এই সময়, কলকাতা ও ভাটপাড়া: লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা মোতায়েন হলো বিজেপির দুই প্রার্থী অর্জুন সিং ও অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্য। বিজেপি সূত্রের খবর, বুধবারই ব্যারাকপুর কেন্দ্রের গেরুয়া প্রার্থী অর্জুনের জন্য জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তমলুকের বিজেপি প্রার্থী তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বরাদ্দ করেছে ওয়াই ক্যাটাগরির নিরাপত্তা।সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন অর্জুন এবং অভিজিৎ। এর মধ্যেই তাঁদের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার প্রয়োজন পড়ল কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিজেপির অন্দরেই। বঙ্গ বিজেপির একাংশের বক্তব্য, দলের বহু প্রবীণ সাংগঠনিক নেতা একাধিকবার অমিত শাহের দপ্তরে নিরাপত্তার জন্য আর্জি জানালেও এখনও দিল্লি থেকে তাঁরা কোনও সবুজ সঙ্কেত পাননি।
অর্জুন ও অভিজিৎ ছাড়াও কোচবিহার জেলার দুই বিজেপি নেতার জন্যও বরাদ্দ হয়েছে এক্স ক্যাটাগরির কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা। তাঁরা হলেন অভিজিৎ বর্মণ ও তাপস দাস। রাজ্য বিজেপির এক পদাধিকারীর কথায়, ‘থ্রেট পারসেপশনের ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় নিরপত্তা বরাদ্দ করা হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।’
তবে এরমধ্যেই নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে অর্জুনের বাড়ির চারপাশ সিসিটিভি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলার অভিযোগ ঘিরে। অর্জুনের অভিযোগ, তাঁর প্রতিটি মুভমেন্টের উপর নজরদারির জন্য রাজ্য পুলিশের তরফ থেকেই এই ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থও হয়েছেন। অর্জুনের এই পদক্ষেপকে অবশ্য কটাক্ষ করেছেন ওই লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক।
তাঁর দাবি, ভোটের আগে হাওয়া গরম করতে চাইছেন বিজেপি প্রার্থী। বুধবার দিনভর ব্যারাকপুর সরগরম ছিল সিসিটিভি বিতর্কে। এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে অর্জুন বলেন, ‘মজদুর ভবনের চারপাশ সিসিটিভি ক্যামেরায় মুড়ে দেওয়া হয়েছে। আমার মুভমেন্ট রেইকি করা হচ্ছে।’
যদিও এই প্রসঙ্গে ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘নতুন করে একটাও সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়নি। সব গুলোই লাগানো হয়েছিল দু’-তিন বছর আগে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কারণেই ক্যামেরাগুলো লাগানো হয়েছিল। এনিয়ে কেউ যদি আদালতে অভিযোগ করেন, আমরা আদালতকে জানাব।’
অর্জুনের অভিযোগ, ‘৮২টি সিসি ক্যামেরা আমার বাড়ির আশপাশে লাগানো হয়েছে। যাঁরাই আমার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন, এমনকী আমার বাড়িতে পুজো করতে আসা পুরোহিতের বিরুদ্ধেও কেস করা হচ্ছে। পুলিশকে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এই কাজ করছে।’
তাঁর আরও দাবি, ‘প্রার্থী ছাড়াও ভারতবর্ষের নাগরিক হিসেবে আমার যে সাংবিধানিক অধিকার আছে, সেটাকেও পুলিশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তাই আমি বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’ যদিও ব্যারাকপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘এই সিসি ক্যামেরাগুলো কবে লাগানো হয়েছিল, সেটা উল্লেখ করুন তিনি।
পুলিশ-প্রশাসন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য অন্যান্য জায়গার মতো এখানেও সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছিল। রাস্তায় সিসি ক্যামেরা লাগানো হলে অর্জুন সিংয়ের সমস্যা হচ্ছে কেন?’ পার্থর দাবি, ‘ওই অঞ্চলে অনেক খুন, ভাঙচুর, রাহাজানি হয়েছে। অনেকে বাড়িছাড়া হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে পুলিশ-প্রশাসন সদর্থক ভূমিকাই নিয়েছে।’
জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যামের দাবী, ২০১৯ সালে ব্যারাকপুরের ওই চত্বরের পরিস্থিতি ভয়াবহ ছিল। তখনই সিসি ক্যামেরাগুলি লাগানো হয়েছিল। সিসি ক্যামেরা লাগানোর ফলেই তৃণমূল নেতা ভিকি যাদবের খুনিদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।