CO2 জব্দ করে বিকল্প বালি, স্বপ্ন দেখাচ্ছে আইআইএসসি
এই সময় | ০৩ এপ্রিল ২০২৪
এই সময়: বাংলায় পরিবেশ সংক্রান্ত যত মামলা হয়েছে, তার অন্তত ৩০ শতাংশ নদী বাঁচাতে। উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গ— নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলার জন্য কোথাও নদী গতি হারাচ্ছে, কোথাও বন্যার প্রবণতা বাড়ছে। এই বালির বেশিরভাগটাই ব্যবহৃত হয় নির্মাণকাজে। কিন্তু এমন যদি হয়, নির্মাণকাজে যদি বালি ব্যবহারই না করতে হয়!এমন অসম্ভবকে সম্ভব করে অন্য স্বপ্ন দেখাচ্ছে বেঙ্গালুরুর ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স’ (আইআইএসসি)। সেখানকার ‘সেন্টার ফর সাস্টেনেবল টেকনোলজিস’ (সিএসটি)-এর বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, তাঁরা বালির বিকল্প তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, এই বিকল্প বালি তৈরি করতে তাঁরা ব্যবহার করেছেন কারখানা থেকে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড। তার ফলে এই বালিতে নদীর সঙ্গে সঙ্গে বাঁচবে প্রকৃতিও।
আইআইএসসি এক প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাঁদের তৈরি করা এই বালি প্রাকৃতিক বালির পরিবর্তে আংশিক ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই বালি নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় বালির সমগোত্রীয়।’ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সহকারী অধ্যাপক সৌরদীপ গুপ্তের নেতৃত্বে এক দল বিজ্ঞানী এই গবেষণার কাজটি করেছেন। শিল্পের বর্জ্য গ্যাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে আলাদা করে তা ব্যবহার করা হয়েছে এই কাজে। তার সঙ্গে মেশানো হচ্ছে নির্মানবর্জ্য।
তা ইট-বালি-চুন-সুরকি সবই হতে পারে। এই উপকরণগুলিকে একত্রে মিশিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে যা তৈরি করা হচ্ছে, তাকে বালির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে একদিকে গ্রিনহাউস গ্যাস থেকে প্রকৃতিকে বাঁচানো যাচ্ছে, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বালির ব্যবহার কমানো যাচ্ছে। আবার বাতিল নির্মাণ সামগ্রীরও পুনর্ব্যবহার হচ্ছে।
সৌরদীপ গুপ্ত জানিয়েছেন, কারখানা থেকে নির্গত গ্যাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে আলাদা করতে পারলেই মূল কাজ হাসিল হয়ে যায়। সেই গ্যাসকে কাদা মাটিতে মেশানো হয়। এর পাশাপাপাশি নির্মাণ সাইট থেকে খুব সহজেই মেলে ইট-বালি-সিমেন্টের মতো বর্জ্য। সিমেন্ট এবং চুনের সঙ্গে এর মিথোস্ক্রিয়ায় তৈরি হয় বিকল্প বালি। বিকল্প বালি ব্যবহার করে ইতিমধ্যে নির্মানকাজের মডেলও তৈরি করে ফেলেছে সংস্থা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ ও স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক, পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বলেন, ‘বালির বিকল্প যে নেই তা নয়। কিন্তু সেগুলি বালির সমগোত্রীয় কি না সেটাই বিবেচ্য। বালির নিজস্ব কিছু ধর্ম রয়েছে। সিমেন্টের সঙ্গে তার যে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়, নির্মাণের ক্ষেত্রে তা লাভদায়ক বলে তা ব্যবহার করা হয়। এখন যদি বিকল্প বালির ক্ষেত্রেও সেই গুণ থাকে, তা হলে খুবই ভালো।’
পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘নদী থেকে বালি তোলা যে খারাপ, তা তো নয়। আসলে অবৈজ্ঞানিক ভাবে বালি তোলার জন্যই গোলমাল হচ্ছে। তবে বিকল্প বালি তৈরি করতে পারলে তা খুবই ভালো হবে।’