ফি বছর পড়াশোনার জন্য ভারত থেকে বেশ বড় সংখ্যক পড়ুয়া বিদেশে পাড়ি দেন। তবে সাম্প্রতিক সময় ব্যয়বহুল শিক্ষার পাশাপাশি, বিদেশে অধ্যয়নরত ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার খরচ একধাক্কায় অনেকটাই বেড়েছে। বিদেশ পড়তে গিয়ে খরচ সামলাতেই নাজেহাল অবস্থা ভারতীয় পড়ুয়াদের। বিশেষ করে কয়েক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে ঘর ভাড়া। কোভিডের পর ভাড়ার অঙ্ক বেড়েছে তড়তড়িয়ে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, আমেরিকাসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের বাড়ি খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। শিক্ষার্থীরাই জানাচ্ছেন, সাম্প্রতিক সময় লেখাপড়ার জন্য বৃত্তি পেলেও বাড়িভাড়া, খাওয়া-দাওয়ার খরচে নাভিশ্বাস ওঠার জোগার। বিপুল এই খরচ জোগাতে বেশির ভাগ পড়ুয়াদের অভিভাবকদের মোটা টাকা ঋণ নিতে হচ্ছে।বিদেশে পড়াশোনার খরচ ঊর্ধ্বমুখী
গত বছর অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যাওয়া ভারতীয় পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল প্রায় ৭৫ হাজার। ২০২২ সালে কানাডায় পড়তে যাওয়া ভারতীয় পড়ুয়ার সংখ্য়া ছিল প্রায় ২.১৫ লাখ। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে গত এক দু'বছরে ভর্তির হার বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি।
সিডনিতে মার্কেটিং নিয়ে পড়াশোনা করছেন রাশি রাস্তোগি। তাঁর কথায়, 'শুধু পড়াশোনাই নয়, সাম্প্রতিক সময় অস্ট্রেলিয়ায় জীপনযাপনের খরচ আগের তুলনায় অনেকটাই ব্যয়বহুল হয়েছে। দুই রুমের ফ্ল্যাটে থাকি চার জন ছাত্র মিলে। এই ফ্ল্যাটের ভাড়া ১২০০ ডলার (১,০০, ১৩৭ টাকা ভারতীয় মুদ্রায়)। দুই বছর আগেও এমন দুই কামড়ার ঘর পাওয়া যেত ৭০০ ডলারে (৫৮,৪১৮)। বর্তমানে ছাত্রদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের ঘর পাওয়াই দুষ্কর হয়ে উঠছে।' ব্যক্তিগত বাড়ির ভাড়াও আকাশছোঁয়া। নিজের খরচ টানতে কোনও শিক্ষার্থী আবার পার্ট টাইম চাকরিও করছেন। আর চাকরি জোটাতে না পারলে চিন্তার ভাঁজ চওড়া হচ্ছে। বিশেষ করে যাঁদের পরিবারের সামর্থ্য নেই তাঁদের সন্তানদের বিপুল পরিমাণ পড়াশোনার খরচ বহন করা মাথাব্যথার অন্যতম কারণ।
খাদ্যের চড়া দাম। তার উপর ঘরবাড়ি পাওয়ার সমস্যা। এই দুইয়ের জেরে বিদেশি পড়ুয়াদের জন্য ভিসার বিধিনিয়ম কঠোর করল কানাডা সরকার। এরফলে ধাক্কা খেতে চলেছেন ভারতীয় পড়ুয়ারা। কারণ, কানাডায় বিদেশি পড়ুয়াদের একটা বড় অংশই ভারতীয়। খাদ্যসামগ্রী ও ঘরবাড়ির ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় কানাডায় জীবনধারনের খরচ ঊর্ধ্বমুখী। এই পরিস্থিতিতে জাস্টিন ট্রুডো সরকার বিদেশি পড়ুয়াদের সংখ্যায় রাশ টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মন্ট্রিল, এডমন্টন ও টরন্টো শহরে সমস্যা বেশি। দিল্লির পঞ্জাবিবাগের বাসিন্দা আর এন সাহনির ছেলে কানাডা থেকে বিবিএ করছেন। তাঁর কথায়, 'গত বছর আমার ছেলে টরন্টো গিয়েছিল। জীবনযাত্রার ব্যয় এক বছরে প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ছেলে তিন জনের সঙ্গে শেয়ার করে একটি বাড়িতে থাকে। প্রতি মাসে ভাড়া গুণতে হয় ৩০০ ডলার করে (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২৫ হাজার ৩৭ টাকা)। সমস্য়া হল শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করার তেমন সুযোগ নেই। পরিস্থিতি এমন সেখানে শিক্ষার্থীরা রুম মেট নয় বরং বেডমেট খুঁজছে যাতে খরচ আরও খানিকটা কমানো যায়।' অর্থাৎ খরচ এতটাই বেড়েছে যে শুধু ঘর ভাগাভাগিই নয় নিজের এক চিলতে বিছানাটুকুও অন্যের সঙ্গে ভাগ করতে দু'বার ভাবছেন না পড়ুয়ারা। লক্ষ্য একটাই খরচে রাশ টাকা, কিছুটা টাকা বাঁচানো। কষ্টেশিষ্টে ঘুমিয়েও যদি একটু টাকা বাঁচে তাহলে মন্দ কী!
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে ভারতীয় শিক্ষার্থীদেরর উপর। দিল্লির ছাত্রী প্রেরণা ডাক্তারি পড়ছেন পোল্যান্ড থেকে। প্রেরণার কথায়, 'আমার বাবা ঋণ নিয়েছেন, যদিও এখানে জীবনযাপন করা ব্যয়বহুল। ফি-তে বেশ খানিকটা ছাড় পেলেও এখানে বসবাস বেশ ব্যয়বহুল।'