নয়াদিল্লি: আবগারি দুর্নীতি মামলায় ধৃত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল অন্তর্বর্তী জামিনের আর্জি নিয়ে রায়দান স্থগিত রাখল দিল্লি হাইকোর্ট। দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় কেজরিওয়ালকে ‘কিংপিন’ বলে উল্লেখ করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত তাঁকে তিহাড় জেলে পাঠিয়েছে দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট।ঘটনাচক্রে এই আবগারি দুর্নীতির মামলাতেই সুপ্রিম কোর্টে জামিন পাওয়ার পর বুধবার সন্ধ্যায় তিহাড় থেকে মুক্তি পেয়েছেন আম আদমি পার্টি (আপ) নেতা সঞ্জয় সিং। আপ সমর্থকরা জেলের বাইরে ‘হিরো’র মতো স্বাগত জানান সঞ্জয়কে। আপ নেতার মন্তব্য, ‘আমাদের শীর্ষ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মণীশ সিসোদিয়া এবং সত্যেন্দ্র জৈনকে গরাদের পিছনে রাখা হয়েছে।
আমি নিশ্চিত জেলের তালা ভাঙবেই...’ ২১ মার্চ গ্রেপ্তার হওয়া কেজরিওয়ালের পরিবারের সঙ্গেও এদিন দেখা করেন সঞ্জয়। এদিকে, ‘অবৈধ’ গ্রেপ্তারিকে চ্যালেঞ্জ করে অন্তর্বর্তী জামিনের আর্জি নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কেজরি। এদিন কেজরিওয়ালের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি দাবি করেন, এই গ্রেপ্তারির প্রধান উদ্দেশ্য দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর পার্টি আপ-কে খাটো করা।
লোকসভা ভোট আসন্ন বলে ইচ্ছে করেই আপ-প্রধানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেন সিংভি। তাঁর প্রশ্ন, ‘অরবিন্দ কেজরিওয়াল কি পালিয়ে যাচ্ছিলেন? গত দেড় বছরে তিনি কি মামলার কোনও সাক্ষীকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন? তা হলে তড়িঘড়ি ভোটের আগেই গ্রেপ্তারি কেন?’
জবাবে ইডি-র আইনজীবী, অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু বলেন, ‘আম আদমি কোনও অপরাধ করলে তাঁদের তো জেলেই যেতে হয়, আপনি মুখ্যমন্ত্রী বলে আপনাকে গ্রেপ্তার করা যাবে না? আপনি দেশকে লুট করবেন আর ভোট আসছে বলে কেউ আপনাকে স্পর্শ করতে পারবে না?
একজন জঙ্গির কথা ধরুন, যে ঘটনাচক্রে রাজনীতিকও। সে যদি সেনার একটা গাড়ি বোমা মেরে উড়িয়ে দেয় আর তার পর বলে ভোটে লড়তে চাই, তা হলে কি তাকে ধরা হবে না? এটা কী ধরনের যুক্তি? ভোটের আগে কোনও রাজনীতিক খুন করলে তাঁকে কি গ্রেপ্তার করা হবে না?’ ইডির আরও দাবি, আবগারি দুর্নীতি মামলায় ঘুষের টাকা কোথায় গিয়েছে, তার হদিশ তারা পেয়েছে।
আপের যুক্তি ছিল, সাক্ষী এবং সহ-অভিযুক্তদের অধিকাংশের প্রাথমিক বয়ানে আপের কোনও নেতা-মন্ত্রীর নাম নেই। কিন্তু এঁদের গ্রেপ্তার করে জেরা শুরু করতেই তাঁরা রাজসাক্ষী হয়ে আপের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করছেন। এটা কী ভাবে হয়? এতেই ইডি-র কৌশল স্পষ্ট।
পাল্টা ইডির আইনজীবীর বক্তব্য, ‘অভিযুক্তদের সামনে তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরলে তাঁরা অনেক সময়ই অপরাধ কবুল করে বয়ান বদল করেন। তাঁদের বয়ান মিথ্যে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। ঘুষের টাকায় আপের লাভ হয়েছে, এই প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। সেই ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবেই কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
এর আগের দিন রাউজ় অ্যাভিনিউ কোর্টে ইডি-র আইনজীবী দাবি করেছিলেন, দুর্নীতি প্রশ্নে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে আপ মন্ত্রী আতিশি এবং সৌরভ ভরদ্বাজের নাম করে তাঁদের ফাঁসাতে চাইছেন খোদ কেজরি। পরদিন আতিশি দাবি করেন, ঘনিষ্ঠ সূত্র মারফত তাঁকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল, না হলে ইডি গ্রেপ্তার করবে বলে তাঁকে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়।
এই মন্তব্যের জন্য বুধবার আতিশিকে মানহানির নোটিস পাঠিয়েছে বিজেপির দিল্লি ইউনিট। তাদের দাবি, বিজেপির বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগের জন্য প্রকাশ্যে আতিশিকে ক্ষমা চাইতে হবে। এদিকে, কেজরির গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে ৭ এপ্রিল দেশজুড়ে অনশন কর্মসূচির ডাক দিয়েছে আপ। দলের দিল্লি শাখার কনভেনর গোপাল রাই জানান, ওই দিন দিল্লির যন্তরমন্তরে আপের সব মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ, কাউন্সিলর, কর্মীরা অনশন কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।