই পুজো হবে মূর্তিটির। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার জানিয়েছেন, মূর্তিটি সম্পর্কে বিডিওর কাছে রিপোর্ট চাইবেন তিনি। বলেন, ‘মূর্তিটি কত প্রাচীন তা জানতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলা হবে। কোনও মিউজিয়ামে রাখা যায় কিনা সেটাও দেখা হবে।’