PM Narendra Modi : মানুষের বিশ্বাস টাকা আটকেছে দিল্লিই, মোদী শুনলেন পদ্মের বুথকর্মীর কাছে
এই সময় | ০৪ এপ্রিল ২০২৪
এই সময়: উপলব্ধিটা বঙ্গ-বিজেপির প্রায় সবার। কিন্তু সাহস করে সে কথা দিল্লির দরবারে কেউই খোলাখুলিভাবে বলতে পারেননি এতদিন। বুধবার সে কাজটাই করে দেখালেন দক্ষিণ মালদা লোকসভা এলাকার বুথস্তরের এক বিজেপি কর্মী। এদিন বঙ্গ-বিজেপির নিচুতলার কর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।সেখানে তিনি শুভঙ্কর সাহা নামে মালদা দক্ষিণের এক বিজেপি কর্মীর কাছে জানতে চান, ‘বাংলার গ্রামগঞ্জে তৃণমূলের দুর্নীতি আর বিজেপির কাজ নিয়ে কী আলোচনা চলছে?’ মালদার ওই বিজেপি কর্মী তাঁকে কিছুটা অক্ষেপের সুরেই বলেন, ‘বাংলার মানুষ জানেন, তৃণমূল দুর্নীতিগ্রস্ত। কিন্তু আবাস যোজনা ও একশো দিনের কাজের বকেয়া টাকা দিল্লি আটকে রেখেছে—এই বিশ্বাসটা বাংলার গ্রামগঞ্জের মানুষের মনে গেঁথে গিয়েছে।’
রাজ্য বিজেপির কোনও শীর্ষ পদাধিকারী এরকম উপলব্ধির কথা একান্তে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন কি না, তা হলফ করে বলা মুশকিল। কিন্তু ‘ওপেন প্ল্যাটফর্মে’ অতীতে কেউ এ ভাবে ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা’ বাঁধেননি বলে দাবি রাজ্য বিজেপির একাংশের। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন সহজভাবেই। শুভঙ্করের বলা শেষ হওয়ার আগেই মোদী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার সম্পর্কে বাংলার মানুষের এই ধারণা ভাঙতে হবে।
তার জন্য তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আরও জোরালো করার নিদান তিনি দলীয় কর্মীদের দিয়েছেন। মালদার ওই বিজেপি কর্মীর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা তৃণমূল খেয়ে নিয়েছে। কোনও হিসেব দিচ্ছে না রাজ্য সরকার। এটাই আপনাদের ঘরে ঘরে গিয়ে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে। এটাই তো আপনাদের কাজ।’
এরপর শুভঙ্কর নামে ওই বিজেপি কর্মীর কাছে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, ‘কি, আপনারা ঘরে ঘরে গিয়ে বলবেন তো কীভাবে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নিয়ে তৃণমূল দুর্নীতি করেছে?’ শুভঙ্কর অবশ্য প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করে জানান, তাঁরা সেটা করবেন। তবে ভোট শুরুর সপ্তাহখানেক আগে শুভঙ্করদের এই প্রচার আদৌ কতটা কাজে আসবে, তা নিয়ে গেরুয়া শিবিরের অন্দরেই সন্দেহ দানা বাঁধছে।
কেন্দ্রীয় বঞ্চনাকে হাতিয়ার করেই এবার ভোট-যুদ্ধে নেমেছে তৃণমূল। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা প্রচার করছে, কীভাবে একশো দিনের কাজের প্রকল্প, আবাস যোজনার টাকা আটকে রেখে পশ্চিমঙ্গের মানুষকে বঞ্চনা করছে মোদী সরকার। গত ১০ মার্চ ব্রিগেডে ‘জনজোয়ার সভা’ থেকে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনাই তাঁদের ভোটপ্রচারের অন্যতম হাতিয়ার হতে চলেছে।
বিজেপিও পাল্টা প্রচারে দাবি করছে, কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে অতীতে যে টাকা দিয়েছে রাজ্য সরকারকে, তা নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি করেছে তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা টাকার হিসেব দিচ্ছেন না বলেই দিল্লি বকেয়া টাকা মেটাচ্ছে না, এ কথা প্রায় প্রতিদিনই বলতে শোনা যায় সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীদের।
তবে রাজ্যের বকেয়া টাকা আটকে রাখার পক্ষে সাধারণ মানুষের কাছে সওয়াল করা যে মোটেই সহজ কাজ নয়, ঘনিষ্ঠ মহলে তা কবুল করছেন বিজেপির রাজ্যস্তরের বহু নেতা-নেত্রীই। কিন্তু তাঁরা কেউই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে গিয়ে তাঁদের সমস্যার কথা ব্যক্ত করেননি। এদিন বিজেপির এক বুথস্তরের কর্মী সহজ কথা সহজভাবে বলে ফেলেছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। বাংলার গ্রামগঞ্জের মানুষের কাছে তৃণমূলের প্রচারই বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে, সে কথাই এদিন ঠারেঠোরে প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে দিয়েছেন শুভঙ্কর।
তাতে রাজ্য বিজেপি বিড়ম্বনায় পড়লেও বেজায় খুশি তৃণমূল। দলের রাজ্য মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর মুখের উপর সত্যি কথাটা বলার জন্য ওই বিজেপি কর্মীকে অভিনন্দন জানাই।’ রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘কে কী বলেছেন জানি না, তৃণমূলের দুর্নীতি সম্পর্কে বাংলার মানুষের মনে আর কোনও সংশয় নেই। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এদিন কালো পতাকা দেখতে হয়েছে।’